Home পরিবেশ মার্শাল দ্বীপপুঞ্জকে সামুদ্রিক অভয়ারণ্য ঘোষণা

মার্শাল দ্বীপপুঞ্জকে সামুদ্রিক অভয়ারণ্য ঘোষণা

মোহাম্মদ রবিউল্লাহ
১১৯ views

বিশ্ব ব্যাংকের উদ্বেগের পর জাতীয়ভাবে সামুদ্রিক অভয়ারণ্য ঘোষণা করেছে দ্বীপরাষ্ট্র মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ সরকার। সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে দ্বীপপুঞ্জটির জীববৈচিত্র্য চরমভাবে হুমকির মুখে পড়েছে বলে সম্প্রতি বিশ্ব ব্যাংক উদ্বেগ জানিয়েছিল। যার জন্য ২৮ জানুয়ারি প্রথমবারের মতো মার্শাল দ্বীপপুঞ্জকে জাতীয়ভাবে সামুদ্রিক অভয়ারণ্য ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।

ঘোষণায় বলা হয়েছে, উত্তরের দুইটি দ্বীপের চারিদিকের পানিতে মাছ ধরাসহ অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণি ধরা নিষিদ্ধ। এতে করে গভীর পানির সামুদ্রিক প্রাণির বাসস্থান সুরক্ষা নিশ্চিত হবে জানিয়েছে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে অবস্থিত দ্বীপরাষ্ট্র মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ সরকার। 

মা র্শাল

দ্বীপে মাছ ধরাসহ অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণি ধরা নিষিদ্ধ, ছবি: তাইপে টাইমস

দ্বীপপুঞ্জটির আয়তন ৪৮ হাজার বর্গকিলোমিটার। অভয়ারণ্যটি মার্শাল দ্বীপমালার বিকিনি প্রবাল প্রাচীরের পূর্বে অবস্থিত। ১৯৪০-৫০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখানে ২৩টি পারমাণবিক বোমা পরীক্ষা চালিয়েছিল, যা এখনও পুনরুদ্ধার হয়নি। 

মাছ

বিরল ও বিপন্ন সামুদ্রিক বন্যপ্রাণিতে পরিপূর্ণ মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ, ছবি: ডিভার নেট

সমুদ্র গবেষকরা জানান, এই অঞ্চলটি বিরল ও বিপন্ন সামুদ্রিক বন্যপ্রাণিতে পরিপূর্ণ, যার মধ্যে রয়েছে সবুজ সামুদ্রিক কচ্ছপ (চেলোনিয়া মাইডাস), নেপোলিয়ন র‍্যাসে (চেইলিনাস আনডুলাটাস) ও বাম্পহেড প্যারট ফিশ (বলবোমে টোপন মুরিক্যাটাম), কোরাল এর মতো মাছের প্রজাতি। এছাড়া এই অঞ্চলে দৈত্যাকার শামুক ও ঝিনুক, সাদা কচ্ছপ ও গভীর সমুদ্রে হাঙ্গরের বসবাস রয়েছে।

মার্শাল দ্বীপ

সমুদ্রের সম্পদ থেকে উপকৃত হওয়ার সহজ উপায় এটি সুরক্ষা করা, ছবি: ওসান গ্রাফিক্স

গবেষকরা আরও জানিয়েছেন, গভীর সমুদ্রে নতুন প্রজাতির মাছ ও অমেরুদণ্ডী প্রাণি থাকাও সম্ভাবনা রয়েছে। মার্শাল দ্বীপপুঞ্জে বসবাসকারী উট্রিক সম্প্রদায়ের লোকেরা বংশ পরম্পরায় ক্ষুদ্র পরিসরে মাছ ধরাসহ অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণি শিকার করতেন। এই অঞ্চলটিকে অভয়ারণ্য ঘোষণা করায় এখন সব ধরনের সামুদ্রিক আহরণ নিষিদ্ধ করায় ভবিষ্যতে অঞ্চলটি হুমকিতে পড়বে না। এছাড়া সামুদ্রিক প্রাণিদের নিয়ে গবেষণার দ্বার খুলবে।

মার্শালে মাছ

সামুদ্রিক মাছে পরিপূর্ণ এই দ্বীপ, ছবি: ডিভার নেট

১৯৮৩ সালে স্বাধীনতা পুনরুদ্ধারকারী মার্শাল দ্বীপপুঞ্জের ফেডারেল সরকার এখন রেইমানলোক নামক তার সংরক্ষণ কৌশলে ঐতিহ্যবাহী জ্ঞানকে অন্তর্ভুক্ত করছে। মার্শালিজ ভাষায় যার অর্থ “ভবিষ্যতের দিকে তাকাও”, এই পদ্ধতিতে দেশের সমুদ্র ও ভূমি কীভাবে পরিচালনা করা যায় সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় উপকূলীয় সম্প্রদায়গুলোকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

দ্বীপ মার্শাল

প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত অপরুপ মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ, ছবি: ইস্ট ওয়েস্ট সেন্টার

অভয়ারণ্য ঘোষণা প্রসঙ্গে মার্শাল দ্বীপমালার প্রেসিডেন্ট হিলদা হেইন বলেন, “টেকসই সমুদ্র বাস্তুতন্ত্র ছাড়া অর্থনীতি, স্থিতিশীলতা ও সাংস্কৃতিক পরিচয় ভেঙে পড়বে। সমুদ্রের সম্পদ থেকে উপকৃত হওয়ার একমাত্র উপায় হল এটি সুরক্ষা করা।  

দৈত্যাকার ঝিনুক

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের আধার প্রবালসমৃদ্ধ এই দ্বীপ, ছবি: ডিভার নেট

একই প্রসঙ্গে পরিবেশ সংরক্ষণবাদী এনরিক সালা বলেন, এই আদিম প্রবাল প্রাচীরগুলো হচ্ছে একেকটা টাইম মেশিন। এসব টাইম মেশিন আমাদের কাঙ্ক্ষিত প্রবাল প্রাচীরগুলো ভবিষ্যতে কেমন হবে, তাও বলে দেবে।

তথ্যসূত্র: মঙ্গা বে, ওসান গ্রাফিক ম্যাগাজিন ও তাইপে টাইমস

আরও যা পড়তে পারেন

কমেন্ট করুণ