ক্ষমতা হারনোর ৬ মাস পর প্রথমবার জনসম্মুখে ভাষণ দিয়েছেন ভারতে পালিয়ে থাকা আওয়ামী লীগের নেত্রী শেখ হাসিনা। গত বছরের ৫ আগস্ট পালিয়ে যাওয়ার পর থেকেই প্রতিবেশি দেশে বসে নিজ দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বিভিন্ন উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। সর্বশেষ লাইভ ভাষণ দেওয়ায় ক্ষুব্ধ হয় দেশের ছাত্র-জনতাসহ তরুণ প্রজন্ম। রাজধানীর ধানমন্ডিতে অবস্থিত ৩২ নম্বর বাড়ি ভাঙার উদ্যোগ নেন তারা। এই ভবনকে তারা ফ্যাসিবাদের আইকন হিসেবে চিহ্নিত করেন।
৫ ফেব্রুয়ারি নির্ধারিত সময় রাত ৯টায় হাসিনার ভাষণের আগেই তার ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িতে জড়ো হতে থাকেন তার শাসন আমলে নিপীড়নের শিকার হওয়া ছাত্র-জনতা। রাত ৮টার দিকে বিক্ষুব্ধ জনতা বাড়ির প্রধান ফটক ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। এরপর ভাঙতে শুরু করে বাড়ি। একটা সময় আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয় বাড়ি।
এরপর বুলডোজার মেশিন দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া শুরু হয়। শুধু এই বাড়িটিই নয়। শেখ মুজিব ও তার পরিবারের সদস্যদের বাড়ি ও ম্যুরাল ভেঙে দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশের প্রায় সব জায়গাতেই, যা বেশ গুরুত্ব সহকারে প্রচার করেছে অন্তর্জাতিক মিডিয়াগুলো।
ব্রিটিশ খ্যাতনামা গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান তার শিরোনাম করেছে, ‘বাংলাদেশি বিক্ষোভকারীরা স্বাধীনতার প্রতীক সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পারিবারিক বাড়ি ধ্বংস করেছে’। এই বাড়িটি থেকেই শেখ হাসিনার বাবা পাকিস্তান ভাঙনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। তবে পরবর্তীতে কর্তৃত্ববাদের সাথে যোগসূত্র থাকার কারণে তার বাড়িতে আক্রমণ করা হয় বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতনামা গণমাধ্যম সিএনএন তাদের শিরোনাম করেছে, ‘বাংলাদেশের বিক্ষোভকারীরা নির্বাসিত সাবেক নেত্রী শেখ হাসিনার বাড়ি ধ্বংস করেছে।’ প্রতিবেশি ভারতে নির্বাসিত থেকে দলের সমর্থকদের উদ্দেশে হাসিনার একটি বক্তৃতা দেওয়াকে কেন্দ্র করে এই হামলা শুরু হয়। ছাত্র-নেতৃত্বাধীন বিদ্রোহে ১৫ বছরের শাসন শেষে পালিয়ে যান তিনি। তার বিরুদ্ধে ভিন্নমত দমন করার অভিযোগ রয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।
ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স ‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাবার বাড়ি উচ্ছেদ করেছে বিক্ষোভকারীরা’ এই শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করেছে। ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সমর্থকদের অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি জ্বালাময়ী বক্তৃতা দেন, যে কারণে এই হামলা শুরু হয় বলে প্ররতিবেদনে উল্লেখ করেছে রয়টার্স।
‘বিক্ষোভকারীরা বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে’ এমন শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করেছে লন্ডনভিত্তিক আর্ন্তজাতিক গণমাধ্যম বিবিসি। শুধু শেখ হাসিনাই নয়, তার পরিবার ও রাজনৈতিক দলের অনেক নেতাদের বাড়িতেও আগুন দেওয়া হয়েছে বলেও বিবিসির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
তুরস্কের অন্যতম গণমাধ্যম টিআরটি ওয়ার্ল্ড ‘ভারতে থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণ বাংলাদেশে প্রতিবাদের ঝড় তুলেছে’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের বার্তা সংস্থা এপি ‘বাংলাদেশি বিক্ষোভকারীরা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাড়িতে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
‘প্রতিবেশি ভারতে নির্বাসিত থেকে সমর্থকদের উদ্দেশে হাসিনার একটি বক্তৃতা দিয়ে হামলার সূত্রপাত হয়। ১৫ বছরের শাসনের বিরুদ্ধে ছাত্র-নেতৃত্বাধীন একটি তীব্র বিদ্রোহের সময় গত বছর ভারতে শেখ হাসিনা পালিয়ে যান বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে আন্তর্জাতিক এই বার্তা সংস্থাটি।
যুক্তরাষ্ট্রের এবিসি নিউজ তাদের শিরোনাম করেছে, ‘বাংলাদেশি বিক্ষোভকারীরা নির্বাসিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে জড়িত একটি বাড়িতে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে।’ হাজার হাজার বিক্ষোভকারী নির্বাসিত শেখ হাসিনার প্রতি তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছে তার পরিবারের বাড়ি ধ্বংস করে। যা দেশের স্বাধীনতার প্রতীক হয়ে এসেছিল। তবে বিক্ষোভকারীদের দাবি, কর্তৃত্ববাদের সূত্রপাত হয়েছিল এই বাড়িটিতেই বলে সংবাদে উল্লেখ করে এবিসি নিউজ।
এর বাইরে তুরস্কের গণমাধ্যম আনাদোলু এজেন্সি, সৌদি আরবের আরব নিউজ, পাকিস্তানের ডন, যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী পত্রিকা দ্য গার্ডিয়ান, ভারতের এনডিটিভি, ফার্স্টপোস্ট, নিউজএক্স, হিন্দুস্থান টাইমসসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে খবরের এ ঘটনা নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে।