Home লাইফস্টাইল হজমের সমস্যায় লাবণ্য হারায় ত্বক

হজমের সমস্যায় লাবণ্য হারায় ত্বক

ফাহমিদা শিকদার
৬৯ views

মানুষের শরীরের প্রতিটি অঙ্গ একে অপরের সঙ্গে গভীরভাবে সংযুক্ত। পেটের স্বাস্থ্য ও ত্বকের সুস্থতার মধ্যেও রয়েছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। অনেক সময় মুখে ব্রণ, র‍্যাশসহ অন্যান্য ত্বকের সমস্যার জন্য বাহ্যিক কারণকে দায়ী করা হয়, কিন্তু আসল সমস্যা লুকিয়ে থাকতে পারে হজম ও অন্ত্রের স্বাস্থ্যে। সুস্বাস্থ্যের বৈশ্বিক ট্রেন্ডে অনেক বছর ধরে পেটের স্বাস্থ্যকে বেশ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে ত্বকের যত্নের পাশাপাশি পেটের যত্ন এখন রীতিমতো বিউটি ট্রেন্ডে পরিণত হয়েছে।

পেটের স্বাস্থ্য ত্বকের ওপর প্রভাব ফেলে তাই দুটিকেই সুস্থ রাখা জরুরি। চুলন জেনে নিই দুটিকেই কিভাবে সুস্থ রাখ যায়-  

ত্বকের ওপর পেটের অসুস্থতার প্রভাব
আমাদের অন্ত্র শুধু খাবার হজমই করে না, এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও ত্বকের সুস্থতার সঙ্গেও ওতপ্রোতভাবে জড়িত। অন্ত্রে প্রায় ৭০% রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা থাকে, যা শরীরের ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাসসহ অন্য ক্ষতিকর উপাদানের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা গড়ে তোলে। যদি অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়, তবে তা শুধু হজমের সমস্যা নয়, বরং ত্বকের নানা সমস্যারও কারণ হয়ে উঠতে পারে। 

পেট ত্বক

অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য বিঘ্নিতকারী খাবার, ছবি: নিউ সায়েন্টিস্ট

নিয়মিত হজমের সমস্যা থাকলে তা ত্বকে বিভিন্ন উপায়ে প্রতিফলিত হয়-

  • অতিরিক্ত তেলযুক্ত ও প্রক্রিয়াজাত খাবার অন্ত্রের উপকারী ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ কমিয়ে দিতে পারে, ফলে শরীরে প্রদাহ বাড়ে। এটি ব্রণ, একজিমা বা সোরিয়াসিসের মতো সমস্যার কারণ হতে পারে।
  • অন্ত্র যদি প্রয়োজনীয় পুষ্টি শোষণ করতে না পারে, তবে ত্বক পর্যাপ্ত ভিটামিন ও মিনারেল পায় না। বিশেষ করে ভিটামিন এ, সি, ই এবং জিঙ্কের অভাব ত্বককে শুষ্ক, রুক্ষ ও প্রাণহীন করে তুলতে পারে।
  • হজমের সমস্যা থেকে শরীরে টক্সিন জমতে পারে, যা ডিটক্সিফিকেশন প্রক্রিয়া ব্যাহত করে। ফলে চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল ও ফোলাভাব দেখা দিতে পারে।

পেট ও ত্বক সুস্থ রাখার উপায়

  • অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে ফাইবার বা আঁশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শাক-সবজি, ফল, বাদাম, বীজ ও পুরো শস্যজাতীয় খাবার অন্ত্রের ভালো ব্যাকটেরিয়াকে সমর্থন করে, যা ত্বককেও উজ্জ্বল করে তোলে।
  • প্রোবায়োটিক হলো উপকারী ব্যাকটেরিয়া, যা অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। দই, কেফির, কম্বুচা, সয়াবিনের ফার্মেন্টেড খাবার প্রোবায়োটিকের ভালো উৎস। প্রিবায়োটিক হলো এমন ধরনের ফাইবার, যা অন্ত্রের ভালো ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধিতে সহায়ক। কলা, রসুন, পেঁয়াজ, ওটস প্রিবায়োটিকের ভালো উৎস।
প্রিবায়োটিক

অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে এমন সব প্রিবায়োটিক খাবারের পসরা, ছবি: হেলথ

  • হজম ও ডিটক্সিফিকেশন প্রক্রিয়া সচল রাখতে দিনে অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন। এটি ত্বককে হাইড্রেটেড রাখে এবং উজ্জ্বলতা বাড়ায়।
  • অতিরিক্ত চিনি ও প্রক্রিয়াজাত খাবার (প্রসেসড ফুড) শরীরে ইনসুলিন স্পাইক ঘটিয়ে প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে, যা ব্রণসহ অন্য ত্বকের সমস্যার কারণ হতে পারে।
  • অতিরিক্ত স্ট্রেস কর্টিসল হরমোন বাড়িয়ে দেয়, যা অন্ত্রের স্বাভাবিক কার্যকারিতাকে ব্যাহত করে এবং ত্বকের সমস্যার জন্ম দেয়। নিয়মিত পর্যাপ্ত ঘুম ও মেডিটেশন অন্ত্র ও ত্বকের জন্য উপকারী।

সুস্থ ত্বকের জন্য শুধু বাহ্যিক যত্ন যথেষ্ট নয়, বরং আমাদের অন্তর্দেহের সুস্থতাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। পেটের স্বাস্থ্য ভালো থাকলে ত্বক স্বাভাবিকভাবেই উজ্জ্বল, মসৃণ ও সুস্থ থাকবে। তাই ত্বকের যত্ন নিতে চাইলে সঠিক খাবার খাওয়া, পানি পান করা ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা বজায় রাখা জরুরি।

আরও যা পড়তে পারেন

কমেন্ট করুণ