‘মোবাইল ফার্স্ট জেনারেশন’ হিসাবে পরিচিত জেনারেশন জেড বা ‘জেন-জি’। বিশ্বব্যাপী মোবাইল ব্যবহারকারীর প্রায় ৪০ শতাংশই এই নতুন প্রজন্ম তথা ‘জেন-জি’। ফলে ‘জেন-জি’দের ওপর মোবাইল অ্যাপ ব্যবহারের প্রভাব ব্যাপক।
তাদের পছন্দ-অপছন্দ নিয়েও দারুণ কৌতুহলী অ্যাপ কোম্পানিগুলো। চলতি বছরে এই ‘জেন-জি’দের পছন্দের অ্যাপ কোনগুলো—তা জানতে সম্প্রতি অ্যাপ ইন্টেলিজেন্স প্রতিষ্ঠান ‘অ্যাপফিগার’ সর্বাধিক ডাউনলোড করা ৫০টি অ্যাপের একটি ডাটাবেজ প্রকাশ করেছে।
ডাটাবেজটি আইওএস ও এন্ড্রয়েড ব্যবহারকারীদের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে করা হয়েছে। তবে ‘জেন-জি’দের মধ্যে যাদের বয়স ১৩-১৭ বছর তাদের কোনো তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। এই ডাটাবেজে ১৮-২৪ বছর বয়সীদের অ্যাপ ব্যবহারের তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
তথ্যমতে, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর—এই ১০ মাসে ‘টেমু’ অ্যাপটি বিশ্বব্যাপী ডাউনলোড হয়েছে ৪১.৯৮ মিলিয়ন বার। ‘টেমু’ একটি জনপ্রিয় অনলাইন মার্কেটপ্লেস। প্রায় সব ধরনের পণ্য এখানে ছাড়ে পাওয়া যায়। ক্রেতাদের অনুপ্রাণিত করতে প্রায়ই কুপন, পুরস্কার ও বিনামূল্যে নানান উপহার অফার করে।

‘টেমু’ একটি জনপ্রিয় অনলাইন মার্কেটপ্লেস, ছবি: টেকক্রাঞ্চ
ডাউনলোডের দিক দিয়ে ‘জেন-জি’দের পছন্দের তালিকায় ‘টেমু’র পরে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে ‘টিকটক’। এই বছর ৩৩.২৩ মিলিয়ন বার ‘টিকটক’ অ্যাপ ডাউনলোড করেছে ‘জেন-জি’ প্রজন্ম। ১৮-২৪ বছর বয়সীদের কাছে শর্ট ভিডিওর জনপ্রিয় অ্যাপ এটি। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে ‘জেন-জি’দের কাছে সার্চ ইঞ্জিন গুগলের চেয়েও বেশি প্রিয় টিকটক।
প্রাপ্তবয়স্ক ‘জেন-জি’দের কাছে ভিডিও প্লাটফর্ম ‘ইউটিউব’ খুবই জনপ্রিয় অ্যাপ। অ্যাপফিগারের তথ্য বলছে, গত ১০ মাসে নতুন করে ১৪.০৩ মিলিয়ন বার ইউটিউব অ্যাপ ডাউনলোড করেছে তারা। তবে তুলনা করতে গেলে টিকটকের চেয়ে অনেক কম। ‘জেন-জি’দের বড় একটি অংশ এই অ্যাপের সঙ্গে যুক্ত।
ছোট নাটক অ্যাপ ইন্ডাস্ট্রির দিকেও নজর আছে তাদের। সাম্প্রতিক অ্যাপগুলোর মধ্যে দৃষ্টি আকর্ষণ করা একটি অ্যাপ হচ্ছে ‘শর্টম্যাক্স’। এই অ্যাপে নাটক, রোমান্সকর ও রহস্যময়সহ বিভিন্ন ঘরানার প্রায় ১০০০ (এক হাজার) শর্ট ফিল্ম রয়েছে। ১৮-২৪ বছর বয়সী ‘জেন-জি’রা চলতি বছরই এ পর্যন্ত ১০ মিলিয়ন বার অ্যাপটি তাদের মোবাইলে ইনস্টল করেছে।

