বাংলার গ্রীষ্ম মানেই খরতাপ, ধুলোবালি আর অসহ্য অস্বস্তি। শুধু মানুষ নয়, গরমের তাপদাহে কষ্ট পায় আমাদের প্রিয় পোষ্য বন্ধুরাও—হোক সে কুকুর, বিড়াল বা অন্য কোনো প্রাণী। তাই এই সময়টায় তাদের যত্নে একটু বাড়তি মনোযোগ দেওয়া জরুরি। চলুন দেখে নিই গরমকালে প্রিয় পোষ্যের যত্নে কী কী করণীয়:
সঠিক পানি ও হাইড্রেশন
গরমে পোষ্যরা দ্রুত পানিশূন্যতায় ভোগে। এজন্য সবসময় যেন পরিষ্কার, ঠাণ্ডা পানি তাদের কাছে থাকে তা নিশ্চিত করুন। দিনে কয়েকবার পানি বদলে দিন। চাইলে পানিতে এক চিমটে গ্লুকোজ মিশিয়ে দিতে পারেন এবং সেটি অবশ্য পশুচিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী।
রোদে বাইরে যাওয়া কমান
সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত রোদের তীব্রতা সবচেয়ে বেশি। এই সময় পোষ্যদের বাইরে নিয়ে যাওয়া এড়িয়ে চলুন। হাঁটাতে হলে ভোর বা সন্ধ্যার দিকে নিয়ে যান। গরমে হাঁটার সময় পিচ রাস্তায় তাদের পায়ের তালু যেন না পোড়ে, সেদিকে খেয়াল রাখুন।
হালকা খাবার ও ডায়েট
গ্রীষ্মে ভারী খাবার হজমে সমস্যা হতে পারে। তাই প্রিয় পৌষ্যদের ডায়েটে রাখুন হালকা, সহজপাচ্য খাবার দিন। কিছু কিছু ফল, যেমন তরমুজ বা শসা (বিড়ালের ক্ষেত্রে সাবধানে), পোষ্যদের প্রশান্তি দিতে পারে। ডায়েট পরিবর্তনের আগে অবশ্যই ভেটের পরামর্শ নিতে হবে।
ঠাণ্ডা পরিবেশ নিশ্চিত করুন
ঘর যেন বাতাস চলাচলযোগ্য হয়, দরকার হলে ফ্যান বা এয়ার কুলার ব্যবহার করুন। কখনোই গরম গাড়িতে পোষ্যকে একা রেখে যাবেন না। ছায়াযুক্ত জায়গায় বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ দিন।

হিট স্ট্রোক এড়াতে গরমে পৌষ্যদের ঘরের বাইরে নিয়ে যাওয়া থেকে বিরত থাকুন, ছবি: ওয়ান পয়েন্ট মেডিকেল
গোসল ও পরিচ্ছন্নতা
ঘন ঘন গোসল না করেও স্যাঁতসেঁতে তোয়ালে দিয়ে শরীর মুছে দিতে পারেন। বিশেষ করে কুকুরদের ত্বকে সংক্রমণ এড়াতে ভেজা শরীর বেশিক্ষণ রাখা উচিত নয়। পোষ্যের পশম খুব ঘন হলে পশুচিকিৎসকের পরামর্শে হালকা ট্রিমিং করাতে পারেন।
হিট স্ট্রোকের লক্ষণ জানুন
মানুষের মতো অন্য প্রাণীদেরও হিট স্ট্রোক হতে পারে। এটি প্রাণঘাতী অবস্থায়ও পৌঁছাতে পারে। লক্ষণগুলো:
- হাঁপানি বা অতিরিক্ত হা করা
- অস্বাভাবিক দুর্বলতা
- বমি বা খিঁচুনি
- চামড়ার রঙ লালচে হয়ে যাওয়া
এমন লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত ঠাণ্ডা জায়গায় সরিয়ে নিন এবং পশুচিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
ভ্যাকসিন ও নিয়মিত চেকআপ
গরমে সংক্রমণ বা পোকামাকড়ের উপদ্রব বাড়ে। সময়মতো ভ্যাকসিন ও ডিওয়ারমিং করান। ফ্লি ও টিক নিয়ন্ত্রণে ভেটের সঙ্গে পরামর্শ করে স্প্রে বা পাউডার ব্যবহার করুন।
গ্রীষ্মকালের দাবদাহে আপনার পোষ্য যেন অস্বস্তিতে না পড়ে, সে জন্য প্রয়োজন একটু যত্ন, একটু সতর্কতা আর অসীম ভালোবাসা। তাদের ভাষা নেই—কিন্তু অনুভূতি আছে। আর আমাদের দায়িত্ব, সেই অনুভূতির ভাষা বুঝে তাদের পাশে থাকা।