Home সর্বশেষ ব্লগ লেখক থেকে দেশের শীর্ষ ফ্রিল্যান্সার

ব্লগ লেখক থেকে দেশের শীর্ষ ফ্রিল্যান্সার

ইকবাল হোসেন
২০৭ views

বাংলাদেশের একজন সেরা সফল ফ্রিল্যান্সারের নাম আতিকুর রহমান। ২০১০ সালে ব্লগ লেখার মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু হলেও আজ ফ্রিল্যান্সিংয়ে একজন পথ প্রদর্শক।

আতিকুর রহমান ২০১০ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইবার ক্যাফেতে এইচটিএমএল, সিএসএস শেখার জন্য ব্লগ লিখতে শুরু করেন। তখন তার নিজের কম্পিউটার ছিল না। কিছু দিনের মধ্যে, তিনি নিজের নামে একটি ব্লগ সাইট তৈরি করেন এবং গুগল অ্যাডসেন্স এবং মাইক্রো সাইটগুলোতে কাজ শুরু করেন।

তারপরে তিনি নিজের টাকায় একটি কম্পিউটার কিনেছিলেন। এরপর থেকে আর পিছেনে ফিরে তাকাতে হয়নি আতিকুরকে। এখন তিনি একজন পেশাদার ওয়েব ডেভলপার এবং ফ্রিল্যান্সার। একজন সফল ফ্রিল্যান্সার হিসাবে তার অভিজ্ঞতা ও যাত্রা সাফল্যের এক অনন্য উদাহরণ। ফাইবার ছাড়াও তিনি বর্তমানে আপওয়ার্কে দেশের শীর্ষ ফ্রিল্যান্সার হিসাবে কাজ করেছেন।

তিনি বলেন, ‘২০১১ এর শেষে আমি জাভাস্ক্রিপ্ট, পিএইচপি, জেকুয়েরি এবং বিশেষত ওয়ার্ডপ্রেস সফটওয়্যার সম্পর্কে দক্ষতা বাড়ানোর পাশাপাশি আপওয়ার্ক (পুরাতন ওডেস্ক) নিয়ে কাজ শুরু করি। ২০১৩ সালে ফাইবারের সঙ্গে কাজ শুরু করেছি  এবং ২০১৬ সালে, আমার প্রতিষ্ঠান ‘এবিসি থিম’ প্রতিষ্ঠা করেছি এবং এনভাটো মার্কেটে (থিমফোরেস্ট) প্রিমিয়াম ওয়ার্ডপ্রেস থিম বিক্রি করছি।’

আতিক ক্লায়েন্টদের জন্য, বিশেষত ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েবসাইটগুলোর জন্য বিভিন্ন ওয়েবসাইট তৈরি করেন এবং ওয়েবসাইট সম্পর্কিত সমস্যাগুলোও সমাধান করেন। ওয়ার্ডপ্রেস ছাড়াও, তার এইচটিএমএল৫, সিএসএস৩, জাভাস্ক্রিপ্ট, পিএইচপি, জেকুয়েরি ভাল দক্ষতা রয়েছে। তিনি জাভাস্ক্রিপ্টের ইএ৬ শিখেছেন। তিনি আপওয়ার্ক এবং ফাইবারে সাড়ে ৭ হাজারের বেশি প্রজেক্ট শেষ করেছেন। ফাইবারে তিনি আমাদের দেশের প্রথম শীর্ষ দুই সফল ফ্রিল্যান্সারের মধ্যে ছিলেন। 

ফ্রিল্যান্সিংয়ে আসার কারণ

জানতে চাইলে আতিক বলেন, তিনি ফ্রিল্যান্সিং পছন্দ করেছেন কারণ এই খাতে কাজ করা তাকে আনন্দ দেয়। তবে প্রথমে এটিকে নিজের ক্যারিয়ার বানানোর কোনও পরিকল্পনা তার ছিল না, ধীরে ধীরে আরও উন্নতি করার পরে তিনি এটিকে ক্যারিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছেন। পরিবারের একমাত্র ছেলে হওয়ায় তিনি তার পরিবারের উপার্জনেও অবদান রাখতে চেয়েছিলেন। 

