Home লাইফস্টাইল সপ্তাহে চার দিনের অফিস কি স্বাস্থ্যকর ভবিষ্যতের পথ?

সপ্তাহে চার দিনের অফিস কি স্বাস্থ্যকর ভবিষ্যতের পথ?

ফাহমিদা শিকদার
৫৬ views

বছরের পর বছর ধরে ‘ ৯টা- ৬টা’ কাজের সময়কে আদর্শ ধরা হলেও আধুনিক গবেষণা ও বাস্তব অভিজ্ঞতা দেখাচ্ছে—এটাই কর্মদক্ষতা কিংবা কর্মীর সুস্বাস্থ্যের একমাত্র পথ নয়। বিশেষ করে করোনার পরের যুগে অফিস সংস্কৃতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। এখন অনেক দেশ ও কোম্পানি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখছে—সপ্তাহে চার দিন কাজ করে তিন দিন ছুটি রাখলে কী হয়? আশ্চর্যের বিষয়, ফলাফলগুলো বেশ ইতিবাচক।

স্বাস্থ্যকর কর্মঘণ্টা: কতটা হওয়া উচিত?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (ILO) এক যৌথ গবেষণায় জানায়, সপ্তাহে ৫৫ ঘণ্টার বেশি কাজ করলে হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যায়। অপরদিকে, কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, সপ্তাহে ৩০-৩৫ ঘণ্টা কাজ করলে কর্মীরা বেশি মনোযোগী থাকেন, মানসিক চাপ কম থাকে, এবং দীর্ঘমেয়াদে কর্মজীবন টেকসই হয়।

চার দিনের অফিস সপ্তাহ: কোন কোন দেশে?

  • আইসল্যান্ড: ২০১৫ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে আইসল্যান্ডে সপ্তাহে ৪ দিন কাজের একটি বড় পাইলট প্রকল্প চালানো হয়। কর্মীদের প্রোডাক্টিভিটি বেড়েছে, আর মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য উন্নত হয়েছে। এখন দেশটির প্রায় ৮০% কর্মী কোনো না কোনোভাবে নমনীয় সময়সীমার আওতায় কাজ করেন।
  • জাপান: মাইক্রোসফট জাপান ২০১৯ সালে তাদের অফিসে চার দিনের কাজের সপ্তাহ চালু করে। ফলাফল ছিল চমকপ্রদ—৪০% পর্যন্ত প্রোডাক্টিভিটি বৃদ্ধি পেয়েছে।
  • যুক্তরাজ্য: ২০২২ সালে যুক্তরাজ্যে বিশ্বের বৃহত্তম ‘৪-ডে ওয়ার্ক উইক’ ট্রায়াল হয়, যেখানে ৬১টি কোম্পানি অংশ নেয়। ৯২% কোম্পানি বলেছে, তারা এই ব্যবস্থা চালিয়ে যেতে চায়। কর্মীদের স্ট্রেস কমেছে, ঘুমের মান বেড়েছে, এবং কাজ থেকে সন্তুষ্টি বেড়েছে।
  • নিউজিল্যান্ড: ‘Perpetual Guardian’ নামক একটি কোম্পানি ২০১৮ সালে চার দিনের সপ্তাহ চালু করে। পরবর্তী গবেষণায় দেখা গেছে, কর্মীদের স্ট্রেস ৭ শতাংশ কমেছে এবং কাজের ব্যালেন্স উন্নত হয়েছে।

কেন এই পরিবর্তন?
চার দিনের সপ্তাহ চালুর পেছনে রয়েছে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ যুক্তি:

  • মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি: দীর্ঘ সময় কাজের চাপে অনেকেই হতাশা ও উদ্বেগে ভোগেন। কম সময় কাজ করলে কর্মীরা মানসিকভাবে সুস্থ থাকেন।
  • উৎপাদনশীলতা বাড়ে: কম সময়ে বেশি মনোযোগ দিয়ে কাজ করলে কাজের মান ও গতি দুই-ই বাড়ে।
  • পরিবার ও ব্যক্তিগত জীবনের ভারসাম্য: বাড়তি এক দিন ছুটির সুযোগ কর্মীদের পরিবার, শখ ও বিশ্রামের জন্য সময় দেয়।
  • পরিবেশবান্ধব: কম অফিস মানে কম যাতায়াত, কম বিদ্যুৎ ব্যবহার—ফলে কার্বন ফুটপ্রিন্ট হ্রাস পায়।

কোন ক্ষেত্রগুলোতে এটি কার্যকর?
সব ক্ষেত্রে একরকম প্রয়োগ সম্ভব নয়। নির্মাণ বা স্বাস্থ্যসেবার মতো ক্ষেত্রে কর্মীদের চব্বিশ ঘণ্টা উপস্থিতি দরকার। কিন্তু প্রযুক্তি, বিপণন, শিক্ষণ বা প্রশাসনিক ক্ষেত্রে চার দিনের অফিস যথেষ্ট কার্যকর।

বাংলাদেশ প্রসঙ্গে
বাংলাদেশে সপ্তাহে সাধারণত ৫ দিন অফিস (সরকারি ক্ষেত্রে)। তবে অতিরিক্ত সময় কাজ করার প্রবণতা রয়েছে, যার প্রভাব পড়ে স্বাস্থ্যে ও পারিবারিক জীবনে। পরীক্ষামূলকভাবে প্রযুক্তি খাতে কিংবা স্টার্টআপ পর্যায়ে চার দিনের অফিস মডেল চালু করে দেখা যেতে পারে।

সপ্তাহে চার দিনের অফিস শুধু একটি কর্মপরিকল্পনা নয়—এটি একটি জীবনদর্শন। যেখানে ‘বেশি কাজ’ নয়, বরং ‘স্মার্ট কাজ’ এবং ‘মানবিক সময় ব্যবস্থাপনা’ গুরুত্ব পায়। স্বাস্থ্যকর কর্মঘণ্টার ধারণা বাস্তবায়ন করলে কর্মী শুধু ভালো কাজই করবেন না, বরং দীর্ঘমেয়াদে ভালো মানুষও থাকবেন।

আরও যা পড়তে পারেন

কমেন্ট করুণ