‘জেন-জি’দের কাছে সার্চ ইঞ্জিন গুগলের চেয়েও বেশি প্রিয় টিকটক, ছবি: টেকক্রাঞ্চ
‘জেন-জি’র প্রাপ্তবয়স্ক সদস্যরা ‘মেটা’ পরিবারের অ্যাপ ডাউনলোড করতেও ভুল করেনি। ‘মেটা’ পরিবারের অ্যাপের মধ্যে সবার শীর্ষে রয়েছে ‘থ্রেডস’। এই অ্যাপটি ৩২.৩২ মিলিয়ন বার ইনস্টল করেছেন তারা। ২৮.৪২ মিলিয়ন বার ডাউনলোড করা ‘হোয়াটসঅ্যাপ’ আছে তালিকার দ্বিতীয় স্থানে।
এছাড়া ২৬.২৯ মিলিয়ন বার ডাউনলোড নিয়ে তালিকার তৃতীয় স্থানে রয়েছে মেটার ‘ইনস্টাগ্রাম’। এরপর ২০.৫৮ মিলিয়ন বার ও ১৭.৬৩ মিলিয়ন বার ডাউনলোড করা মেটার ‘ফেসবুক’ ও ‘মেসেঞ্জার’ রয়েছে তালিকার চতুর্থ ও পঞ্চম স্থানে।
এ বছর টেক জায়ান্ট গুগলের একাধিক অ্যাপও ডাউনলোড করেছে ‘জেন-জি’রা। গুগলের সার্চ ইঞ্জিন অ্যাপ ডাউনলোড হয়েছে ১৭.৬৫ মিলিয়ন বার। এছাড়া গুগলের নিজস্ব পণ্য ‘ক্রোম’ ও ‘গুগল মিট’ ইনস্টল করা হয়েছে যথাক্রমে ১০.১৯ মিলিয়ন বার ও ৯.৬৩ মিলিয়ন বার। এই সময়ের মধ্যে ‘গুগল ড্রাইভ’ ও ‘গুগল ফটোজ’ ডাউনলোড হয়েছে যথাক্রমে ৭.২২ মিলিয়ন বার ও ৬.৭৯ মিলিয়ন বার।

‘মেটা’ পরিবারের অ্যাপের মধ্যে সবার শীর্ষে রয়েছে ‘থ্রেডস’, ছবি: টেকক্রাঞ্চ
চমকপ্রদ আবিষ্কার ‘চ্যাটজিপিটি’ ১৮-২৪ বছর বয়সী জেন-জি সদস্যদের মধ্যে সবার পছন্দ। ২৪.৬৩ মিলিয়ন বার এই অ্যাপ ইনস্টল করেছে তারা। শিক্ষাগ্রহণ ও ক্যারিয়ার গাইডলাইন হিসেবে ‘ওপেনএআই’ ব্যবহার করেছে অনেকে। বিশেষ করে ‘জেন-জি’দের মধ্যে যারা কলেজে পড়ে বা সদ্য কোনো চাকুরিতে জয়েন করেছে তারা চ্যাটজিপিটি অত্যধিক ব্যবহার করে। একটি সমীক্ষায় দেখা যায়, ৪৩ শতাংশ কলেজ স্টুডেন্ট চ্যাটজিপিটি বা একই ধরনের টুলস ব্যবহার করে।
এছাড়া টিকটকের মূল প্রতিষ্ঠান বাইটড্যান্সের ওপেনএআই ‘গথ’ অ্যাপ নতুন করে ৮.৩৭ মিলিয়ন বার ডাউনলোড করেছে ‘জেন-জি’রা। ২০২১ সাল থেকে চলমান থাকা এই অ্যাপটি গত এপ্রিলে ডাউনলোডের দিক দিয়ে আমেরিকায় দ্বিতীয় স্থানে ছিল।
‘জেন-জি’দের প্রতিদিনের জীবনযাপনে ফটো শেয়ারিং ও সোশ্যাল মিডিয়া অবিচ্ছেদ্য অংশ। ডাউনলোডের তালিতায় এ জাতীয় কোনো না কোনো অ্যাপ থাকেই।

