Home লাইফস্টাইল যেভাবে এলো মা দিবস

যেভাবে এলো মা দিবস

ফাহমিদা শিকদার
৪৭ views

প্রতিটি সন্তানের জীবনে “মা” শব্দটির এক অপার আবেগ ও মূল্য রয়েছে। মায়ের নিঃস্বার্থ ভালোবাসা, আত্মত্যাগ আর আশীর্বাদকে স্মরণ করতেই বিশ্বের নানা প্রান্তে পালিত হয় মা দিবস। তবে কবে, কিভাবে এই দিবসটি উদযাপনের সূচনা হয়, আর কেনই বা এটি রবিবারেই পালন করা হয়—সে সম্পর্কে অনেকেরই জানা নেই। চলুন, জানা যাক মা দিবসের পেছনের ইতিহাস ও তাৎপর্য।

মা দিবসের সূচনা ও ইতিহাস

মা দিবস পালনের ধারণা নতুন কিছু নয়। প্রাচীন গ্রিস ও রোম সভ্যতায় দেবী মায়ের (Mother Goddess) উপাসনাকে ঘিরে নানা উৎসব পালিত হতো। রোমানরা “Cybele” নামক মাতৃদেবীর পূজা করতেন, আর গ্রিকরা “Rhea” নামে এক দেবীকে সম্মান জানাতেন। তবে আধুনিক মা দিবসের সূচনা হয়েছে আমেরিকায়।

এই আধুনিক রূপের সূচনা হয় আমেরিকার এক নারী, আনা জার্ভিসের মাধ্যমে। ১৯০৭ সালের ১২ই মে তিনি তাঁর মায়ের স্মরণে একটি ছোট অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। আনার মা, আনা রিভস জার্ভিস, নারীদের নিয়ে সামাজিক উদ্যোগে যুক্ত ছিলেন—বিশেষ করে বন্ধুত্ব, স্বাস্থ্য সচেতনতা এবং মায়েদের সহায়তা নিয়ে কাজ করতেন। তিনি বিশ্বাস করতেন, সন্তান মানুষ করার পরিশ্রম ও ত্যাগের বিষয়টি সমাজের সামনে তুলে ধরা জরুরি।

ann anna jarvis 1024x805 1

আনা রিভস জার্ভিস ও আনা জার্ভিস, ছবি: হিস্টোরি অব আমেরিকান ওমেন

আনা রিভস জার্ভিস ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার গ্র্যাফটনে গঠন করেছিলেন “মাদার’স ডে ওয়ার্ক ক্লাব”, যার মূল উদ্দেশ্য ছিল শিশু মৃত্যুহার হ্রাস করা। কারণ, তিনি নিজেও নিজের নয়টি সন্তানকে হারানোর কষ্ট পেরিয়েছেন।

আনা রিভস জার্ভিস ১৯০৫ সালের ৯ই মে মারা যান। তার মৃত্যুর দুই বছর পর, আনা জার্ভিস তাঁর মায়ের স্মরণে সেই সময়ের কাছাকাছি একটি রবিবার, ১২ই মে, বেছে নেন ছোট্ট এক স্মরণানুষ্ঠানের জন্য। অনুষ্ঠানটি হয়েছিল সেই চার্চে, যেখানে তাঁর মা নিয়মিত যেতেন।

পরবর্তী পাঁচ বছরের মধ্যে, মা দিবস সারা যুক্তরাষ্ট্রে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এবং বিভিন্ন রাজ্যে উদযাপিত হতে থাকে। অবশেষে, ১৯১৪ সালে প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন মা দিবসকে একটি জাতীয় ছুটির দিন হিসেবে স্বীকৃতি দেন।

কেন রবিবারেই মা দিবস পালিত হয়?

রবিবার বেছে নেওয়ার পেছনে ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক কিছু কারণ রয়েছে। আমেরিকায় রবিবার সাধারণত “গির্জা যাওয়ার দিন”, “পরিবারের দিন” হিসেবে পরিচিত। আনা জার্ভিস নিজেও ধর্মপ্রাণ খ্রিস্টান ছিলেন, এবং তিনি চেয়েছিলেন মা দিবস যেন শুধু বাণিজ্যিক না হয়ে পারিবারিক ও আত্মিক একটি উপলক্ষ হয়ে ওঠে। রবিবার হওয়ায় পরিবারের সবাই একত্রিত হতে পারে, মা-কে সম্মান জানানোর সুযোগও বেশি থাকে।

এছাড়াও, দ্বিতীয় রবিবার বেছে নেওয়া হয়েছিল যাতে মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে দিবসটি পড়ে—যা বসন্তের প্রাণবন্ত সময়, নতুন জীবনের প্রতীক, আর তাই মা’কে ঘিরে উদযাপনের জন্য এক উপযুক্ত সময়।

মা দিবস কেবল একটি নির্দিষ্ট দিনে ফুল বা উপহার দেওয়ার বিষয় নয়—এটি মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা, কৃতজ্ঞতা আর ভালোবাসা প্রকাশের একটি উপলক্ষ। যদিও একটি দিন যথেষ্ট নয়, তবুও এই দিবস আমাদের মনে করিয়ে দেয় মায়ের অবদান, যা প্রতিদিনই স্মরণীয় ও অনন্য।

আরও যা পড়তে পারেন

কমেন্ট করুণ