শারীরিক বিবর্তন শুধু শক্তি বা বুদ্ধিমত্তার প্রশ্ন নয়, বরং ছোটখাটো অভিযোজনও একটি প্রজাতির ভাগ্য নির্ধারণ করতে পারে। নিয়ান্ডারথালরা হয়তো শক্তিশালী ও সহনশীল ছিল, কিন্তু হোমো স্যাপিয়েন্সের ত্বকের প্রাকৃতিক সুরক্ষা ব্যবস্থাই তাদের টিকে থাকার মূল চাবিকাঠি হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
প্রায় ৪১,০০০ বছর আগে, পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র দুর্বল হয়ে পড়েছিল, ফলে ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মি অধিক পরিমাণে পৃথিবীর পৃষ্ঠে পৌঁছাতে শুরু করে। এই সময়ে, হোমো স্যাপিয়েন্সরা ত্বককে সূর্যের রশ্মি থেকে বাঁচাতে এক ধরণের মাটির প্রলেপ ব্যবহার শুরু করে। এই অভ্যাসই হয়তো তাদেরকে পৃথিবীতে টিকে থাকতে সাহায্য করেছে।
বিজ্ঞানীদের মতে, ইউভি রশ্মির বিরুদ্ধে ত্বকের প্রাকৃতিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা হোমো স্যাপিয়েন্সদের আফ্রিকার রুক্ষ পরিবেশে টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করেছিল, যা নিয়ান্ডারথালদের জন্য সম্ভব হয়নি।
এর জন্য তারা ব্যবহার করতো ‘ওকার’ নামক এক ধরণের মাটি, যা সূর্যরশ্মি থেকে ত্বককে রক্ষা করতে সাহায্য করত। আফ্রিকার তীব্র সূর্যালোকের সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য হোমো স্যাপিয়েন্সের ত্বক কালো হয়ে বিবর্তিত হয়েছিল, যা মেলানিন নামক রঞ্জক পদার্থের কারণে সম্ভব হয়েছিল। মেলানিন সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি শোষণ করে এবং ডিএনএ ক্ষতি রোধ করে।
মানুষের কাছাকাছি প্রজাতি নিয়ান্ডারথালরা তুলনামূলক কম সূর্যালোকযুক্ত অঞ্চলে বাস করত, তাদের মেলানিন উৎপাদনের ক্ষমতা কম ছিল। ফলে, যখন তারা আফ্রিকা বা মধ্যপ্রাচ্যের মতো উচ্চ ইউভি অঞ্চলের দিকে যাত্রা করছিলো তাদের ত্বক সূর্যের ক্ষতিকর প্রভাব সহ্য করতে পারেনি। তাদের প্রজনন ক্ষমতা কমে গিয়েছিল, কোষের ক্ষতি হয়েছিল এবং শেষ পর্যন্ত তারা বিলুপ্তির দিকে এগিয়েছিল।

ত্বক এবং চুলে লাল ওকারের লেপ দেওয়া হিম্বা সম্প্রদায়ের দৈনন্দিন অভ্যাস, ছবি: গাশি
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, এই সময়ে হোমো স্যাপিয়েন্সরা সেলাই করা পোশাক পরা শুরু করে এবং গুহায় বসবাসের প্রবণতা বাড়ায়, যা তাদের পরিবেশগত প্রতিকূলতা থেকে রক্ষা করত। এই অভিযোজনমূলক আচরণগুলি তাদের ইউরোপ ও এশিয়ায় বিস্তারে সহায়তা করেছিল, যেখানে নিয়ান্ডারথালদের সংখ্যা কমে আসছিল।
মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক র্যাভেন গার্ভে বলেন, ‘ওকার সূর্যরশ্মি প্রতিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা ত্বককে রক্ষা করতে সাহায্য করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সূর্যরশ্মি থেকে রক্ষা পাওয়া হোমো স্যাপিয়েন্সের জন্য একটি বিশেষ সুবিধা ছিল।’
এই গবেষণাটি আমাদের পূর্বপুরুষদের অভিযোজন ক্ষমতা এবং প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের গুরুত্বকে তুলে ধরে। প্রাকৃতিক সানস্ক্রিন ও পোশাকের ব্যবহার প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকার লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
সূত্র: দ্য টেলিগ্রাফ ও সাইন্স