যতই দিন গড়াচ্ছে ততই জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে পরিবেশের ওপর। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বিশ্বের বৃহত্তম দ্বীপ গ্রিনল্যান্ডের জমাটবাঁধা বরফে। আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় দ্রুত ফেটে যাচ্ছে এই বরফ খণ্ড।
জমাট বরফের পৃষ্ঠ কি পরিমানে ফাটছে বা এর বিবর্তন পরিমাপ করতে বাণিজ্যিক স্যাটেলাইট থেকে ৮ হাজার ত্রিমাত্রিক হাই রেজুলেশনের মানচিত্র ব্যবহার করেন বিজ্ঞানীরা। ২০১৬ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে এই উচ্চমাত্রার ত্রিমাত্রিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে এমন তথ্য পেয়েছেন গবেষকরা।
২০১৬-২১ এই পাঁচ বছরে গ্রিনল্যান্ডের জমাটবাঁধা বরফের আকার ও গভীরতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। গবেষণা বলছে, অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে দ্রুত গতিতে বরফ গলে যাচ্ছে। এতে বেড়ে যাচ্ছে সমুদ্রের পানি। বিরুপ প্রভাব পড়ছে উপকূলীয় এলাকায়।
গবেষণা দলের প্রধান ও ব্রিটেনের দারহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোলের সহকারী অধ্যাপক ড. টম চুডলি বলেন, গ্রিনল্যান্ডের জমাটবাঁধা বরফে ফাঁটল ধরার এমন দৃশ্য আমাদের অবাক করেছে। কারণ এর আগের একটি গবেষণায় দেখা যায় ১০ বছর পর পর যে পরিমাণ ফাটল দেখা গেছে এবার ৫ বছরের মধ্যেই সেই পরিমাণ ফাটলের দৃশ্য দেখা যায়।
১৯৯০ সাল থেকে গ্রিনল্যান্ডের জমাটবাঁধা ফাটল পরিমাপ করছেন গবেষকরা। এর দুই বছর পর ১৯৯২ সাল থেকে গ্রিনল্যান্ড সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কথা জানান তারা। গবেষকদের মতে, গ্রিনল্যান্ডের আচ্ছাদিত বরফে ফাঁটলের কারণ উষ্ণ আবহাওয়া। উষ্ণ তাপমাত্রার কারণে একদিকে সমুদ্রের জমাটবাঁধা বরফ গলে যাচ্ছে অন্যদিকে বাড়ছে পানির উচ্চতা। উভয়ই জলবায়ু বিপর্যয়ের কারণ বলে জানান গবেষক ড. টম।
জলবায়ুর বিরুপ প্রভাবের কারণে যেভাবে সমুদ্রের জমাটবাঁধা বরফ গলতে শুরু করেছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে ২১০০ সালের মধ্যে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা এক মিটার বৃদ্ধি পাবে আর ২৩০০ সালের মধ্যে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে দাঁড়াবে ১০ মিটার। পরবর্তী তিন শতাব্দী সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির পরিকল্পনা, প্রশমন ও তার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিতে হবে মানুষকে। তাই জলবায়ূ স্বাভাবিক রাখলে এই সংকট কিছুটা কাটিয়ে উঠা সম্ভব হবে বলে মনে করেন পরিবেশবিদরা।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান