বলিউডের বাদশাহ, কিং খান, রোম্যান্সের রাজা—শাহরুখ খানের নানা উপাধি। কিন্তু বয়স যেন তার জন্য কেবল একটি সংখ্যা। শাহরুখের বয়স এখন ৫৯ বছর। তবুও তার ছিপছিপে চেহারা, ঝলমলে চুল, মসৃণ ত্বক, মুভিতে তার অ্যাকশন স্টান্ট—সবই যেন বলে দেয়, সময় তার শরীরে ছাপ ফেলতে পারেনি। কিভাবে সম্ভব এমন ফিটনেস ধরে রাখা? তার পেছনে আছে কঠোর অনুশীলন, খাদ্যাভ্যাস, এবং আত্মনিয়ন্ত্রণের এক অসামান্য যাত্রা।
নিয়মিত ওয়ার্কআউট এবং অধ্যাবসায়
শাহরুখ খানের দিনের শুরু হয় জিমে। তার ব্যক্তিগত ট্রেনার প্রশান্ত সাওয়ান্তের নির্দেশনায় তিনি দীর্ঘদিন ধরে ওয়ার্কআউট করে আসছেন। বয়স বাড়লেও তার ফিটনেস রুটিনে কোনো ঢিলেঢালা ভাব নেই। সপ্তাহে ৫-৬ দিন তিনি স্ট্রেন্থ ট্রেনিং, কোর ওয়ার্ক, ফাংশনাল ট্রেনিং এবং কার্ডিও করেন।

‘পাঠান’ ও ‘জওয়ান’ সিনেমার সময় শাহরুখ পেশিবহুল শরীর নিয়ে সকলেই অবাক হয়েছিলেন, ছবি: ইন্ডিয়া কারেন্টস
বিশেষ করে ‘পাঠান’ ও ‘জওয়ান’ সিনেমার সময় তার পেশিবহুল শরীর নিয়ে সকলেই অবাক হয়েছিলেন। শাহরুখ নিজেই এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “আমি জানি না এটা কতদিন চলবে, কিন্তু আমি চেষ্টা করছি নিজের সেরা ভার্সনটা তুলে ধরতে।”
খাদ্যাভ্যাসে কঠোর নিয়ন্ত্রণ
শাহরুখ খান ক্যারিয়ারের শুরুতে কখনোই খাবারের ব্যাপারে সচেতন ছিলেন না । কিন্তু বয়সের সঙ্গে সঙ্গে তিনি বুঝেছেন যে ফিট থাকতে হলে খাবারে পরিবর্তন আনতেই হবে। এখন তার ডায়েট পরিকল্পনা একেবারে নিয়ন্ত্রিত। শাহরুখ প্রতিদিন দুইবেলা প্রায় একই খাবার খান। হাই প্রোটিন খাবার—যেমন, গ্রিলড চিকেন, ব্রোকলি, স্প্রাউট, মাঝেমধ্যে এক বাটি ডাল।

দুইবেলার বাইরে শাহরুখ কোন নাস্তাও করেন না, ছবি: টিভি নাইন বাংলা
এই দুইবেলার বাইরে কখনো হালকা নাস্তা করেন না। তবে কোথাও ঘুরতে গেলে বা দাওয়াতে গেলে এই রুটিনের ব্যাপারে নমনীয় হন। তখন তাঁকে যা খেতে দেওয়া হয়, তাই খান। সেটা ঘিয়ে ভাঁজা পরোটা থেকে শুরু করে মাংসে ভরপুর বিরিয়ানি বা ঘন লাচ্ছি- কোনকিছুই মিস করেন না।
মানসিক ফিটনেসও সমান গুরুত্বপূর্ণ
শুধু শরীর নয়, মনেরও চাই ফিটনেস। শাহরুখ খান নিয়মিত মেডিটেশন করেন না ঠিকই, কিন্তু নিজের সময়টাকে গুরুত্ব দেন। বই পড়া, স্ক্রিপ্ট নিয়ে গবেষণা, পরিবার ও সন্তানদের সময় দেওয়া—এসবই তাকে মানসিকভাবে ফ্রেশ রাখে। তিনি বলেন, “আমি যেটা ভালোবাসি, সেটা করি। আর সেটাই আমাকে ফিট রাখে।”

ঘুমের ব্যাপারে শাহরুখ বেশ কঠোর রুটিন মেনে চলেন, ছবি: মেন এক্সপি
ঘুম ও বিশ্রামের গুরুত্ব
ব্যস্ততা সত্ত্বেও তিনি ঘুম ও বিশ্রামকে গুরুত্ব দেন। যত রাতে ঘুমান না কেন সেটা অন্তত টানা ৫ ঘণ্টা হতে হবে। এটি তাঁর রুটিনে একদম বাধ্যতামূলক। তিনি বলেন, “ঘুম না হলে শরীর ক্লান্ত হয়, মেজাজ খারাপ হয়। আর এই বয়সে বিশ্রাম ছাড়া শরীর ঠিক রাখা অসম্ভব।”
অনুপ্রেরণা অন্যদের জন্য
শাহরুখ খান প্রমাণ করেছেন বয়স ফিটনেসের জন্য কোনো বাধা নয়। অনুশাসন, অধ্যাবসায় আর ভালোবাসা থাকলে বয়সকে হার মানানো সম্ভব। আজকের দিনে যখন তরুণরাও লাইফস্টাইল ডিজঅর্ডারে ভোগে, তখন শাহরুখ খান হয়ে উঠেছেন এক জীবন্ত অনুপ্রেরণা।