কোরবানির ঈদ আমাদের কাছে এক আনন্দ, ত্যাগ ও ভাগাভাগির উৎসব। এ সময় পরিবারের সবাই একত্রিত হন। সুন্দর সুস্বাদু খাবারের আয়োজন হয়। আর প্রচুর মাংস খাওয়া হয়। কিন্তু বিশেষ কিছু রোগ, যেমন ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও উচ্চ কোলেস্টেরল নিয়ে যারা জীবনযাপন করছেন, তাদের জন্য এ সময় সতর্ক থাকা অত্যন্ত জরুরি।
এই উৎসবে স্বাস্থ্য ঠিক রেখে কীভাবে খাবার খাওয়া যায়, চলুন দেখে নিই কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ—
মাংস খেতে হবে সীমিত পরিমাণে
গরু, খাসি বা ভেড়ার লাল মাংসে স্যাচুরেটেড ফ্যাট বেশি থাকে। যা রক্তে কোলেস্টেরল বাড়ায়। প্রতিদিনের খাবারে ১-২ টুকরোর বেশি লাল মাংস না খাওয়াই ভালো। বিশেষ করে যাদের হৃদরোগ বা উচ্চ কোলেস্টেরল আছে। লাল মাংসের তুলনায় মুরগি বা মাছ স্বাস্থ্যকর অপশন।
চর্বি বাদ দিয়ে রান্না করুন
মাংসের গা থেকে দৃশ্যমান চর্বি (ফ্যাট) রান্নার আগে কেটে ফেলে দিন। মাংসের চর্বি সরিয়ে রান্না করলে তা অনেক স্বাস্থ্যকর হয় এবং হৃদযন্ত্রের জন্য কম ক্ষতিকর।
লবণ ও মসলা নিয়ন্ত্রণে রাখুন
কোরবানির ঈদের খাবারে সাধারণত লবণ ও মসলা বেশি থাকে। যা উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের জন্য ক্ষতিকর। অতিরিক্ত লবণ ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। বিশেষ করে যারা ব্লাড প্রেশারের ওষুধ খান।

ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও উচ্চ কোলেস্টেরল নিয়ে যারা জীবনযাপন করছেন, তাদের জন্য এ সময় সতর্ক থাকা অত্যন্ত জরুরি, ছবি; হিন্দুস্থান টাইমস।
কার্বোহাইড্রেট (চাল-রুটি) নিয়ন্ত্রণ করুন
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য মাংসের পাশাপাশি ভাত বা রুটির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। বেশি কার্বোহাইড্রেট খেলে রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যাবে। তাই অল্প পরিমাণ ভাত বা আটার রুটি খান, সাথে অনেক শাকসবজি রাখুন।
শাকসবজি ও সালাদ রাখুন প্রতিদিনের মেনুতে
শুধু মাংস নয়, খাবারের সাথে শাকসবজি, সালাদ বা দই রাখুন। এগুলো হজমে সাহায্য করে এবং অতিরিক্ত চর্বি ও কোলেস্টেরলের ক্ষতি কিছুটা কমায়।

শাকসবজি ও সালাদ রাখুন প্রতিদিনের মেনুতে, ছবি; সার্কেল ক্যাফে ডট কম।
খাবারের পর কিছু হাঁটাহাঁটি করুন
ভরপেট খাওয়ার পর শুয়ে পড়া একদমই উচিত নয়। অন্তত ২০-৩০ মিনিট হালকা হাঁটাহাঁটি করলে খাবার হজম হয় ভালোভাবে এবং শর্করা নিয়ন্ত্রণে থাকে।

খাওয়ার পর হাঁটাহাঁটির অভ্যাস হজমে সহায়তা করে এবং শর্করা নিয়ন্ত্রণেে রাখে, ছবি; এইচ সি এল হেলথ কেয়ার।
ওষুধ ও নিয়মিত চেকআপ ভুলবেন না
ঈদের আনন্দে অনেকে ওষুধ খাওয়া ভুলে যান, এটা বিপজ্জনক। আপনার নিয়মিত ওষুধ ঠিকভাবে খান এবং সম্ভব হলে ব্লাড সুগার ও প্রেসার চেক করুন।
পানি ও তরল খাবার পর্যাপ্ত নিন
ঈদে অনেকেই কোমল পানীয় বা মিষ্টি পানীয় পান করেন। যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ক্ষতিকর। এর পরিবর্তে পানি, লেবুর শরবত (চিনি ছাড়া) বা ডাবের পানি বেছে নিন।
বিশেষ সতর্কতা
যদি বুক ধড়ফড় করা, বুক ব্যথা, ঘাম, শ্বাসকষ্ট বা খুব দুর্বল লাগার মতো উপসর্গ দেখা দেয়, দেরি না করে নিকটবর্তী হাসপাতালের জরুরি বিভাগে যোগাযোগ করুন। ঈদ আনন্দের মাঝে নিজের স্বাস্থ্যকে অবহেলা করা উচিত নয়।
সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা! আনন্দে থাকুন, কিন্তু নিজের ও পরিবারের স্বাস্থ্য সচেতনতা ভুলবেন না।
লেখক: হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ কনসালটেন্ট (কার্ডিওলজি বিভাগ) নিটোর, শ্যামলী, ঢাকা।