আতিক বলেন, ‘আমি যখন আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষে ছিলাম, তখনই মাসে ৭০ হাজার টাকা উপার্জন করছিলাম। কিন্তু ফ্রিল্যান্সিং ছাড়া চাকরির শুরুতেই কোনও কাজে এতো বেশি আয় করা সম্ভব না। তাই সর্বোপরি, কাজ, স্বাতন্ত্র্য এবং ভাল আয়ের জন্য আমি ফ্রিল্যান্সিংকে আমার ক্যারিয়ার হিসাবে বেছে নিয়েছি।’

সফল ফ্রিল্যারের শুরুটা ছিল চ্যালেঞ্জিংয়ের

আতিকুরের শুরুটা কিছুটা চ্যালেঞ্জিং ছিল। ২০১০-১১ সালে এমন কোনও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ছিল না যা থেকে কেউ ফ্রিল্যান্সিং শিখতে পারে। অনলাইন ডেটা এখনকার মতো সজ্জিত ছিল না। অনেকে প্রথমে বিষয়টি বিবেচনা করে নেননি। এত কিছুর পরেও তিনি নিজের কাজে আত্মবিশ্বাসী ছিলেন এবং কাজের জন্য আবেদন করেছিলেন। আতিকুর তার ইচ্ছা শক্তি, সততা এবং কঠোর পরিশ্রম দিয়ে এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করেছেন। এখন অবশ্যই এই পথটি অনেক সহজ হয়ে গেছে, বাংলাদেশ সরকার সফল ফ্রিল্যান্সারদের পাশাপাশি নতুনদের পথ সহজ করার জন্য অনেক উদ্যোগ নিয়েছে।

তিনি বলেন, ‘যখন আমি বিভিন্ন ব্লগে নিবন্ধগুলো পড়ি, ইউটিউবে বিভিন্ন ভিডিও টিউটোরিয়াল দেখেছি, তাদের কথা শুনেছি, তাদের সাফল্য দেখেছি এবং নিজেকে অনুপ্রাণিত করেছি। আমার পরিবার সবসময় আমাকে একজন সফল ফ্রিল্যান্সার হতে সহায়তা করেছে।’

কাজের ক্ষেত্র, দক্ষতা ও সমস্যা

আতিক বর্তমানে আপওয়ার্ক এবং ফাইবারে সফল ফ্রিল্যান্সার এবং থিমফোরেস্টে লেখক হিসাবে কাজ করছেন। কাজের দক্ষতা বিকাশ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমি প্রতিদিন ২-৩ ঘন্টা নতুন কিছু শেখার চেষ্টা করি। আমি ইতিমধ্যে যে কোনও নতুন ওয়েব ভাষা, বা আমার পরিচিত বিষয়গুলোর বুনিয়াদিগুলোর উন্নত স্তরগুলো শিখতে চেষ্টা করছি। প্রত্যেক সফল ফ্রিল্যান্সারকে এই জিনিসগুলো অনুসরণ করা উচিত।’

ফ্রিল্যান্সিংয়ের সমস্যা সম্পর্কে  আতিক বলেন, ‘সমস্যাগুলো  বেশিরভাগ ক্লায়েন্টদের কারণে ঘটে। আর মার্কেটপ্লেসগুলোও সাধারণত ক্লায়েন্টদের পক্ষে অবস্থান নেয়। ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার সময় এই চ্যালেঞ্জগুলো বিবেচনা করা উচিত।’

atiqur

ফ্রিল্যান্সিংয়ের অর্থ দিয়ে ঢাকায় এক কোটি টাকা দিয়ে ফ্ল্যাট কিনেছেন আতিক।

 

