বাংলাদেশের জন্য ২০২৪ সাল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন দিক বিবেচনায়। যার মাঝে অন্যতম হলো কনসার্টের আয়োজন। এই বছর একাধিক কনসার্টে দেশি-বিদেশি শিল্পীরা বিভিন্ন ভেন্যুতে দর্শক নাচিয়েছেন। তা ব্ল্যাকের রিইউনিয়ন হোক কিংবা গুরু জেমন, অঞ্জন দত্ত বা আতিফ আসলাম হোক।
ভারতীয় শিল্পী, বিশেষ করে অঞ্জন দত্ত ও নচিকেতার একাধিক ভ্রমণে বাংলাদেশের অবস্থিত তাদের ভক্তদের তৃষ্ণা খানিকটা মিটেছে বলে ধারণা অনেকের। তবে ২০২৪ সালে আলোড়ন তুলেছে পাকিস্তানি শিল্পীদের আনাগোনা।
২০২৪ সালের শুরুতেই আতিফ আসলাম ও পাকিস্তানি ব্যান্ড জাল আসবে— এমন গুঞ্জনে মিডিয়া পাড়া সরগরম হয়ে ওঠে।
সাত বছর আগে, তথা ২০১৬ সালে ঢাকায় এসেছিলেন পাকিস্তানের সংগীতশিল্পী আতিফ আসলাম। ‘রিদম ফর অল উইথ আতিফ আসলাম নাইট লাইভ ইন ঢাকা’য় পারফরম করেন তিনি। এর আগে ২০১৩ সালে বিপিএলের উদ্বোধনী আয়োজনে অংশ নেন আতিফ।
২০২৪ সালে দুইবার কনসার্ট করে গেলেন আতিফ। একটি ছিল উষ্ণতায় ভরা, আরেকটি কুয়াশায় জমজমাট। ৮ এপ্রিল প্রথম কনসার্টের কথা জানান আয়োজক প্রতিষ্ঠান ব্লুজ কমিউনিকেশনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরহাদুল ইসলাম। পাশাপাশি আতিফও নিজের সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট থেকে তা নিশ্চিত করেন। এরপর ১৯ এপ্রিল ঢাকার একটি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে তার কনসার্টটি অনুষ্ঠিত হয়। প্রচণ্ড গরমেও তার পারফরমেন্সের ছটা স্বস্তি ছড়িয়ে দেয়।
সবাইকে অবাক করে দিয়ে ২৯ নভেম্বর আরেকটি কনসার্টের ঘোষণা দেয় আয়োজক ট্রিপল টাইম কমিউনিকেশন। ‘ম্যাজিকাল নাইট ২.০’ শিরোনামের এই কনসার্টের মধ্যমণি ফের আতিফ আসলাম। তবে এবার নির্ধারিত সময়ের দেড় ঘণ্টা বেশি পারফরম করে দর্শকের ‘পয়সা উশুল’ করিয়ে দেন আতিফ। কেননা টিকিটের দামও ছিল চড়া।
পাকিস্তানের আরেক জনপ্রিয় ব্যান্ড ‘জাল’ বছরের মাঝামাঝি বাংলাদেশে আসার ঘোষণা দেয়। ‘ও লামহে’ শিরোনামে যে গানটি আতিফ ও ‘জাল’ দুই পক্ষই সমানভাবে আত্মস্থ করেছে— সেই ব্যান্ডের সদস্য আতিফ নিজেও ছিলেন। তবে সেই গল্প প্রায় ইতিহাস এখন। ‘জাল’ স্বমহিমায় আছে প্রায় দুই দশক ধরে। ২০১০ সালে ঢাকায় পারফর্ম করেছিল ব্যান্ডটি। ১৪ বছর পর ‘জাল’ ব্যান্ডের ভোকালিস্ট গহর মমতাজ তাদের সফরের কথা উল্লেখ করেন। সেটি ছিল বছরের শুরুর