প্রতি বছর ২৫ ডিসেম্বর খ্রিস্টানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ক্রিসমাস বা বড় দিন পালিত হয়। পাশ্চাত্য সংস্কৃতির দেশগুলোতে ধুমধাম করে পালিত হয় এই উৎসব। বিশ্বজুড়েই ছুটি থাকে এই দিন। ক্রিসমাসকে স্বাগত জানাতে অনেকে সান্তার মতো পোশাক পরেন। হলে হলে মুক্তি পায় নতুন সিনেমা। শিশুদের উপহার বিতরণ করে খুশির মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেন সান্তা ক্লজ।
সান্তা ক্লজ আসলে দেখতে কেমন ছিলেন তা কেউই জানে না। বিশ্বজুড়ে এতো জনপ্রিয় হওয়া সত্ত্বেও এতোদিন সান্তা ক্লজের কোনো নির্ভুল চিত্র ছিল না। কিন্তু এবার সামনে এসেছে সান্তাক্লজের আসল চেহারা। ফেসিয়াল রিকনস্ট্রাকশন বিশেষজ্ঞ সিসেরো মোরাইস এই প্রকল্পে নেতৃত্ব দেন।
সেন্ট নিকোলাসই সান্তাক্লজ
সান্তাক্লজ আসলে ছিলেন একজন বিশপ; যার নাম ছিল সেন্ট নিকোলাস। তিনি চতুর্থ শতকের একজন গ্রিক খ্রিস্টান বিশপ ছিলেন। বর্তমান তুরস্কের মায়রা অঞ্চলে বাস করতেন। আনুমানিক ২৭০ খ্রিষ্টাব্দে পাতারা শহরে জন্মগ্রহণ করা সেন্ট নিকোলাস দানশীলতা ও দয়ার জন্য খ্যাত ছিলেন।
দরিদ্রদের সাহায্য করা ও গোপনে দান করার অসংখ্য ঘটনা তাকে মানুষের মনে জায়গা করে দেয়। তিনি তিনজন দরিদ্র বালিকার বিয়ের জন্য তাদের বাবাকে গোপনে স্বর্ণমুদ্রা উপহার দেন। ৬ ডিসেম্বর, ৩৪৩ খ্রিস্টাব্দে তার মৃত্যু হয়। পরে এই দিনটি সেন্ট নিকোলাস দিবস হিসেবে পালিত হতে থাকে। ইউরোপজুড়ে সেন্ট নিকোলাসের এই দানশীল চরিত্রটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে ও বিভিন্ন সংস্কৃতিতে রূপান্তরিত হয়।
কল্পিত চরিত্র
আধুনিক সান্তা ক্লজ হলেন একটি কল্পিত চরিত্র। যিনি বড়দিনে শিশুদের জন্য উপহার নিয়ে আসেন। লাল পোশাক, সাদা দাড়ি, আর হরিণ টানা স্লেজগাড়িতে চড়ে তিনি এখন বিশ্বজুড়ে শিশুদের আনন্দের প্রতীক হয়ে উঠেছেন।
উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে তার মুখের গঠন নির্ধারণ করা হয়েছে, ছবি: নিউ ইয়র্ক পোস্ট
সেন্ট নিকোলাস তার উদারতা ও উপহার বিতরণের জন্য সবার কাছে পরিচিত ছিলেন। তার মানবিকতা পরে ডাচদের সেন্টারক্লাস ও পরে ইংরেজদের ফাদার ক্রিসমাসের সঙ্গে মিলিত হয়ে রূপ নেয় সান্তাক্লজের।
মুখমণ্ডল পুনরায় নির্মাণ
গবেষণা দলের প্রধান সিসেরো মোরাস জানান, ১৯৫০ সালে লুইজি মার্টিনোর সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে একটি মডেল তৈরি করা হয়। পরে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে তার মুখের গঠন নির্ধারণ করা হয়েছে। যে মুখমণ্ডল তৈরি হয়েছে গবেষণা থেকে তার সঙ্গে মিল রয়েছে ১৮২৩ সালের একটি বিখ্যাত কবিতা ‘এ ভিজিট ফর্ম সেন্ট. নিকোলাস’-এর। ছবিতে সান্তার ঘন দাড়ি রয়েছে, যার সঙ্গে কল্পিত সান্তাক্লজের মিল রয়েছে অনেকাংশেই।
সান্তা ক্লজ নামে পরিচিত সেন্ট নিকোলাস অব মায়রার মুখমণ্ডলের একটি ছবি প্রকাশ করেছেন বিজ্ঞানীরা। নিকোলিয়ান স্টাডি সেন্টারের অনুমতি নিয়েই সান্তাক্লজের ত্রিমাত্রিক মুখমণ্ডলের ছবি তৈরি করা হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানটি সেন্ট নিকোলাসকে নিয়ে কাজ করে।
আধুনিক সান্তা ক্লজ হলেন একটি কল্পিত চরিত্র, ছবি: ফ্রিপিক
মোরাইস জানান, তাদের প্রচেষ্টার ফলাফল হিসেবে দুটি ছবি তৈরি হয়েছে। একটি ধূসর রঙের বাস্তবসম্মত ছবি এবং অন্যটি আরও শিল্পসম্মত, যেখানে সেন্ট নিকোলাসের দৈহিক বর্ণনা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে দাড়ি ও পোশাক যোগ করা হয়েছে।
মাথাব্যথা ছিল নিকোলাসের
বিজ্ঞানীদের মতে, তার মাথার খুলি ছিল শক্ত ও শক্তিশালী। সেই সাথে তার ঘন ঘন মাথাব্যথা ছিল। মেরুদণ্ডসহ হাড়ে দীর্ঘস্থায়ী বাত ছিল তার। খাবার হিসেবে তিনি অধিক পরিমাণে শাক-সবজি খেতেন। তাই তার জীবনী শক্তি ভালো ছিল বলেও মনে করছেন গবেষকরা।
গবেষকরা বলছেন, সেন্ট নিকোলাসকে প্রাথমিকভাবে মায়রা বা আধুনিক তুরস্কে সমাহিত করা হয়েছিল, তার হাড়গুলো পরে ইতালির বারিতে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল, যেখানে সেগুলো আজও রয়েছে।
তথ্যসূত্র: নিউ ইয়র্ক পোস্ট ও বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড
