Home সর্বশেষ প্রতিদিন এই প্রসাধনীর ব্যবহারে অজান্তেই শরীরের ক্ষতি করছেন?

প্রতিদিন এই প্রসাধনীর ব্যবহারে অজান্তেই শরীরের ক্ষতি করছেন?

তাসনিম তাবাসসুম
৪৪ views

আমরা প্রতিদিন কোনো না কোনো প্রসাধনী ব্যবহার করি। নিত্য ব্যবহার্য প্রসাধনী আমাদের পরিচ্ছদের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক এক গবেষণা বলছে, এই নিরীহ অভ্যাসগুলোর একটি আমাদের শরীরের প্রাকৃতিক সুরক্ষা ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ করছে। 

দৈনন্দিন জীবনে নিজেকে সতেজ ও আকর্ষণীয় রাখতে অনেকেই পারফিউম ব্যবহার করেন। অফিস, পার্টি কিংবা সামাজিক কোনো অনুষ্ঠানে সুবাসিত থাকার জন্য পারফিউম যেন অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। এই সুগন্ধি দ্রব্যই আমাদের শরীর ও পরিবেশের উপর নীরব এক হুমকি তৈরি করছে।

আমাদের শরীরে ব্যাকটেরিয়া, ঘাম ও রাসায়নিক পদার্থ মিলে দেহের চারপাশে এক ধরনের মাইক্রোবায়াল বা সুরক্ষা বলয় তৈরি করে। এই বলয় আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাসের বাতাসকে প্রাকৃতিকভাবে ফিল্টার করে, ক্ষতিকর কণা আটকে রাখে এবং পরিবেশের সঙ্গে আমাদের এক ধরনের সুরক্ষিত সম্পর্ক গড়ে তোলে।

কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, পারফিউমে থাকা কিছু কৃত্রিম রাসায়নিক উপাদান এই প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা বলয়কে ভেঙে দিতে পারে। ফলে বাতাসের ক্ষতিকর উপাদানগুলো আমাদের শরীরে প্রবেশের সুযোগ পায়।

অনেকেই পারফিউম ব্যবহার করার পর অস্বস্তি, মাথাব্যথা, ত্বকে চুলকানি বা শ্বাসকষ্ট অনুভব করেন। বিশেষ করে যাদের এলার্জি বা অ্যাজমা আছে, তাদের জন্য এটি হতে পারে বিপজ্জনক। পারফিউমের বিভিন্ন উপাদান যেমন অ্যালডিহাইড, ফিথালেটস এবং সিন্থেটিক মস্ক শরীরের ভেতরে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।

এমনকি যারা নিজেরা পারফিউম ব্যবহার করেন না, তারাও আশেপাশের কারও পারফিউমের ঘ্রাণে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন – যাকে বলে ‘প্যাসিভ পারফিউম এক্সপোজার’।

সুগন্ধি কেবল শরীরেই প্রভাব ফেলে না, এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পরিবেশের উপরও পড়ে। পারফিউমে ব্যবহৃত অনেক রাসায়নিক পদার্থ বাতাসে উড়ে গিয়ে ওজোন উৎপন্নকারী যৌগে রূপান্তরিত হয়। এতে করে শহরের বায়ু দূষণের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে।

পারফিউমে ব্যবহৃত কিছু উপাদান যেমন কৃত্রিম মস্ক জলাশয়ে জমা হয়ে মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণীর প্রজনন ব্যবস্থায় সমস্যা তৈরি করতে পারে। এ ছাড়াও, সুগন্ধির কাঁচামাল সংগ্রহের জন্য প্রাকৃতিক বন উজাড়ের ঘটনাও একাধিকবার ঘটেছে।

এই সমস্যাগুলো জেনেও পারফিউম সম্পূর্ণ পরিহার করা কঠিন। তবে কিছু সতর্কতা মেনে চললে ব্যক্তিগত ও পরিবেশগত ক্ষতি অনেকটাই কমানো সম্ভব।

p

ভারী ঘ্রাণযুক্ত পারফিউমের পরিবর্তে হালকা ও অল্প পরিমাণে ব্যবহার করুন, ছবি: ফ্রিপিক

প্রাকৃতিক উপাদানবিশিষ্ট পারফিউম বেছে নিন
যেসব পারফিউমে প্রাকৃতিক তেল বা অর্গানিক উপাদান ব্যবহার করা হয়, সেগুলি শরীরের জন্য তুলনামূলক নিরাপদ।

কম ঘনত্ব ও পরিমিত ব্যবহার করুন
ভারী ঘ্রাণযুক্ত পারফিউমের পরিবর্তে হালকা ও অল্প পরিমাণে ব্যবহার করুন।

উপাদান তালিকা পরীক্ষা করুন
পণ্যের মোড়কে লেখা উপাদান তালিকা দেখে ক্ষতিকর কেমিক্যাল যেমন ‘প্যারাবেন’, ‘প্যাথালেটস’ আছে কিনা যাচাই করুন।

দেহে নয়, পোশাকে স্প্রে করুন
ত্বকের পরিবর্তে পোশাকের উপরে স্প্রে করলে সরাসরি সংস্পর্শ কম হয়।

যেমনটি আমরা খাবারে অর্গানিক উপাদান বেছে নিই, তেমনি সৌন্দর্য পণ্যে কেন নয়? সচেতন সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়েই সম্ভব হবে ব্যক্তিগত সুস্বাস্থ্য ও পরিবেশ সুরক্ষার পথ তৈরি করা।

সূত্র: দ্য নিউইয়র্ক টাইমস

আরও যা পড়তে পারেন

কমেন্ট করুণ