৪৩ শতাংশ কলেজ স্টুডেন্ট চ্যাটজিপিটি বা একই ধরনের টুলস ব্যবহার করে, ছবি: টেকক্রাঞ্চ
প্রাপ্তবয়স্ক ‘জেন-জি’দের ক্ষেত্রে থ্রেডস ও ইনস্টাগ্রাম সবার ওপরে থাকলেও বাইটড্যান্সের ‘ক্যাপকাট’ অত্যধিক বার ডাউনলোড করেছেন। ক্যাপকাটের মাধ্যমে এডিট করা ভিডিও টিকটকসহ সোশ্যাল মিডিয়ার অন্য প্লাটফর্মে সহজেই আপলোড করা যায়। নতুন করে ক্যাপকাট ডাউনলোড হয়েছে ২১.৭২ মিলিয়ন বার।
‘লেমন৮’ নামে বাইটড্যান্স পরিবারের আরেকটি অ্যাপ এই প্রজন্মের কাছে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ৭.৭ মিলিয়ন বার ডাউনলোড হয়েছে। সেই তুলনায় ইনস্টাগ্রামের ‘কপিকাট’ও আমেরিকায় ভালো করেছে।
এর বাইরে ‘স্ন্যাপচ্যাট’ ডাউনলোড হয়েছে ১৯.১৬ মিলিয়ন বার। এরপরে ‘টেলিগ্রাম’, ‘পিন্টারেস্ট’, ‘রেডিট’ ও ‘এক্স’ ডাউনলোড হয়েছে যথাক্রমে ১৩.১২, ৮.২৩, ৮.০৬ ও ৭.৪৮ মিলিয়ন বার।

ক্যাপকাটে এডিট করা ভিডিও সহজেই সোশ্যাল মিডিয়ার প্লাটফর্মে আপলোড করা যায়, ছবি: টেকক্রাঞ্চ
স্ট্রিমিং সার্ভিসের মধ্যে ১৮-২৪ বছর বয়সীরা ‘নেটফ্লিক্স’ ডাউনলোড করেছে ১৫.৬৭ মিলিয়ন বার। ‘প্রাইম ভিডিও’ এবং ‘ডিজনি প্লাস’ ডাউনলোড হয়েছে যথাক্রমে ১২.৮৬ মিলিয়ন ও ১১.৬৮ মিলিয়ন বার। আর ‘ম্যাক্স’, ‘পিকক’ ও ‘তুবি’ গড়ে ৭ মিলিয়ন বা তার বেশিবার ডাউনলোড হয়েছে।
মিউজিক স্ট্রিমিং অ্যাপ ডাউনলোডেও কম যায় না ‘জেন-জি’রা। প্রাপ্তবয়স্ক ‘জেন-জি’দের কাছে প্রিয় মিউজিক স্ট্রিমিং হচ্ছে ‘স্পটিফাই’। ১০.৪৫ মিলিয়ন বার ‘স্পটিফাই’ ডাউনলোড করেছে তারা।
এদিকে পেমেন্ট অ্যাপের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৩.৯২ মিলিয়ন বার ডাউনলোড হয়েছে ‘পেপ্যাল’। ৭.৮ মিলিয়ন বার ডাউনলোড নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে আরেক পেমেন্ট অ্যাপ ‘ভেনমো’। আর ৬.৯ মিলিয়নবার ডাউনলোড নিয়ে পেমেন্ট অ্যাপসের তৃতীয় অবস্থানে আছে ‘ক্যাশ অ্যাপ’।
টেকক্রাঞ্চ থেকে অনূদিত