নিজের অর্জনকে ছোট করে দেখা, সাফল্যকে “ভাগ্য” বা “অন্যের সহায়তা” বলেই মনে করা—এই অনুভূতিগুলোর পেছনে যে মানসিক ব্যাধিটি কাজ করে, তা হলো ইমপোস্টার সিনড্রোম। নামটি শুনতে নতুন মনে হলেও, এ অভিজ্ঞতা বহু মানুষ নীরবে বহন করে চলেছেন প্রতিদিন।
ইমপোস্টার সিনড্রোমে আক্রান্ত ব্যক্তিরা মনে করেন, তারা সফল হলেও সেটি তাদের যোগ্যতার ফল নয়; বরং এটি একটা “ভুল বোঝাবুঝি”। মনে হয়, আশেপাশের সবাই যদি একদিন “তাদের আসল রূপ” জেনে ফেলে, তাহলে তারা ধরা পড়ে যাবেন—যেন তারা এক “ভুয়া”। এই অনুভূতি কর্মজীবী পেশাজীবী, শিক্ষার্থী, এমনকি সৃজনশীল শিল্পী সকলের মধ্যেই দেখা যায়।
এই মানসিক অবস্থার সবচেয়ে ভয়াবহ দিক হলো, এটি আত্মবিশ্বাস ধ্বংস করে দেয়। একজন মেধাবী মানুষও ক্রমাগত নিজের দক্ষতা নিয়ে সন্দেহ করতে থাকেন। নতুন সুযোগ এলে তিনি পেছনে সরে যান, ভয় পান ব্যর্থতা বা “প্রকাশ হয়ে যাওয়ার” আশঙ্কায়। এমনকি সফলতা এলেও আনন্দ পান না; বরং উদ্বিগ্ন থাকেন, কবে সবাই বুঝে যাবে তিনি আদতে “এতটা ভাল” নন।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নারীরা ইমপোস্টার সিনড্রোমের ঝুঁকিতে বেশি থাকে, ছবি: ইউসিএলএ হেলথ
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই সিনড্রোম সাধারণত পারিবারিক বা সামাজিক চাপে বেড়ে ওঠা, অতিরিক্ত প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ, বা নিখুঁত হবার তাগিদ থেকে জন্ম নেয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নারীরা, সমাজের সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর মানুষ, বা নতুন পেশাজীবীরা এর ঝুঁকিতে বেশি থাকেন।
এই ব্যাধি নিরাময়যোগ্য। প্রথম পদক্ষেপ হলো—এটি সম্পর্কে সচেতন হওয়া এবং নিজের অনুভূতিগুলোকে চিহ্নিত করা। আত্মসমালোচনার বদলে নিজের অর্জনগুলোকে স্বীকৃতি দেওয়া, নিজেকে সময় দেওয়া শেখার ও উন্নতির, এবং প্রয়োজনে কাউন্সেলরের সহায়তা নেওয়া—এইগুলো হতে পারে কার্যকর পথ।
আমরা সবাই কোনো না কোনো সময় নিজের প্রতি সংশয়ে ভুগি। কিন্তু ইমপোস্টার সিনড্রোমকে যদি চিহ্নিত করে মোকাবেলা করা যায়, তবে আত্মবিশ্বাস ফিরে পাওয়া যায়, এবং জীবনকে আরও ইতিবাচকভাবে উপভোগ করা সম্ভব।