ফ্রিল্যান্সিংয়ের সেরা দিক
স্বাধীনতা ও সাফল্য একজন সফল ফ্রিল্যান্সারের আনন্দের মূল উৎস। আতিক বলেন, ‘আপনি যখন বাজারে শীর্ষে থাকবেন তখন কাজের প্রতি আপনার আগ্রহ বাড়বে।’ আতিকুর তিন  বছরেরও বেশি সময় ধরে বাজারে শীর্ষে ছিলেন। তিনি প্রায় শতাধিক দেশের মানুষের সঙ্গে কাজ করেছেন, এটি তার জীবনের একটি উল্লেখযোগ্য অর্জন। স্বাধীনতার পাশাপাশি, সফল ফ্রিল্যান্সাররা দ্রুত আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে উঠতে পারে এবং সহজেই পরিবারের চাহিদা মেটাতে পারে। আতিক ফ্রিল্যান্সিং এর অর্থ দিয়ে গত বছর ঢাকায় এক কোটি টাকা দিয়ে একটি বিশাল ফ্ল্যাট কিনেছেন। 

ক্লায়েন্টকে খুশি রাখতে ৩ পরামর্শ
১) কাজ বুঝে কোনও কাজের জন্য আবেদন করা: আপনি কাজটি ভালভাবে করতে পারবেন এবং ক্লায়েন্টের চাহিদা পূরণ করতে পারবেন – এই বিষয়টি নিশ্চিত করার পরে আপনাকে চাকরির জন্য আবেদন করতে হবে।

২) যোগাযোগ: ক্লায়েন্টদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা, প্রতিদিনের কাজের আপডেটগুলো সরবরাহ করা এবং কাজটি কখন শেষ হবে তার ধারণা ক্লায়েন্টকে দেওয়া – এগুলো ভালো অভ্যাস। এগুলোর চর্চা করতে হবে।

৩) বিতরণ: সময়মতো কাজ সরবরাহ করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। যদি কোনও প্রজেক্ট বেশি সময় নেয়, ক্লায়েন্টকে আগেই জানিয়ে দেওয়া উচিত এবং সময় বাড়ানো উচিত।

নতুনদের জন্য পরামর্শ
নতুন ফ্রিল্যান্সারদের প্রথমে ভয়- আমার কী হবে? আমি কি বাজারে সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হব? আতিক নতুনদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনার নিজের সম্পর্কে অবশ্যই আত্মবিশ্বাসী হতে হবে। পর্যাপ্ত কাজের দক্ষতা, ধৈর্য, ​​হাল না ছাড়ার আকাঙ্ক্ষা থাকলে আপনি অবশ্যই বাজারে কাজ পাবেন’। এছাড়াও তিনি যোগাযোগ দক্ষতা উন্নত করারও পরামর্শ দেন।

ভবিষ্যতের লক্ষ্য
কাজ করার পাশাপাশি আতিকুর দেশে ফ্রিল্যান্সারদের মান বাড়ানোর লক্ষ্যে কাজ করার চেষ্টা করছেন এবং ভবিষ্যতেও এ কাজ চালিয়ে যাওয়ার আশা করছেন। তিনি তার ইউটিউব চ্যানেলে বিভিন্ন ভিডিও এবং তার ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট devatiq.com এ বিভিন্ন নিবন্ধ তৈরি করেন। তিনি বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তম এবং স্বীকৃত ফেসবুক গ্রুপ ‘ফাইভার হেল্প বাংলাদেশ’ এর সিনিয়র অ্যাডমিন। এই গ্রুপে বর্তমানে কয়েক লাখ সদস্য রয়েছে। প্রায় সব গ্রুপ সদস্য ফ্রিল্যান্সিংয়ের সঙ্গে  জড়িত।

আতিক বলেন, ‘ভবিষ্যতে, আমি আমার ওয়েবসাইট থেকে বিনামূল্যে অ্যাডভান্স ওয়েব ডেভলপমেন্ট কোর্স অফার করতে চাই। ভবিষ্যতে কিছু লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার জন্য একটি সফটওয়্যার ফার্ম আর একটি রেস্তোঁরা ব্যবসা দেবার ইচ্ছাও আছে।’

দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে আজ আতিকুর রহমান একজন সফল ফ্রিল্যান্সার। তিনি বর্তমানে আরও কয়েক হাজার ফ্রিল্যান্সারকে তার মতো সফল হতে সহায়তা করছেন। তিনি শুধু নিজেই এগিয়ে যান নি। এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন সমাজকে। এগিয়ে নিচ্ছেন দেশকেও।

 

আরও যা পড়তে পারেন

কমেন্ট করুণ