বাংলাদেশের বিনোদনের জগতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি বছর ২০২৪। একদিকে বছর শুরুতেই হিট সিনেমার আনাগোনা, কনসার্ট আয়োজন, বিদেশি শিল্পীদের অংগ্রহণ, আরেক দিকে রাজনৈতিক পটভূমি পরিবর্তনে ভিন্ন জোয়ারে বিনোদন পাড়া।
এই পরিবর্তনের জোয়ারে দেশীয় মিডিয়ার বেশ কয়েকটি মুখ খবরের শিরোনাম হয়েছে, আলোচনায়-সমালোচনায় এসেছে। হ্যালো বাংলাদেশের এই বিশেষ ফিচারে থাকছে বছরজুড়ে শিরোনামে থাকা কয়েকজনের খবর।
শাকিব খান
‘নাম্বার ওয়ান শাকিব খান’ গানের কথাকে সত্য করে ঠিকই দর্শকের খাতায় নাম্বার ওয়ান হয়ে গেছেন শাকিব খান। অন্তত সমালোচকরা সেটাই বলছেন। বছরের শুরুর দিকে ‘রাজকুমার’ দিয়ে তিনি অভিনেতা হিসেবে আরেকবার নিজেকে প্রমাণ করেছেন। মাঝে ‘তুফান’ দিয়ে সব ধরনের দর্শকদের কাছে পৌঁছে গেছেন, আবার শেষে ‘দরদ’ দিয়ে সমালোচকদের মন জয় করেছেন। অন্যদিকে বছরের শুরু থেকে শেষে তার প্রতিষ্ঠান রিমার্ক হারল্যান দিয়ে মোটামুটি তারকাশিবির তৈরি করেছেন এই তারকা। বিদ্যা সিনহা মিম, সিয়াম— কে নেই এই শিবিরে? বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের টিম ঢাকা ক্যাপিটালও কিনে নিয়েছেন। বলা যেতে পারে, ২০২৪ সাল প্রকৃতপক্ষে শাকিবেরই বছর।
রায়হান রাফি
শাকিব খানের পাশাপাশি রায়হান রাফির কথা বলতেই হয়। ‘পরাণ’ ও ‘সুড়ঙ্গ’র পর ২০২৪ সালে তিনি ছক্কা মারেন ‘তুফান’ দিয়ে। অনেকের ধারণা, মাঝে জুলাই বিপ্লব না হলে বছরজুড়েই ব্যবসা করতো ‘তুফান’। এর মাঝেই নতুন সিনেমা ‘তাণ্ডব’র ঘোষণা দিয়েছেন। ‘ব্ল্যাক মানি’ নামের একটি ওয়েব সিরিজে চিত্রনায়ক রুবেলকে নিয়ে এসেছেনে ড্যাশিংরূপে। নির্মাতা হিসেবে এই বছরে তিনি পেয়েছেন ১০০তে ১০০, বলছে মিডিয়াকর্মীরা।
মোস্তফা সরয়ার ফারুকী
২০২৪ সালে তার ওয়েবফিল্ম আলোচনায় আসে। ‘সামথিং লাইক অটো বায়োগ্রাফি’তে তিনি অভিনয় করে ‘ন্যাচারাল অভিনেতা’র উপাধি অর্জন করেন। তবে বছর না ঘুরতেই ভিন্ন রূপে তিনি হাজির। একটি স্ট্যাটাস থেকে উপদেষ্টার ‘স্ট্যাটাস’ পাওয়া এই নির্মাতা আলোচনায় এখন অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা পরিচয়ে। তার এই পদ পাওয়া নিয়ে নানা ধরনের সমালোচনা হয়েছে। কারণ অনেকের মতেই, জুলাই বিপ্লবের সময় তিনি দেশের বাইরে ছিলেন। সেক্ষেত্রে তার অবস্থান নিয়ে নিশ্চিত হওয়ার উপায় নেই। যদিও ফারুকী ও তার বন্ধুদের মতে, ফারুকীর সমর্থন ছিল সবসময়। তবে পরবর্তীকালে তার বক্তব্য ও কার্যকলাপে স্পষ্টতই সাবেক সরকারের প্রতি বিরাগ অনুভূতি প্রকাশিত হয়েছে।
সৈয়দ জামিল আহমেদ
শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক হওয়া থেকে শুরু করে নাটক বন্ধে ক্ষমা চাওয়া নিয়ে সৈয়দ জামিল আহমেদকে কম সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়নি। ডিসেম্বর মাসে বিজয় উৎসব না করে ডিসেম্বর উৎসব নামকরণ, কাওয়ালি আয়োজনসহ বিভিন্ন কাজে তাকে সমালোচনার শূলে চড়িয়েছেন বাংলাদেশের সুশীল সমাজ। সৈয়দ জামিল আহমেদ প্রতিবারই নীরবে সেসব সমালোচনা সামলে গেছেন। তবে আলোচনায় ছিলেন বছরের মধ্যভাগের পর থেকেই।
