গ্রীষ্মকাল মানেই রোদের তেজ, ঘাম, আর শরীরের পানি শুকিয়ে যাওয়া। এই সময় শরীর ঠান্ডা রাখতে ও পানিশূন্যতা এড়াতে আমাদের দরকার সহজপাচ্য, ঠান্ডা ও পুষ্টিকর খাবার। তাল শাঁস (তালের আঁটি থেকে পাওয়া জেলির মতো স্বচ্ছ অংশ) ঠিক তেমনই একটি প্রাকৃতিক খাবার—যা একদিকে যেমন শরীরকে ঠান্ডা রাখে, তেমনি পুষ্টিগুণে ভরপুর।
তাল শাঁস কী?
তাল গাছের কাঁচা বা আধাপাকা ফলে তিনটি আলাদা আলাদা আঁটি থাকে। প্রতিটি আঁটির ভেতরে থাকে স্বচ্ছ, জেলির মতো নরম অংশ, যেটিই তাল শাঁস নামে পরিচিত। এটি অত্যন্ত কোমল, রসালো এবং হালকা মিষ্টি স্বাদের।
তাল শাঁসের পুষ্টিগুণ
তাল শাঁস নানা পুষ্টি উপাদানে সমৃদ্ধ। ১০০ গ্রাম তাল শাঁসে যে সকল উপাদান থাকে তা হলো:
- জলীয় অংশ: প্রায় ৯৩-৯৫% — শরীর ঠান্ডা রাখতে এবং পানিশূন্যতা প্রতিরোধে উপযোগী।
- শর্করা (কার্বোহাইড্রেট): ৪-৫ গ্রাম — তাৎক্ষণিক শক্তি যোগায়।
- ফাইবার: ১.৫ থেকে ২ গ্রাম।
- খনিজ: পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও আয়রন
- ভিটামিন বি কমপ্লেক্স: বিশেষত B1, B2 ও B3 — কোষের শক্তি উৎপাদন ও নার্ভ সিস্টেমে সহায়ক।
- অ্যান্টি-অক্সিডেন্টস: ফ্ল্যাভোনয়েডস, পলিফেনলস, ভিটামিন সি। এরা ফ্রি র্যাডিকেল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, বার্ধক্য প্রতিরোধে সহায়ক।

তাল শাঁস ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য নিরাপদ এক মিষ্টি বিকল্প, ছবি: হিন্দুস্তান টাইমস
স্বাস্থ্য উপকারিতা
- তাল শাঁস শরীর ঠাণ্ডা রাখতে সাহায্য করে। গ্রীষ্মকালে গরমের কারণে যে হিট স্ট্রোক বা ডিহাইড্রেশনের আশঙ্কা থাকে, তা রোধে এটি অত্যন্ত কার্যকর।
- তাল শাঁসে প্রাকৃতিক চিনির মাত্রা কম এবং গ্লাইসেমিক ইনডেক্সও তুলনামূলকভাবে কম, তাই এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য নিরাপদ এক মিষ্টি বিকল্প।
- এতে থাকা ফোলেট ও অন্যান্য ভিটামিন ভ্রূণের সঠিক বৃদ্ধি ও নারীর শরীর সুস্থ রাখতে সহায়তা করে।
- এর মধ্যে থাকা প্রাকৃতিক ফাইবার অন্ত্রে কাজ করে হজম শক্তি বাড়ায় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য কমায়।
- তাল শাঁসের ঠাণ্ডা প্রকৃতি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান ত্বকের জ্বালা-পোড়া কমাতে ও প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা ফেরাতে সাহায্য করে।
- তাল শাঁস প্রাকৃতিক অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন, যা শরীরের ভেতরের নানা ধরনের প্রদাহ কমাতে সহায়ক।
তাল শাঁস কীভাবে খাবেন?
- কাঁচা তাল থেকে শাঁস তুলে সরাসরি খাওয়া যায়।
- তাল শাঁস দিয়ে ঠাণ্ডা শরবত তৈরি করা যায়।
- দুধ, নারকেল ও তাল শাঁস একত্রে ব্লেন্ড করে সুস্বাদু স্মুদি বানানো যায়।
- ফ্রুট চাট বা ফলের সালাদে মিশিয়েও খাওয়া যায়।
তাল শাঁস শুধু মুখরোচক একটি গ্রীষ্মকালীন খাবার নয়, বরং এটি প্রকৃতির এক অনন্য পুষ্টিসমৃদ্ধ উপহার। গরমে শরীরকে ঠান্ডা রাখতে, পুষ্টির ঘাটতি পূরণে ও হালকা নাস্তা হিসেবে তাল শাঁস হতে পারে আপনার ডায়েটের একটি দারুণ সংযোজন।