কোরবানি ঈদের আয়োজন মানেই হাজারো রকমের কাজ। এই উৎসব ঘিরে শুরু হয় ব্যস্ততা, চলে নানা প্রস্তুতি। শহর কিংবা গ্রাম, ঈদের আমেজে সেজে ওঠে প্রতিটি প্রান্ত। কোরবানির পশু কেনা থেকে শুরু করে পশু কোরবানি, মাংস বণ্টন, সংরক্ষণ করাসহ অতিথি আপ্যায়ন, রান্নাবান্না, ঘর পরিষ্কার রাখা সব মিলিয়ে ঈদের দিন যেন আর দম ফেলার ফুরসতই পাওয়া যায় না। তাই ঈদের আগেই যদি কিছু কাজ গুছিয়ে নেয়া যায় তাহলে সময় বেঁচে যাবে অনেকটাই।
গরুর হাটে উৎসবের রঙ
ঈদের প্রস্তুতির সবচেয়ে রোমাঞ্চকর অংশ হলো গরু কেনা। পরিবারের বড় ছোটরা সবাই অপেক্ষায় থাকে এই দিনটার জন্য। বিভিন্ন হাটে গরু দেখতে যাওয়া, দরদাম করা, পশু পছন্দ করা, সব মিলিয়ে যেন এক ধরনের পারিবারিক অ্যাডভেঞ্চার।
পশু পরিচর্যা
কোরবানির পশু বাড়িতে আসার পর তাকে নিয়ে বাড়ির সবার মধ্যে শুরু হয় নতুন আনন্দ। শিশুরা আদর করে নাম রাখে। সেই সঙ্গে চলে নিয়মিত পরিচর্যা। খাওয়া, গোসল, সময়মতো হাঁটানো।
পশু কোরবানির প্রস্তুতি
কোরবানি ঈদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো পশু কোরবানি করা। তাই কোরবানির জন্য প্রস্তুতি নিন। মাংস কাটার জন্য দা, বঁটি, ছুরি এসব পরিষ্কার করে রাখুন আগেই। চাটাই, পাটি ও দাঁড়িপাল্লার ব্যবস্থা করতে ভুলবেন না। কোরবানি পরবর্তী সময়ে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার জন্য ব্লিচিং পাউডারও আবশ্যক। মাংস কাটার সরঞ্জাম শিশুদের নাগালের বাইরে রাখুন।
কোরবানির ঈদে চাপ পড়ে ফ্রিজারে। তাই আগেভাগেই ফ্রিজ পরিষ্কার করে রাখুন। ফ্রিজে মাংস রাখার ১২ ঘন্টা আগে পরিষ্কার করে ভালোভাবে মুছে রাখুন। যাতে মাংস ভালো ভাবে সংরক্ষণ করতে পারেন। মাংস বিতরণ ও সংরক্ষণের জন্য জিপলক ব্যাগের ব্যবস্থা করে রাখুন।

ঈদের আগেই রান্নাঘর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে রাখতে হবে, ছবি; বিপ্রোপার্টি।
রান্নাঘরের প্রস্তুতি
ঈদের সবচেয়ে ব্যস্ত স্থান রান্নাঘর। ঈদের আগের দিন থেকেই শুরু হয় রান্নার আয়োজন। তাই বটি, কড়াই, হাঁড়ি, ফ্রাইং প্যান থেকে শুরু করে মসলা, আদা, রসুন, পেঁয়াজের স্টক আগেভাগেই গুছিয়ে রাখা দরকার। প্রেসার কুকার বা ব্লেন্ডার ঠিকভাবে কাজ করছে কি না দেখে নিন।

বিভিন্ন ধরনের মিষ্টান্ন ঈদের আগের দিন রাতেই বানিয়ে রেখে দিন, ছবি; মিডডে
ঈদের দিন সকালে নিজেদের খাওয়ার জন্য বা অথিতি আপ্যায়নের জন্য কিছু খাবারের ব্যবস্থা আগেই করে ফেলতে পারেন। বিভিন্ন ধরনের মিষ্টান্ন আগের দিন রাতেই বানিয়ে রেখে দিন। যেসব খাবার ঈদের দিনই বানাবেন তার প্রস্তুতি নিয়ে রাখুন।
বাসনকোসন প্রস্তুতি
ঈদের আগের দিনই খাবার পরিবেশনের জন্য বাসনকোসন ধুয়ে মুছে রেডি করে রাখুন। খাবার টেবিল সাজাতে রানার ব্যবহার করতে পারেন। খাবার ঘরের দেয়ালের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে বা পরিবেশনের তৈজসপত্রের রঙের থেকে বিপরীত রঙের টেবিল রানার ও ন্যাপকিন ব্যবহার করুন। খাবার টেবিলের সজ্জায় কিছু শোপিস রাখতে পারেন।

