Home বিজ্ঞান আপন আঙিনায় জোনাকির অভয়ারণ্য

আপন আঙিনায় জোনাকির অভয়ারণ্য

তাসনিম তাবাসসুম
৫৫ views

সাগরের তলদেশে অনেক প্রাণী আছে যাদের যারা নিজের শরীরে আলো জ্বালাতে পারে। কিন্তু ভূখণ্ডে এই কাজটি করতে পারে জোনাকি, গ্লোওয়ার্ম, ক্লিক বিটল, কিছু ছত্রাকের মশা। এর মধ্যে আমাদের দেশে সবচেয়ে পরিচিত জোনাকি। 

জোনাকির বাংলায় আরেকটি নাম আছে, ‘তমোমণি’। জৈব রাসায়নিক ব্যবস্থায় নিজের শরীর থেকে আলো উৎপন্ন করে। এই আলো তৈরির বৈশিষ্ট্যকে বায়োলুমিনেসেন্স বা জৈব আলোকধারা বলে।

জোনাকির দেহের পেছন দিকে লাইটের মতো এক অঙ্গাণু আছে। তার ভেতরে থাকে দুই ধরনের রাসায়নিক পদার্থ। লুসিফেরাস ও লুসিফেরিন, লুসিফেরাস আলো উৎপন্ন করে। এই আলো যৌন মিলন ঘটানো বা শিকারের উদ্দেশ্যে জ্বেলে থাকে। লুসিফেরাসের কাজ হচ্ছে জোনাকি পোকার খাদ্য শক্তিকে কাজে লাগিয়ে আলো ও তাপশক্তি উৎপন্ন করা। লুসিফেরিন উৎপন্ন তাপকে ঠান্ডা করে সেগুলোকেও আলোতে পরিণত করে। আবার উৎপন্ন আলোর বিচ্ছুরণ ঘটানো কাজটাও করে লুসিফেরিন।

জোনাকির আলো একটানা জ্বলে না। একবার জ্বলে এবং নেভে কিছুটা সমুদ্রের সিগন্যাল লাইটগুলোর মতো। জোনাকি এভাবে আলো জ্বালিয়ে নিভিয়ে অন্যদের কাছে সিগন্যাল পাঠায়। মানে ভাব বিনিময় করে। প্রজননের জন্যই জোনাকি মূলত আলো জ্বালে।

পুরুষ জোনাকিগুলো উড়তে উড়তে আলো জ্বালে, সিগন্যাল পাঠায় স্ত্রী জোনাকির উদ্দেশ্যে। স্ত্রী জোনাকিরা তখন ঝোপের আগায় কিংবা ঘাসের ওপর বসে থাকে। পুরুষ জোনাকির সিগন্যাল বা সঙ্কেত এসে ধরা পড়ে তাদের মস্তিষ্কে। স্ত্রী জোনাকিরা তখন সেই সঙ্কেতে সাড়া দেয়। সঙ্কেত লক্ষ করে ছুটে যায় পুরুষ জোনাকির কাছে। তারপর তাদের বন্ধুত্ব হয়, পরবর্তীতে মিলন।

প্রত্যেক জোনাকির সঙ্কেতের ধরণ আলাদা আলাদা। স্ত্রী জোনাকির যে সঙ্কেতটা পছন্দ হয়, ঠিক সেই পুরুষটাকে খুঁজে বের করে। পৃথিবীতে নানা প্রজাতির জোনাকি আছে। শুধু মাত্র নিজের প্রজাতির মধ্যেই জোড়া বাঁধে জোনাকিরা। প্রত্যেক জোনাকিই আলোর সঙ্কেতের ধরণ দেখে বুঝতে পারে সেটা তার স্বজাতির না অন্য প্রজাতির। অন্য প্রজাতির আলোর সঙ্কেতে সাড়া দেয় না কোন স্ত্রী বা পুরুষ জোনাকি।

বর্তমানে জোনাকির আনাগোনা অনেক কমে গিয়েছে। গ্রামেও এখন আর আগের মতো জোনাকি দেখা যায় না। জোনাকি পোকা কমে যাওয়ার পেছনে মূল কারণগুলো হলো—বাসস্থান ধ্বংস, রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার, এবং কৃত্রিম আলোর অতিরিক্ততা। শহরায়ন ও কৃষিকাজে পরিবর্তনের ফলে তাদের প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। এছাড়া রাতের কৃত্রিম আলো তাদের স্বাভাবিক সঙ্গী খোঁজার প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করে। জলবায়ু পরিবর্তনও এদের আবাসস্থলের উপর প্রভাব ফেলছে।

রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার এড়িয়ে চললে তা যেমন পরিবেশের জন্য ভালো তেমনি জোনাকির বংশবৃদ্ধির জন্যেও সহায়ক। আঙিনায় স্থানীয় গাছপালা ও ঝোপ লাগান, যেগুলো পোকা ও লার্ভার আশ্রয়স্থল হিসেবে কাজ করে। 

রাতের সময় আঙিনায় কৃত্রিম আলো কম ব্যবহার করুন, কারণ আলো জোনাকির স্বাভাবিক আচরণে ব্যাঘাত ঘটায়। আর্দ্র মাটিও তাদের জন্য উপকারী। এরুপ নির্জন নিস্তব্ধ পরিবেশ তৈরি করতে পারলে আবার মিলবে জোনাকির দেখা। 

সূত্র: এনডাব্লিউএফ

আরও যা পড়তে পারেন

কমেন্ট করুণ