জ্যৈষ্ঠ মাসে সূর্য যেন রেগে আগুন! প্রখর তাপে হাঁসফাঁস করছে গোটা দেশ। এই সময় শরীরে জলাভাব, ক্লান্তি, অ্যাসিডিটি কিংবা হিটস্ট্রোকের মতো সমস্যার আশঙ্কা বেড়ে যায়। তাপদাহে সুস্থ থাকতে চাইলে শুধু জল খাওয়া যথেষ্ট নয়, প্রয়োজন ইলেক্ট্রোলাইট, প্রোবায়োটিক এবং হালকা হজমযোগ্য খাবার। এক্ষেত্রে প্রাচীন আয়ুর্বেদিক পানীয় ‘কাঞ্জি’ হতে পারে আপনার গ্রীষ্মকালীন সুস্থতার অন্যতম সঙ্গী।
কী এই ‘কাঞ্জি’?
‘কাঞ্জি’ হল একধরনের প্রাকৃতিক ফারমেন্টেড পানীয়, যা সাধারণত কালো গাজর, বিট, সর্ষে গুঁড়ো, লবণ এবং জল মিশিয়ে কিছুদিন রোদে রেখে তৈরি করা হয়। ফারমেন্টেশন প্রক্রিয়ার ফলে এটি দুধ বা দইয়ের মতোই প্রোবায়োটিকে পরিপূর্ণ হয়। উত্তর ভারতের ঘরোয়া রান্নায় এটি বহু প্রজন্ম ধরে পরিচিত। তবে এখন আবার তা জনপ্রিয় হচ্ছে স্বাস্থ্যসচেতন আধুনিক প্রজন্মের মধ্যে।
‘কাঞ্জি’র উপকারিতা
- ফারমেন্টেশন থেকে তৈরি হওয়ায় এটি প্রাকৃতিক প্রোবায়োটিক উৎস, যা অন্ত্রে ‘গুড ব্যাকটেরিয়া’ বাড়িয়ে হজমে সাহায্য করে।
- এই পানীয় শরীরের অতিরিক্ত তাপ বের করে দেয়। এটি স্বাভাবিক দেহতাপ বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং হিটস্ট্রোকের সম্ভাবনা কমায়।
- গাজর ও বিটে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট শরীরের বিষাক্ত উপাদান বের করে দেয়, লিভার পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে।
- প্রাকৃতিক ফারমেন্টেশন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
- খাদ্য হজমে এই পানীয় বেশ কার্যকর। খাবারের পর এক গ্লাস পান করলে বদহজম বা গ্যাসের সমস্যা দূর করে।

কাঞ্জি প্রাকৃতিক প্রোবায়োটিক উৎস, যা অন্ত্রে ‘গুড ব্যাকটেরিয়া’ বাড়িয়ে হজমে সাহায্য করে, ছবি: স্লার্প
কাঞ্জি তৈরির উপকরণ
- কালো গাজর (না পেলে সাধারণ গাজর ও বিটের মিশ্রণ) – ২ কাপ
- সর্ষে গুঁড়ো – ১ টেবিল চামচ
- লবণ – স্বাদমতো
- জল – ১ লিটার
- সূর্যের আলো – ফারমেন্টেশনের জন্য
পদ্ধতি
- গাজর ও বিট খোসা ছাড়িয়ে লম্বা করে কেটে নিন।
- একটি কাচের বয়ামে গাজর, বিট, সর্ষে গুঁড়ো ও লবণ মিশিয়ে জল ঢালুন।
- ঢেকে রেখে দিন সূর্যের আলোতে ৩–৫ দিন। প্রতিদিন একবার করে নেড়ে দিন।
- গন্ধ ও স্বাদ টক হয়ে এলে বোঝা যাবে কাঞ্জি প্রস্তুত।
- ঠান্ডা করে পরিবেশন করুন।
সচেতনতা
- বেশিদিন সংরক্ষণ না করাই ভালো, কারণ এটি জীবন্ত ব্যাকটেরিয়া সমৃদ্ধ পানীয়।
- যাদের অ্যাসিডিটির সমস্যা বেশি, তারা অল্প পরিমাণে খেয়ে দেখুন।
- শিশুদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শে দিন।
গরমে যখন শরীর হাঁপিয়ে ওঠে, তখন কাঞ্জির মতো প্রাকৃতিক পানীয় হতে পারে চমৎকার বিকল্প। এটি শুধু স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী নয়, বরং প্রাচীন ভারতীয় খাদ্যজ্ঞান ও সংস্কৃতির এক জীবন্ত নিদর্শন। রঙে যেমন আকর্ষণীয়, স্বাদেও তেমনি টক-মিষ্টি রসালো — একবার খেলে বারবার খেতে ইচ্ছে করবে।