অরুণা বিশ্বাস
জুলাই বিপ্লবের পক্ষে-বিপক্ষে বিভিন্ন শিল্পী বিভিন্নভাবে কাঠগড়ায় দাঁড়ালেও বেশি সমালোচিত হওয়ার তালিকার শীর্ষে আছেন অরুণা বিশ্বাস। আন্দোলনরত ছাত্রদের ওপর ‘গরম জল’ ঢেলে দেওয়ার চ্যাটের স্ক্রিনশট ফাঁস হতেই তেঁতে উঠে দেশের সাধারণ মানুষ। একজন শিল্পীর ‘হিংসাত্মক’ মনোভাব তাদের ব্যথিত করেছে বলে অনেকেই মন্তব্য করেন। বিশেষ করে সামাজিক মাধ্যমে তাকে নিয়ে বিস্তর সমালোচনা হয়। অরুণা বিশ্বাস রাজনৈতিক পদ চাচ্ছিলেন বলে জানিয়েছেন তার একজন সহকর্মী। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, এফডিসির উচ্চপদের জন্য তদবির করছিলেন তিনি আগে থেকেই। ফলে সাবেক সরকারের সুনজরেও থাকার চেষ্টা করেছেন।
র্যাপার হান্নান
তরুণ শিল্পী হান্নানকে জুলাই বিপ্লবের সময় বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়। এর কারণ তার গান ‘আওয়াজ উডা’। এটি একটি ‘র্যাপ সং’ যা সাবেক সরকারের নৃশংসতা ও অপরাধ নিয়ে লেখা। বিপ্লবের শুরুর দিকে ১৮ জুলাই গানটি প্রকাশিত হয়ে রাতারাতি আলোচনায় চলে আসে এবং তরুণদের মন জয় করে। এর কারণে জেলও খাটতে হয় তাকে। গণমাধ্যমে তার সাক্ষাৎকার থেকে জানা যায়, বিপ্লব চলাকালে তাকে থানা থেকে ছাড়াতে পুলিশ দেড় লাখ টাকাও দাবি করে। পরে সরকার পতন হলে ৬ আগস্ট তিনি মুক্তি পান। এখন তারুণ্যের বিপ্লবী মুখ এই হান্নান, যাকে অন্যতম সফল ‘যোদ্ধা’ বলছেন নেটবাসীরা।
দীপ্তি চৌধুরী
উপস্থাপনা থেকে শিরোনামে পরিণত হন দীপ্তি চৌধুরী। একটি বেসরকারি চ্যানেলে টক শো উপস্থাপনা করার সময় আলোচনায় আসেন তিনি। সেই শো’তে তার অতিথি সাবেক সরকারের পক্ষে উপস্থিত হওয়া সাবেক বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক রূঢ় আচরণ করলে সেটি আলোচনায় চলে আসে। উপস্থাপক হিসেবে দৃঢ়তা সেদিনের পর থেকে দীপ্তির শক্তিতে পরিণত হয়েছে বলে সামাজিক মাধ্যমে বলাবলি করেনে নেটিজেনরা। বর্তমানে দীপ্তি আরও কয়েকটি অনুষ্ঠানসহ জুলাই কনসার্টও সঞ্চালনা করছেন।
দিলশাদ নাহার কণা
দীর্ঘদিন পর একটি প্লে-ব্যাক যেন নিয়ে এসেছে কণাকে নতুন করে। তুফান সিনেমায় দুষ্টু কোকিল গান দিয়ে তার কামব্যাক ছিল নজরকাড়া। দুই বাংলাতে মিমি চক্রবর্তীর লিপসিংয়ে এই গান ছড়িয়ে পড়ে।
সাফা কাবির
১৯ জুলাই পথে নেমে ছাত্রদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে আলোচনায় আসেন সাফা কবির। তার প্রশ্ন তরুণ শিল্পীদের মনে আলোড়ন জাগায়। তিনি বলেন, ছাত্ররা কেন মারা যাবে? এরপর থেকে জুলাই বিপ্লবে তিনি ছিলেন সরব। পাশাপাশি ছাত্রদের পাশে তিনি ছিলেন সড়ক নিয়ন্ত্রণের সময়েও। হালে তাকে নিয়ে একটি নেতিবাচক শিরোনাম হলেও নেটিজেনরা বলছেন, তার সংগ্রামের কারণে কারও কারও বিদ্বেষের কেন্দ্রে পৌঁছেছেন বলেই এই হেনস্তা।