বর্তমান ব্যস্ত জীবনে স্ট্রেস বা মানসিক চাপ একটি সাধারণ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্যক্তিগত, পেশাগত, সামাজিক বা আর্থিক বিভিন্ন কারণে মানুষ প্রতিদিনই কম-বেশি স্ট্রেসের শিকার হয়। অতিরিক্ত স্ট্রেস কেবল মানসিক নয়, শারীরিকভাবেও মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। দীর্ঘমেয়াদে এই সমস্যায় ভুগলে হৃদরোগ থেকে শুরু করে হজমের সমস্যা, অনিদ্রা, ওজন বৃদ্ধি, এমনকি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে দিতে পারে।
চলুন জেনে নেওয়া যাক স্ট্রেসের কারণে শরীরে কী ধরনের ক্ষতি হতে পারে –
- স্ট্রেস সরাসরি মস্তিষ্কের ওপর প্রভাব ফেলে। ঘন ঘন মাইগ্রেনের সমস্যা হতে পারে। অতিরিক্ত স্ট্রেসের কারণে ইনসোমনিয়া বা অনিদ্রা দেখা দিতে পারে, যা সামগ্রিক স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে।
- স্ট্রেস হৃদযন্ত্রের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে যা নানা ধরনের হৃদরোগের কারণ। দীর্ঘদিনের স্ট্রেস হাইপার টেনশনের ঝুঁকি বাড়ায়।
- কর্টিসল হরমোনের অতিরিক্ত নিঃসরণ হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। হৃদযন্ত্রের অনিয়মিত স্পন্দন বা অ্যারিদমিয়া হতে পারে।
অতিরিক্ত স্ট্রেসের কারণে ইনসোমনিয়া বা অনিদ্রা দেখা দিতে পারে, যা সামগ্রিক স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে, ছবি: ফ্রিপিক
- নিয়মিত মানসিক চাপে থাকলে এর প্রভাব হজম ও পরিপাকতন্ত্রের ওপর পড়ে। স্ট্রেসের কারণে অ্যাসিডিটি ও গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- দীর্ঘস্থায়ী স্ট্রেস পেপটিক আলসার বা পাকস্থলীতে ঘা সৃষ্টি করতে পারে। কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়ার সমস্যা হতে পারে। হজম শক্তি কমে যাওয়ায় শরীরে পুষ্টির ঘাটতি দেখা দিতে পারে।
- শরীরের ইমিউন সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা স্ট্রেসের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এর ফলে সংক্রমণের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। সামান্য ক্ষত সারতে বেশি সময় লাগে। সাধারণ সর্দি-কাশি বা ফ্লু সহজেই হয়ে তা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।
- স্ট্রেস শরীরের হরমোনের কার্যক্রমকে ব্যাহত করে মেটাবলিজমের ওপর প্রভাব ফেলে। এর ফলে কর্টিসল হরমোনের পরিমাণ বেড়ে যায়, যা শরীরে অতিরিক্ত চর্বি জমাতে সাহায্য করে এবং ওজন বৃদ্ধি করে। ইনসুলিনের কার্যকারিতা কমে গেলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেড়ে যায়। অতিরিক্ত স্ট্রেস নারীদের অনিয়মিত মাসিকচক্র তৈরি করতে পারে।
- স্ট্রেস দীর্ঘমেয়াদে পেশি ও হাড়ের স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। ক্রমাগত স্ট্রেস মাংসপেশিতে টান ও ব্যথা অনুভূত হতে পারে। স্ট্রেসের কারণে শরীরে ক্যালসিয়ামের শোষণ কমে যায়, যা হাড় দুর্বল করে দেয়। বাত ও জয়েন্ট পেইনের সমস্যার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
- স্ট্রেসের কারণে অনেক সময় ব্রণ, র্যাশ বা অন্যান্য চর্মরোগ বেড়ে যায়। কারণ কর্টিসল হরমোনের বৃদ্ধির ফলে ত্বকের তৈলাক্ততা বেড়ে যায়, যা ব্রণের কারণ হতে পারে। অতিরিক্ত স্ট্রেস একজিমা ও সোরিয়াসিসের মতো ত্বকের সমস্যাকে আরও তীব্র করে তোলে।
স্ট্রেস কমানোর উপায়
স্ট্রেস ব্যবস্থাপনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যাতে শরীরের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি না করতে পারে। স্ট্রেস রিলিজ বা মানসিক চাপ কমাতে অনেকেই ওষুধ সেব করে তাকেন। তবে প্রাকৃতিকভাবে কিছু শারীরিক কসরত ও খাদ্য শৃঙ্খল মেনে চললে অনেকটাই মানসিক চাপ কমে। এমন কয়েকটি কার্যকর উপায় হলো—
- প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম নিশ্চিত করা
- নিয়মিত শরীরচর্চা ও মেডিটেশন করা
- ফল, সবজি, পর্যাপ্ত পানি ও পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা
- কাজের ফাঁকে বিরতি নিতে হবে
- পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো স্ট্রেস রিলিজ সহায়ক
- বই পড়া, গান শোনা বা নতুন কিছু শেখার চেষ্টাও স্ট্রেস হরমোনে কার্যকারী ভূমিকা রাখে।
