প্রতিদিনের ব্যস্ততার মধ্যে নিজের জন্য কতটা সময় বের করা সম্ভব? সারা জীবন ৯টা-৫টা কাজ করে অবসর নেওয়ার পর হঠাৎ নিজের জন্য অনেকটা ফাঁকা সময় পেয়ে যান সবাই। কিন্তু হঠাৎ অফুরন্ত সময় পেয়ে অনেকে আবার অস্তিত্ব সঙ্কটেও ভোগেন। নিত্যদিনের রুটিন এলোমেলো হয়ে পড়ে।
শুরুর দিকে কয়েক দিন ছুটি উপভোগ করলেও, দিন গড়ানোর সাথে সাথে অনেকেরই মনে চেপে বসে একাকিত্ব। নিস্তেজ শরীর, তার ওপর আচমকা বাইরের জগৎ থেকে দূরত্ব তৈরি হওয়া সব মিলিয়ে মনের ওপর চাপ তৈরি হওয়া স্বাভাবিক। অবসর জীবন মানেই কিন্তু হতাশায় বাঁচা নয়, তার চেয়ে দৈনন্দিন যাপন একটু বদলে নিন।
নতুন অভ্যাস তৈরি করে বাঁচতে পারেন প্রাণভরে। এতো দিন কাজের চাপে যদি জীবনসঙ্গীকে সময় না দিতে পারেন, তবে এখন দুজন মিলে নতুন করে আনন্দে কাটান। অবসর জীবন রঙিন করে তুলতে রইল কিছু টিপস।
শিখতে পারেন নতুন কিছু
বাড়িতে বসে বসে দিন না কাটিয়ে নতুন কিছু শেখার চেষ্টা করুন। নতুন ভাষা শিখতে পারেন, ছবি তোলা শিখতে পারেন, কোনও বাদ্যযন্ত্র বাজাতে শিখতে পারেন। শেখার কোনও বয়স হয় না। আর বয়স হয়েছে বলেই অপেক্ষাকৃত তরুণদের সঙ্গে কিছু শিখতে গিয়ে লজ্জাও পাবেন না।
এতো বছর ব্যস্ততার জন্য যে কাজগুলো করতে পারেননি, অবসর সময়টি সেগুলোর জন্য ব্যবহার করতে পারেন। কারও শখ থাকে বাগান করার, কারও বা ছবি আঁকার, কারও আবার সঙ্গীতচর্চার। সেগুলোই নতুন করে চর্চা করতে পারেন। যে ভাললাগাগুলোকে কাজের চাপে হারিয়ে ফেলেছিলেন, তাতে আবার মন দিন।

অবসর জীবন মানেই কিন্তু হতাশায় বাঁচা নয়, দৈনন্দিন যাপন একটু বদলে নিন, ছবি: কিপলিঞ্জার
শরীরচর্চা করুন
অবসর নেওয়া মানেই সারা দিনে শুয়ে-বসে সময় কাটাবেন না। যতটা পারবেন বিভিন্ন ধরনের কাজকর্মে নিজেকে যুক্ত রাখুন। সকালে উঠে অল্প হাঁটাহাটি, যোগ ব্যায়াম, ধ্যান, নিঃশ্বাসের ব্যায়াম করা অভ্যাস করে ফেলুন। বাগান করা, রান্না করা, ছোটখাটো দোকানবাজার, ব্যাংকের কাজ এগুলো বন্ধ করে দেবেন না।
বিকেলে বা রাতে খাওয়ার পরও খানিক হাঁটাহাটি করে নিতে পারেন। এতে খাবার তাড়াতাড়ি হজম হয়ে শরীর সুস্থ থাকবে অনেক দিন। বাড়িতে কোনও পোষ্য রয়েছে কি? না থাকলে এবার সে বিষয়ে ভাবতে পারেন। পোষ্যের পেছনে দৌড়াদৌড়ি করেও শরীর ফিট থাকে সহজে।
বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গ লাভ
অবসর নেওয়া মানে বাকি জগতের থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেওয়া নয়। তাই বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখুন, আড্ডায় বসুন। একসঙ্গে বসে কোনও বিষয় আলোচনা করা, কোনও বই পড়া বা সিনেমা দেখার মতো কিছু কাজে নিজেদের ব্যস্ত রাখতে পারেন। পরিবারের ছোটদের সঙ্গে আড্ডা দিন।

বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখুন, আড্ডা দিন, ছবি: সেকেন্ড উইন্ড মুভমেন্ট
অনেক সময়ে বাড়ির খুদেরাও নানা রকম মজার নতুন জিনিস আমাদের শেখাতে পারে। বন্ধু বা সাবেক সহকর্মীদের সঙ্গে কোথাও বেড়াতেও যেতে পারেন দলবেঁধে। এতে শরীর-মন ভাল থাকবে। অবসরের যন্ত্রণা ভুলে যেতে সময় লাগবে না। জীবন হবে চাঙা।
ঘুরতে বেরিয়ে পড়ুন
ঘোরার শখ থাকলে স্বামী-স্ত্রী মিলে বেরিয়ে পড়ুন। ভ্রমণপিপাসুদের জীবনে সবচেয়ে উপভোগ্য মনে হবে এটাই। এখন অনেক সংস্থা বয়স্কদের নিয়ে ভ্রমণ করেন। একা যেতে ভরসা না হলে, তেমন কোনও ভ্রমণ সংস্থার সঙ্গে ঘুরে আসতে পারেন। এ ছাড়া পরিবার কিংবা বন্ধুবান্ধবকে সঙ্গে নিয়েও ভ্রমণের পরিকল্পনা করতে পারেন।
সমাজ সেবা
অবসরে সামাজিক কাজেও সময় দিতে পারেন। দুঃস্থ শিশুদের পড়ানো বা তাদের আঁকা শেখানো, সামাজিক উন্নয়নে কাজ করা, কোনও সেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হতে পারেন। এছাড়াও নিজের ভাল লাগা থাকলে, পত্রিকা প্রকাশ, নাটক ও সাংস্কৃতিক দলের সঙ্গে যোগ দিয়ে কাজ করতে পারেন। পাড়ার ধর্মীয় কাজের দায়িত্বও ভাগ করে নিতে পারেন। সূত্র: আনন্দবাজার