দিকের কথা। এরপর দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বদলে যাওয়ায় জালের আর আসা হয়নি। পরে সেপ্টেম্বরে ঢাকায় একটি কমার্শিয়াল ভেনুতে পারফর্ম করে। বৃষ্টিজনিত জটিলতায় পূর্বাচলের ভেনু বদলে ফেলায় নিরাপত্তা ইস্যু নিয়ে আয়োজকদের সমালোচনার শিকার হতে হয়। এই কনাসের্টর আয়োজক ছিল অ্যাসেন, জির্কোনিয়াম, ইন এফিলিয়েশন উইথ রুটওভার এক্সপিরিয়েন্স। ‘লিজেন্ডস অব দ্য ডিকেড’ শিরোনামের কনসার্টে আরও পারফর্ম করেন সুমন ও অর্থহীন। সুমনের ‘কামব্যাক’ হিসেবে এই কনসার্ট সকলের হৃদয় জয় করে নেয় সমালোচনার পরও।
রাজনৈতিক প্রেক্ষপটের দোলাচলের তুঙ্গে থাকা অবস্থায় ঢাকা সফরে আসার কথা ছিল রাহাত ফতেহ আলী খানের। জুলাইয়ের ১১ তারিখে তিনি ঘোষণা দেন ঢাকা সফরের। এরপর উত্তাল ঢাকার স্রোতে ২০ তারিখের নির্ধারিত কনসার্টটি স্থগিত করে দিতে হয় আয়োজকদের। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের জন্য সেবার আসা হয়নি, সেই ছাত্র-জনতাই ডিসেম্বরে তাকে নিয়ে আসে। ২১ ডিসেম্বর তিনি একটি চ্যারিটি কনসার্টে অংশ নেন। ‘ইকোস অব জুলাই স্পিরিট’ শিরোনামের এই কনসার্টের আয়োজক জুলাই আপরাইজিং প্লাটফর্ম। তিনি বিনা পারিশ্রমিকে পারফরম করেন কনসার্টে। ‘আফরিন আফরিন’, ওরে পিয়া’ গান ছাড়াও চমক ছিল তার পুত্রকে মঞ্চে অভিষেক ঘটানো। বাংলাদেশে প্রথম পারফর্ম করলেন রাহাতপুত্র শাজমান খান। ঠিক যেন ফ্রেমবন্দি পরফরমেন্স। কুয়াশায় ঘেরা সবচেয়ে বড় রাতে রাহাতের গানের তালে মাতলো মাঠভর্তি দর্শক। তবে ২৩ ডিসেম্বর বিপিএল ২০২৪ এর উদ্বোধনী আয়োজনে তার পারফরম্যান্স পারিশ্রমিকহীন নয়। চড়া মূল্যই বলা চলে, নেন বাংলাদেশি মুদ্রায় ৩ কোটি চল্লিশ লাখ টাকা।
এর আগে পাকিস্তানি ব্যান্ড সাইওনি-খ্যাত ‘জুনুন’ একধিকবার পারফর্ম করে গেছে ঢাকায় বুকে। সর্বশেষ তাদের ২০১৯ সালে ঢাকায় আয়োজিত ফোকফেস্টে দেখা গেছে।
তবে বরাবরের মতোই পারিশ্রমিক নিয়ে কথা উঠেছে সচেতন নাগরিকের মাঝে। বিদেশি শিল্পীর পারফরমেন্স দেশে বসে উপভোগ করার পাশাপাশি রাজস্ব কর ঠিক মতো প্রদান করা হচ্ছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে নেটদুনিয়াতে। যদিও আয়োজকদের দাবি, সরকারি নিয়ম মেনেই শিল্পীদের আহ্বান করা হয়। তবুও আরও স্বচ্ছতা চান দেশের নাগরিক সম্প্রদায়। তা শুধু পাকিস্তানের শিল্পীর জন্য নয়, সকল বিদেশি শিল্পীর জন্যই।