আমরা অনেকেই ঘরকে সুরভিত রাখতে এয়ার ফ্রেশনার ব্যবহার করি। সুগন্ধি স্প্রে, অ্যারোসল, জেল কিংবা অয়েল—সবকিছুতেই থাকে মনমাতানো ঘ্রাণ। কিন্তু জানেন কি, এগুলোর পেছনে লুকিয়ে আছে নানা স্বাস্থ্যঝুঁকি? বিশেষ করে শিশু, বয়স্ক ও অ্যালার্জি-প্রবণ ব্যক্তিদের জন্য এয়ার ফ্রেশনার একেবারেই নিরাপদ নয়।
এয়ার ফ্রেশনারে থাকা রাসায়নিক উপাদান যেমন থ্যালেট, ভোলাটাইল অর্গানিক কম্পাউন্ডস (VOC), ফরম্যালডিহাইড ইত্যাদি আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত ব্যবহারে হতে পারে— শ্বাসকষ্ট বা অ্যাজমা, মাথাব্যথা, চোখে জ্বালা। এয়ার ফ্রেশনারে থাকা থ্যালেট এক ধরনের এন্ডোক্রাইন ডিসরাপ্টার কেমিক্যাল। অর্থাৎ এই ধরনের কেমিক্যাল হরমোনের ভারসাম্যহীনতা তৈরি করে। পাশাপাশি ক্ষতিকর রাসায়নিক দীর্ঘমেয়াদে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়।
ভালো খবর হলো, কিছু সহজ উপায়েই আপনি ঘরকে রাখতে পারেন সতেজ ও সুরভিত—এয়ার ফ্রেশনার ছাড়াই।
ঘর প্রাকৃতিকভাবে সুবাসিত রাখার উপায়
- প্রতিদিন অন্তত আধা ঘণ্টা জানালা খুলে রাখুন। এর বেশি হলে আরও ভালো। এতে দূষিত গ্যাস ও গন্ধ দূর হবে, প্রবেশ করবে বিশুদ্ধ বাতাস।
- একটি বাটিতে লেবুর রস, সাদা ভিনেগার ও পানি মিশিয়ে রাখুন। এতে ঘরের গন্ধ শোষণ হয় এবং সতেজ ঘ্রাণ ছড়ায়।
- ঘরে সেন্টেড ক্যান্ডেল বা সুগন্ধিযুক্ত মোম জ্বালিয়ে রাখতে পারেন।
- শুকনো ফুল, দারচিনি, লবঙ্গ, লেবুর খোসা এবং কয়েক ফোঁটা এসেনশিয়াল অয়েল দিয়ে তৈরি করুন প্রাকৃতিক পটপুরি। কাচের বাটিতে সাজিয়ে রাখুন—ঘর হবে সুগন্ধে ভরপুর।
- ল্যাভেন্ডার, জেসমিন, মিন্ট বা ইংলিশ আইভির মতো ইনডোর প্ল্যান্টস প্রাকৃতিকভাবে ঘরের বাতাস বিশুদ্ধ করে এবং মৃদু সুবাস ছড়ায়। এছাড়া বারান্দায় গোলাপ, বেলির মতো সুগন্ধি ফুল গাছ লাগাতে পারেন।
- বেকিং সোডা ও লেবু দিয়ে ঘর পরিষ্কার করুন। বাথরুম ও রান্নাঘরে এটি দারুণ কাজ করে। বেকিং সোডা দুর্গন্ধ শুষে নেয়।
- একটি স্প্রে বোতলে পানি ও কয়েক ফোঁটা ল্যাভেন্ডার, ইউক্যালিপটাস বা লেমনগ্রাস অয়েল মিশিয়ে নিন। প্রয়োজনে ঘরে স্প্রে করুন।
ঘর সুবাসিত রাখতে আরও যা খেয়াল রাখবেন
- রান্নার পর রান্নাঘর ভালোভাবে পরিষ্কার করুন
- জুতা, আবর্জনার ডাস্টবিন নিয়মিত পরিষ্কার করুন
- শোবার ঘরে বালিশ ও চাদর নিয়মিত ধুয়ে নিন
- ফ্রিজ বা কেবিনেটে শুকনো লবঙ্গ বা লেবুর খোসা রাখুন
আজকের আধুনিক জীবনে স্বাচ্ছন্দ্যের পাশাপাশি প্রয়োজন সচেতনতারও। সুগন্ধি মানেই এয়ার ফ্রেশনার হতে হবে—এই ধারণা থেকে বেরিয়ে আসুন। প্রকৃতির সৌন্দর্য ও সুবাস দিয়ে ঘর সাজান, আর নিজেকেও রাখুন নিরাপদ।
