সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে একটি অস্বস্তিকর চর্মরোগ — স্ক্যাবিস। গ্রামাঞ্চল থেকে শুরু করে শহরের ব্যস্ত পরিবারগুলোতেও ছড়িয়ে পড়ছে এই সংক্রামক রোগ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সময়মতো প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা না নিলে এটি ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।
স্ক্যাবিস কী?
স্ক্যাবিস হলো এক ধরনের চর্মরোগ, যার মূল কারণ Sarcoptes scabiei নামের এক প্রকার ক্ষুদ্র আকারের পরজীবী আকারের কীট (mites)। এরা ত্বকের নিচে গর্ত করে ডিম পাড়ে এবং ত্বকে তীব্র চুলকানি সৃষ্টি করে। এটি খুব দ্রুত ছড়ায় — একটি আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে পরিবারের অন্য সদস্য বা আশেপাশের মানুষজনের মধ্যে সহজেই ছড়িয়ে যেতে পারে।

স্ক্যাবিসের জন্য দায়ী এক প্রকার ক্ষুদ্র আকারের পরজীবী আকারের কীট, ছবি: ফ্রিপিক
উপসর্গ
স্ক্যাবিসের প্রধান লক্ষণগুলো হলো:
- রাতে চুলকানি বেড়ে যাওয়া
- ত্বকে লাল লাল ফুসকুড়ি বা দানা
- আঙুলের ফাঁকে, কব্জিতে, কোমরে, নাভিতে, গোপনাঙ্গের আশেপাশে ছোট ছোট দাগ বা গর্তের মতো দাগ
- শিশুদের ক্ষেত্রে মুখে বা মাথার তালুতেও হতে পারে
কেন বাড়ছে সংক্রমণ?
বিশেষজ্ঞদের মতে, নিচের কারণগুলো স্ক্যাবিস বৃদ্ধির পেছনে দায়ী:
- ঘন বসবাস ও স্বাস্থ্যবিধির অভাব
- একই বিছানা ও জামাকাপড় ভাগাভাগি করে ব্যবহার
- আর্থিক কারণে সময়মতো চিকিৎসা না নেওয়া
- স্ক্যাবিস সম্পর্কে সচেতনতার অভাব

স্ক্যাবিস হলে রাতে চুলকানি বেড়ে যায়, ছবি: ফ্রিপিক
প্রতিরোধের উপায়
স্ক্যাবিস প্রতিরোধে কিছু কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি:
- ব্যক্তিগত ও পারিবারিক পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন
- আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত বিছানা, বালিশ, চাদর, তোয়ালে গরম পানিতে ধুয়ে রোদে শুকান
- পরিবারের সব সদস্যকে একসঙ্গে চিকিৎসা দিন (আক্রান্ত হোক বা না হোক)
- ৭ দিন ব্যবধানে পরপর দুইবার ওষুধ প্রয়োগ করা ভালো

আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত বিছানা, বালিশ, চাদর, তোয়ালে গরম পানিতে ধুয়ে রোদে শুকান, ছবি: ফ্রিপিক
চিকিৎসা ও করণীয়
চিকিৎসার জন্য সবচেয়ে প্রচলিত ঔষধ হলো পারমেথ্রিন (Permethrin) ৫% ক্রিম। এটি সারা শরীরে ব্যবহার করে ৮-১০ ঘণ্টা পর ধুয়ে ফেলতে হয়। এছাড়া কিছু ক্ষেত্রে আইভারমেকটিন (Ivermectin) নামক ওষুধ মুখে খাওয়ানো হয় চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী।মনে রাখতে হবে, চুলকানি কমে গেলেও সংক্রমণ পুরোপুরি নির্মূল না-ও হতে পারে। তাই চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পূর্ণ করতে হবে।
শিশু ও গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে
শিশুদের জন্য চিকিৎসা ও ক্রিম ব্যবহারের ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে পারমেথ্রিন অপেক্ষাকৃত নিরাপদ মনে করা হয়, তবে প্রয়োগের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত।
সচেতনতাই প্রধান প্রতিরোধ
স্ক্যাবিস কোনো মারাত্মক রোগ নয়, কিন্তু অবহেলা করলে এটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং রোগীর জীবনকে অতিষ্ঠ করে তোলে। তাই সচেতনতা, নিয়মিত পরিচ্ছন্নতা ও সময়মতো চিকিৎসাই এই রোগ প্রতিরোধের প্রধান হাতিয়ার। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবন করবেন না। কোনো চর্মরোগে আক্রান্ত হলে দ্রুত নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যোগাযোগ করুন।