Home স্বাস্থ্য কোরবানিতে স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে যা করবেন

কোরবানিতে স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে যা করবেন

উপমা ইসলাম রুপা
৬২ views

মুসলমানদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা বা কোরবানি ঈদ। আনন্দ, ত্যাগ আর উৎসবের আবহে ঈদুল আজহা উদযাপিত হয় দেশজুড়ে। কোরবানি শুধু আত্মত্যাগ বা পশু জবাই নয়। এর সঙ্গে পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি গভীরভাবে জড়িত। তাই মেনে চলতে হবে স্বাস্থ্যবিধি

তাই কোরবানির পশু কেনা থেকে শুরু করে জবাই পরবর্তী সময়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর বিশেষভাবে গুরুত্ব দিতে হবে । পশুর হাটে ভিড়, কোরবানির সময় সচেতনতা এবং মাংস বিতরণের সময় স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ।

পশুর হাটে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদফতরের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. এস এম হাসান মাহমুদ বলেন, পশুর হাটগুলোতে মানুষ গাদাগাদি করে ঘোরে। যার ফলে সংক্রামক রোগ সহজে ছড়িয়ে পড়তে পারে। বিশেষ করে ডেঙ্গু এবং সংক্রমণজনিত রোগের ঝুঁকি বেশি থাকে। তাই মাস্ক ব্যবহার, স্যানিটাইজার বহন ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি।
এই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বলেন, পশুর হাটে গেলে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। হাটে প্রবেশ ও বের হওয়ার সময় হাত স্যানিটাইজ করতে হবে। মোবাইল ফোন বা টাকা ধরা শেষে হাত পরিষ্কার রাখা জরুরী।

কোরবানির সময় ব্যক্তিগত সুরক্ষা বিষয়ে ডা. এস এম হাসান মাহমুদ বলেন, কোরবানি দেওয়ার সময় সঠিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকলে ইনফেকশন, কাটাছেঁড়া বা অন্যান্য স্বাস্থ্যঝুঁকি হতে পারে। অনেকেই হাতে গ্লাভস ছাড়াই পশু জবাই করেন। যা রক্ত থেকে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়। তাছাড়া ধারালো অস্ত্র ব্যবহারে সাবধান থাকা দরকার।

কোরবানির সময় গ্লাভস ও মাস্ক পরতে হবে। শিশুদের কোরবানির স্থান থেকে দূরে রাখুন। জবাই ও কাটা শেষে হাত ও ব্যবহার্য যন্ত্রপাতি সাবান দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন।

কোরবানির পশু জবাইয়ের আগে কিছু স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়িয়ে চলার বিষয়ে বিশেষভাবে নজর রাখার পরামর্শ দিয়েছেন ভেটেরিনারী চিকিৎসক ডা. শেখ আলী ইফরান। তিনি বলেন, অনেকে বেশি মুনাফার আশায় অল্প সময়ের মধ্যে কোরবানির পশু মোটাতাজাকরণ করতে বিভিন্ন ক্ষতিকর স্টেরয়েড ব্যবহার করছেন। যা মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াচ্ছে। মোটাতাজা করতে বিভিন্ন ঔষধ ব্যবহার করা হচ্ছে। যার নির্দিষ্ট প্রত্যাহারকাল থাকলেও তা মেনে না চলার কারণে সেইসব ঔষধের ক্ষতিকর প্রভাব মানুষের মধ্যেও পড়ছে।

সে কারণে ঈদে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই পশু ক্রয় ও কোরবানি করতে হবে। অনেক গবাদিপশু বিভিন্ন সংক্রামক রোগসহ জটিল রোগে আক্রান্ত থাকে যেমন জলাতঙ্ক, ব্রুসেলোসিস, এনথাক্স সহ মারাত্নক জুনোটিক কিছু রোগ। যা জবাইয়ের আগে সনাক্ত না হলে মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বহুগুণে বাড়িয়ে দিবে।

ছুড়ি কাঁচি অবশ্যই জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে এবং সর্তকর্তার সাথে ব্যবহার করতে হবে। কারণ এগুলো দ্বারা ক্ষত তৈরি হলে সেপসিস সহ সংক্রমণ হ‌ওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। মাংস প্রসেসিং করার সময় অবশ্যই গ্লাবস মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। তাহলে অনেক জটিল রোগের ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব।

পরিচ্ছন্নতা ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা
পশুর বর্জ্য অপসারণ না করলে তা শুধু গন্ধ নয়, স্বাস্থ্যঝুঁকিও তৈরি করে। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের একজন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জানান—
অনেকেই বর্জ্য পলিথিনে না মুড়িয়ে খোলা জায়গায় ফেলে রাখেন। যা জীবাণু ছড়াতে সাহায্য করে। এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট জায়গায় বর্জ্য ফেলে সিটি কর্পোরেশনের গাড়িতে তুলে দেয়া উত্তম। পশুর রক্ত ও বর্জ্য পরিষ্কার করতে ব্লিচিং পাউডার ব্যবহার করুন। বর্জ্য পলিথিনে ভরে নির্দিষ্ট স্থানে রাখুন। পানি ছিটিয়ে রাস্তায় জীবাণুনাশক দিন।

মাংস বিতরণে সচেতনতা জরুরি
কোরবানির ঈদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক মাংস বিতরণ। কিন্তু এই ধাপে অনেকেই সচেতনতা হারান। বেশিরভাগ মানুষই মেনে চলেন না কোন প্রকার স্বাস্থ্যবিধি। অনেকে গরম মাংস পলিথিনে ঢুকিয়ে দীর্ঘক্ষণ বাইরে রাখেন। যা ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে সহায়তা করে। এক্ষেত্রে মাংস ঠান্ডা করে তবেই প্যাকেট করুন। ভাল মানের পলিব্যাগ ব্যবহার করুন। বিতরণের সময় গ্লাভস ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন।

প্রতিটি উৎসবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা আমাদের অভ্যাসের অংশ। ঈদুল আজহার প্রকৃত শিক্ষা হলো ত্যাগ, সংযম ও সচেতনতা। তাই এ উৎসব শুধু আনন্দের নয়, হোক নিরাপত্তা ও যত্নের প্রতিচ্ছবি।

আরও যা পড়তে পারেন

কমেন্ট করুণ