Home সর্বশেষ গবেষণাপত্র প্রকাশের ক্ষেত্রে যে সতর্কতাগুলো অবশ্যই মানা উচিত

গবেষণাপত্র প্রকাশের ক্ষেত্রে যে সতর্কতাগুলো অবশ্যই মানা উচিত

তাসনিম তাবাসসুম
৪০ views

বিশ্ববিদ্যালয় বা উচ্চশিক্ষা-ভিত্তিক গবেষণার অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হলো জ্ঞান সৃজন ও তা বিশ্বমঞ্চে উপস্থাপন করা। এই উপস্থাপনার সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য মাধ্যম হলো গবেষণাপত্র প্রকাশ বা রিসার্চ পেপার পাব্লিকেশন। তবে কেবল গবেষণা করলেই চলবে না; সেই গবেষণা প্রকাশের সময় কিছু গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা মেনে না চললে গবেষণার গ্রহণযোগ্যতা ও লেখকের সুনাম—দুই-ই প্রশ্নের মুখে পড়তে পারে।

নিচে রিসার্চ পেপার পাবলিশের সময় অনুসরণযোগ্য প্রধান সতর্কতাগুলো তুলে ধরা হলো—

প্রতারণামূলক বা ভুয়া জার্নাল থেকে সাবধান
বর্তমানে অনেক তথাকথিত প্রেডিটোরি জার্নালস (predatory journals) রয়েছে, যারা অর্থের বিনিময়ে নিম্নমানের গবেষণা বা এমনকি ভুয়া তথ্যও প্রকাশ করে থাকে। এই ধরনের জার্নালে লেখা প্রকাশিত হলে তা ভবিষ্যতে একাডেমিক ক্যারিয়ারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। DOAJ (Directory of Open Access Journals) ও Scopus বা Web of Science লিস্টে থাকা জার্নালই বেছে নিন। জার্নালটির ইম্প্যাক্ট ফ্যাক্টর ও পিয়ার রিভিউ পলিসি যাচাই করুন।

নিজের কাজেই থাকা উচিত মৌলিকতা
রিসার্চে মৌলিকতা (originality) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্ল্যাজিয়ারিজম (চুরি করে লেখা বা তথ্য ব্যবহার) একাডেমিক অপরাধ এবং এর জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার পর্যন্ত হতে পারে। অন্যের লেখা বা তথ্য গ্রহণ করলে উপযুক্ত রেফারেন্স ব্যবহার করুন। টার্নিটিন, গ্রামারলি বা আইথেন্টিকেট –এর মতো প্ল্যাজিয়ারিজম চেকার ব্যবহার করুন

3 5

রিসার্চ পেপারে ব্যবহৃত তথ্য, ডেটা কালেকশন প্রসেস এবং বিশ্লেষণ পদ্ধতি (মেথডোলজি) যেন স্বচ্ছ এবং যাচাইযোগ্য হয়, ছবি: ফ্রিপিক

ডেটা ও মেথডোলজি নির্ভুলভাবে উপস্থাপন করুন
রিসার্চ পেপারে ব্যবহৃত তথ্য, ডেটা কালেকশন প্রসেস এবং বিশ্লেষণ পদ্ধতি (মেথডোলজি) যেন স্বচ্ছ এবং যাচাইযোগ্য হয়, তা নিশ্চিত করা জরুরি। গবেষণায় ব্যবহৃত যন্ত্র, সফটওয়্যার ও পরিমাপের একক বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করুন। প্রয়োজন হলে সাপ্লিমেন্টারি ফাইল হিসেবে রও ডাটা জমা দিন।

একই লেখা একাধিক জায়গায় না পাঠানো
একই রিসার্চ পেপার একাধিক জার্নালে একসাথে সাবমিট করা একাডেমিক নীতিমালার চরম লঙ্ঘন। এটি ধরা পড়লে লেখকের বিরুদ্ধে আজীবনের জন্য নিষেধাজ্ঞাও আসতে পারে। এক জার্নালে রিজেক্ট হলে তবেই অন্য জার্নালে পাঠান। সাবমিশন স্ট্যাটাস সব সময় ডকুমেন্টেড রাখুন।

সহলেখক ও কন্ট্রিবিউটরদের যথাযথ স্বীকৃতি দিন
অনেক সময় দেখা যায় গবেষণায় সহায়তাকারীদের নাম বাদ পড়ে যায়, যা অনৈতিক ও অবিচারপূর্ণ। আবার কারো কোনো কন্ট্রিবিউশন না থাকা সত্ত্বেও নাম যোগ করার ঘটনাও ঘটে। ICMJE Authorship Criteria অনুসরণ করুন। কে কী ভূমিকা রেখেছেন, তা contribution statement-এ উল্লেখ করুন।

2 10

সহলেখক ও কন্ট্রিবিউটরদের যথাযথ স্বীকৃতি দিন, ছবি: ফ্রিপিক

জার্নালের গাইডলাইন ঠিকঠাক অনুসরণ করুন
প্রতিটি জার্নালের লেখার স্টাইল, রেফারেন্সিং ফরম্যাট, ওয়ার্ড লিমিট ইত্যাদি থাকে। এগুলো না মানলে অপ্রয়োজনীয়ভাবে পেপার রিজেক্ট হতে পারে। জার্নালের Author Guidelines সাবধানে পড়ুন। প্রয়োজনে পূর্বে প্রকাশিত পেপার দেখে অনুকরণ করুন।

গবেষণাপত্র লেখা ও প্রকাশ একটি ধৈর্য, সততা ও পেশাদারিত্বের কাজ। ভুলত্রুটি বা অনৈতিক কাজ ভবিষ্যৎ একাডেমিক জীবনে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই সঠিক প্ল্যাটফর্ম, স্বচ্ছতা ও নৈতিকতা বজায় রেখে গবেষণা প্রকাশই একজন প্রকৃত গবেষকের দায়িত্ব।

সূত্র: এলসিভিএর অথর হাব, নেচার রিসার্চ এডিটোরিয়াল গাইডলাইন্স এবং স্প্রিঙ্গার গাইডলাইন্স ফর অথরস

আরও যা পড়তে পারেন

কমেন্ট করুণ