শিশুদের প্রথম স্কুলজীবন শুরু করা তাদের মানসিক ও সামাজিক বিকাশের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। তবে, কোন বয়সে শিশুদের স্কুলে ভর্তি করানো উচিত—এ প্রশ্নের উত্তর নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই গবেষণা চলছে। সাম্প্রতিক আন্তর্জাতিক গবেষণা ও বিশেষজ্ঞ মতামত বলছে, ৬ বছর বয়স হলো শিশুর স্কুলে প্রবেশের সবচেয়ে উপযোগী সময়।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শিশুর মস্তিষ্কের দ্রুত বিকাশ হয় তিন থেকে পাঁচ বছর বয়সের মধ্যে। এ সময়ে ভাষাগত দক্ষতা, সামাজিক আচরণ ও মৌলিক জ্ঞান অর্জনের ক্ষমতা সর্বোচ্চ থাকে। তবে এই সময়েই স্কুলে ভর্তি নিয়ে তাড়াহুড়া করা ঠিক নয়। ৬ বছরের আগেই আনুষ্ঠানিক পড়াশোনায় ঢুকে গেলে শিশুরা মানসিক চাপের মুখে পড়তে পারে, যা তাদের স্বাভাবিক সৃজনশীলতা ও আনন্দের চেতনায় বাধা সৃষ্টি করে।
শিশুদের কখন স্কুলে ভর্তি করানো উচিত—এই প্রশ্ন নিয়ে বিশ্বজুড়ে বহু গবেষণা হয়েছে। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গুরুত্বপূর্ণ গবেষণায় উঠে এসেছে যে শিশুদের স্কুলে ভর্তি করানোর আদর্শ বয়স ৬ বছর, বিশেষ করে মানসিক ও আবেগগত বিকাশের দিক থেকে এটি অধিক উপকারী।
যারা অপেক্ষাকৃত দেরিতে—অর্থাৎ ৬ বছর বয়সে—স্কুলে ভর্তি হয়, তাদের আত্মনিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি হয়, ছবি: ফার্স্ট ডিসকভারস
গবেষণায় দেখা গেছে, যারা অপেক্ষাকৃত দেরিতে—অর্থাৎ ৬ বছর বয়সে—স্কুলে ভর্তি হয়, তাদের আত্মনিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি হয়। স্ট্যানফোর্ডের গবেষকরা ডেনমার্কের ৫৪,২৪১ জন শিশুর উপর বিশ্লেষণ চালিয়ে দেখেন, ৬ বছর বয়সে ভর্তি হওয়া শিশুরা ৭ থেকে ১১ বছর বয়সের মধ্যে অন্যদের তুলনায় বেশি মনোযোগী, ধৈর্যশীল এবং আবেগ নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হয়। এই দক্ষতাগুলো পরবর্তী শিক্ষাজীবন ও সামাজিক উন্নয়নে একান্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
স্ট্যানফোর্ডের অধ্যাপক থমাস ডি এবং তার সহকর্মীরা বলেন, শিশুরা যদি আরও এক বছর খেলা, অনানুষ্ঠানিক শেখা ও সামাজিক মেলামেশায় ব্যয় করে, তাহলে তাদের মানসিকভাবে প্রস্তুতি আরও দৃঢ় হয়। ফলে, তারা স্কুলের কাঠামোগত পড়াশোনার চাপকে সহজভাবে গ্রহণ করতে পারে এবং পড়াশোনার প্রতি ইতিবাচক মনোভাব গড়ে ওঠে।
এই গবেষণা আরও জানায়, দেরিতে ভর্তি হওয়ার কারণে শিশুরা পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়ে না, বরং তাদের মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকে এবং একাডেমিকভাবে তারা দীর্ঘমেয়াদে ভালো করে। তাই শিশুর ভবিষ্যতের কথা ভেবে, শুধু বইয়ের পাতার দৌড়ে নামিয়ে দেওয়া নয়, বরং তাদের আবেগগত শক্তি গড়ে তোলার সময় ও সুযোগ দেওয়াই অধিক ফলপ্রসূ হতে পারে।