ঈদের দিন বাড়িতে অতিথির আনাগোনা তো থাকবে ঘর গুছিয়ে রাখা চাই, ছবি; বিপ্রোপার্টি।
অন্দরসজ্জা
পশু কোরবানি এবং মাংস বণ্টন নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও ঈদ উৎসবে ঘরকে সুন্দর করে গুছিয়ে রাখা জরুরী। কারণ অন্দরকে পরিপাটি করে সাজানো উৎসবের অংশ। ঈদের দিন বাড়িতে মেহমানের আনাগোনা তো থাকবেই। আর সে জন্য ঘরটাও একটু গুছিয়ে রাখা চাই। ঘরের দেয়াল, কর্নার এবং আসবাবপত্রের ধুলো ঝেড়ে মুছে নিন।
ঘরের বাড়তি কাজ থাকলে সেরে ফেলতে পারেন। যেমন পর্দা কেনা, বিছানার চাদর পরিষ্কার করা কিংবা ঘর সাজানোর জিনিসপত্র কেনা। ঈদ উৎসবে সুন্দর চাদরটি বিছানায় বিছিয়ে, দরজা-জানালায় পর্দাগুলো টাঙিয়ে দিন। যেন তাকালেই মন ভালো হয়ে যায়। ফুলদানিতে কিছু তাজা ফুল সাজিয়ে নিতে পারেন। দেখলেই মনটা সতেজ লাগবে।
নতুন পোশাক
ঈদ মানেই নতুন পোশাক। ঈদের খুশিতে পূর্ণতা এনে দেয় নতুন পোশাক। ছোট-বড় সবাই মিলে বেছে নেয় পোশাক ও অ্যাকসেসরিজ। ঈদের দিন হালকা ধরনের আরামদায়ক পোশাক বেছে নিন। এবারের ঈদে ফ্যাশন হাউজগুলো ব্যবহার করেছে সুতি, লিলেন, মকমল, কটনসহ আরামদায়ক কাপড়। তরুণীদের জন্য রয়েছে ফ্যাশনেবল কো-অর্ড সেট।

ঈদের খুশিতে পূর্ণতা এনে দেয় ছোটদের নতুন পোশাক, ছবি; আড়ং ওয়েব পেইজ থেকে নেওয়া।
শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, কুর্তি সব ধরনের সংগ্রহেই রয়েছে নতুনত্ব। চাইলে পরিবারের সব সদস্য একসঙ্গে ম্যাচিং পোশাকও নিতে পারেন। সারা দিন কাজের জন্য সুতির পোশাক পরলেও দাওয়াতে একটু জমকালো পোশাক পরতে পারেন। দিনের সাজগোজ রাখুন একদম হালকা।
ত্যাগের মহিমা ও সাম্যের বার্তা
সব প্রস্তুতির শেষে আসে ঈদের মূল বার্তা, ত্যাগ। কোরবানি কেবল পশু জবাই নয় এটি হলো আত্মত্যাগ, সহানুভূতি ও সমাজে সাম্য প্রতিষ্ঠার প্রয়াস। ভাগ করে খাওয়া, দরিদ্রদের সঙ্গে খাবার ও মাংস ভাগাভাগি করার মধ্য দিয়ে মানুষ শেখে সংবেদনশীলতা।
কোরবানির ঈদ যেন শুধু উৎসব নয়। এটি মানবিক গুণাবলি বিকাশের এক অনবদ্য সুযোগ। প্রস্তুতি যত বেশি হয়, আনন্দও তত গভীর হয়। ভালোবাসা, দায়িত্ববোধ আর পারিবারিক সম্প্রীতির এই মিলনমেলায় প্রতিটি মুহূর্ত হয়ে ওঠে স্মরণীয়।