আমরা প্রতিদিন বিভিন্ন ধরনের জেল ব্যবহার করি—যেমন চুলের জেল, খাবারের জেল, আবার আমাদের শরীরেও প্রাকৃতিকভাবে কিছু জেল থাকে। তবে মানুষের চামড়ায় থাকা জেল একটু ভিন্ন। এটি একদিকে যেমন শক্ত, তেমনি নমনীয় এবং কেটে গেলে মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই নিজে থেকে ঠিক হয়ে যায়। মানুষের ত্বকের আদলে তৈরি কৃত্রিম জেলগুলোতে এতদিন এই সমস্ত বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে যে কোনো একটি থাকতো।
কিন্তু এবার ফিনল্যান্ডের আল্টো ইউনিভার্সিটি এবং জার্মানির ইউনিভার্সিটি অফ বায়রিয়ুথ-এর বিজ্ঞানীরা একসঙ্গে একটি বিশেষ ‘হাইড্রোজেল’ বা কৃত্রিম চামড়া তৈরি করেছেন, যা একসঙ্গে শক্তিশালী, নমনীয় এবং নিজে থেকেই ক্ষত ঠিক করতে পারে। এই আবিষ্কার ভবিষ্যতে ক্ষত সারানো, রোবট তৈরি, কৃত্রিম চামড়া তৈরি এবং ওষুধ সরবরাহের মতো ক্ষেত্রে অনেক কাজে আসবে।
কীভাবে তৈরি হলো এই জেল
এই শক্তিশালী এবং ‘সেল্ফ হিলিং’ জেল তৈরি করতে বিজ্ঞানীরা অতি পাতলা মাটির মতো এক ধরনের স্তর (ন্যানোশিট) ব্যবহার করেছেন। এটি জেলের ভেতর অনেক শক্ত জালের মতো কাঠামো তৈরি করে যাতে জেলটি নরম না হয়ে শক্ত থাকে এবং সহজেই নিজের ক্ষত সারাতে পারে।
হাইড্রোজেলের প্রতীকী ছবি , ছবি: পোলারসিল
প্রথমে তারা এক ধরনের গুঁড়ো (মনোমার) পানির সঙ্গে মিশিয়ে তাতে ন্যানোশিট যোগ করেন। তারপর এই মিশ্রণটি একটি ইউভি ল্যাম্পের নিচে রাখা হয়। ইউভি আলো এই ছোট ছোট উপাদানগুলোকে একত্রে শক্ত করে জেলে পরিণত করে।
এই জেলের ভেতরে থাকা ছোট ছোট আঁশ (পলিমার) একে অপরের সঙ্গে সুতার বলের মতো এলোমেলোভাবে জড়িয়ে পড়ে। কেটে যাওয়া স্থানে এই জেল প্রয়োগ করে দেখা গেছে এই আঁশগুলো জড়িয়ে পড়ে এবং নিজে থেকেই ক্ষত সারাতে শুরু করে।
দ্রুত ক্ষত সারানোর ক্ষমতা
এই জেল খুব দ্রুত ক্ষত সারাতে পারে। কেটে যাওয়ার ৪ ঘণ্টার মধ্যে এটি ৮০-৯০% পর্যন্ত ঠিক হয়ে যায় এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পুরোপুরি সেরে ওঠে। মাত্র এক মিলিমিটার পুরু জেলে প্রায় ১০,০০০ স্তর ন্যানোশিট থাকে। ফলে এটি মানুষের চামড়ার মতো শক্তিশালী আবার সহজে টানাও যায়।
বিজ্ঞানী ওল্লি ইক্কালা বলেন, “এই আবিষ্কার দেখায়, কীভাবে প্রকৃতি আমাদের নতুন ও উন্নত উপকরণ তৈরিতে অনুপ্রাণিত করতে পারে। ভাবুন তো, এমন রোবট যাদের নিজের চামড়া নিজেই ঠিক হয় বা এমন চিকিৎসা উপকরণ যা নিজের ক্ষত নিজে সারিয়ে ফেলে।”
এই আবিষ্কার ভবিষ্যতে কৃত্রিম টিস্যু, রোবট এবং আত্ম-নিরাময়কারী চিকিৎসা উপকরণ তৈরি করতে বিপ্লব ঘটাতে পারে।
সূত্র: নেচার ম্যাটেরিয়ালস ও ইন্টারেস্টিং ইঞ্জিনিয়ারিং
