সত্তর বছর বয়সে অবসরে যেতে চান বলিউডের মিস্টার পারফেকশনিস্ট আমির খান। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে অভিনেতা পরিষ্কার জানিয়ে দেন, আরও ১০ বছর দর্শকদের কাজ উপহার দিতে চান। কয়েক দিন আগে দ্য হলিউড রিপোর্টার ইন্ডিয়ার ইউটিউব চ্যানেলে সাক্ষাৎকার দেন আমির খান। এ আলাপচারিতায় তার কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরেন। পাশাপাশি এ-ও জানান, এখনই তিনি সিনেমা ছাড়ছেন না। তবে সেই সিদ্ধান্ত থেকে তিনি ফিরে আসেন বড় ছেলে জুনায়েদের কথাতে। জুনায়েদ খান তাকে ডেকে বলেন, মাত্র একটি সিনেমার কারণে সিনেমা করাই ছেড়ে দেবে? তুমি সেটাই করো যেটা করতে তোমার ভালো লাগে।
১৯৬৫ সালে জন্ম নেওয়া এই অভিনেতার সিনেমায় হাতেখড়ি ১৯৭৩ সালে। চাচা নাসির হুসেনের সিনেমা ইয়াদো কি বারাত সিনেমার মাধ্যমে তার চলচ্চিত্রে অভিষেক। এরও বছর দশেক পর, অর্থাৎ ১৯৮৪ সালে হোলি সিনেমার মাধ্যমে পেশাগতভাবে অভিনয় শুরু করেন। আর নায়ক হয়ে বলিউড জয়ের পথে যাত্রা শুরু করেন ১৯৮৮ সালে, কেয়ামত সে কেয়ামত তক সিনেমার মাধ্যমে। উঠতি বয়সে দুটি সিনেমায় অভিনয় করলেও সেরা নবাগত হিসেবে ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড তার হাতে ওঠে জুহি চাওলার সাথে জুটি বেধে হিরো হয়ে আসার পরেই।
এরপর থেকে একাধিকবার পুরস্কারের মনোনয়ন পেলেও আমির কোনো পুরস্কার হাতে পাননি। তরুণ বয়সে এর পেছনে ইশারায় তিনি অন্য খানদের দোষারপ আর বলিউড ‘গ্যাঙ’ সংস্কৃতিকে দায়ী করলেও খোলামেলা আলাপে সব সময়েই এড়িয়ে গেছেন। যেমন এড়িয়ে গেছেন পুরস্কারের বিভিন্ন আয়োজন। তাকে দেখা যায়নি খ্যাতনামা অনেক আয়োজনেই। এমন কী অনেক সেলিব্রেটির মতন মঞ্চে তাকে পারফর্মও করতে দেখা যায়নি।
বরং আমির মনোযোগ দিয়েছেন কাজে। ১৯৮৪ থেকে ২০২৪ সালে দীর্ঘ চার দশকের তার অভিনয় জীবনে শুধুই ‘পারফেক্ট’ কাজ হয়েছে তা যেমন নয়, আবার লাল সিং চাড্ডা সিনেমাই একমাত্র ভুল সীদ্ধান্ত – সেটিও নয়। বলিউডি ধারার অনেক সিনেমাতেই তাকে দেখা গেছে তরুণ বয়সে। তুম মেরে হো সিনেমাতে তাকে দেখা গেছে সাপ নির্ভর সিনেমাতে, আবার ছোট ভাই ফয়সাল খানকে নিয়ে আরেক ভরাডুবির উদাহরণ মেলা সিনেমাতেও তাকে দেখা গেছে।
চকলেট বয় আমির খানের সাফল্যের মূল অস্ত্র গল্প নির্বাচন। ‘যো জিতা ওহি সিকান্দার’ সিনেমাটি আজও সামাজিক বৈষম্যতা নিয়ে ভাবার খোরাক যোগায়। আবার বাজী বা সারফারোশ সিনেমা দিয়ে অ্যাকশন ঘরানাকে মাৎ করেছেন আমির খান।
আরেকদিকে গুলাম বা রঙিলা সিনেমার মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন একেবারে সে সময়ের বলিউডের মশলাও তার হাতে যাদুতে সেই রকমের শাহী আইটেমে পরিণত হতে পারে।
আমির খানের জীবনের দুটি সিনেমা অন্তত আছে যা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে তরুণদের কাছে আইকনিক হিসেবে থাকবে বলে মনে করেন সমালোচকরা। একটি দিল চাহতা হ্যায়, অপরটি অবশ্যই থ্রি ইডিয়টস। লুক থেকে শুরু করে জীবনের অর্থ সবকিছুতেই বদলের জোয়ার নিয়ে আসে এই দুইটি ছবি।
ওদিকে বিদ্রোহের স্মারক ‘রাঙদে বাসন্তি’কে ভুলে গেলে আমির খানের বলিউডের গল্প অসম্পূর্ণই থেকে যায়। আমির খান মানেই যেখানে পর্দায় নানা রূপ- নানা রঙ, সেই আমিরের ইচ্ছাই ছিল না পর্দার সামনে আসার।
আমির খানের পরিচালনা ও প্রযোজনাতেই আগ্রহ ছিল বেশি। বাবা তাহির হুসেনের লিগেসির কারণেই হয়তো এমনটা হতেই পারে। কারণ তার চাচা নাসির হুসেন, চাচাতো ভাই মনসুর হুসেন সকলেই পর্দার পেছনের মানুষ। আমিরের ছোট বোন নিখাত খানের অভিনয় নির্মিত একটি ডকুমেন্টারির পরিচালনা দিয়েই প্রকৃতপক্ষে তার ক্যারিয়ার শুরু। ওদিকে বড় বোন ফারহাত খানও অভিনয় করেন। মূলত মঞ্চে অভিনয় করলেও ফারহাতকে সম্প্রতি দেখা গেছে পাঠান সিনেমায় ছোট্টে একটি দৃশ্যে শাহরুখ খানের সাথে। ভাই ফয়সাল খানের সাথে অম্লমধুর সম্পর্ক থাকলেও তারা পারিবারিকভাবে কোনো বিবৃতি দেননি।
একই ঘটনা তার বৈবাহিক জীবনেও। রীনা দত্তের সাথে প্রথম বিয়ে ভাঙার পর দ্বিতীয় বিয়েও টেকেনি কিরন রাওয়ের সাথে। কিন্তু তারা পারস্পারিক সম্মান বজায় রেখেছেন। এক সাথে কাজও করছেন। আমির প্রযোজিত- কিরন রাও পরিচালিত লাপাত্তা লেডিজ তারই প্রমাণ। আবার বড় কন্যা ইরা খানের বিয়েতে দুই প্রাক্তন স্ত্রীসহ তিন সন্তানের উপস্থিতি বলিউডে সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্কের কথাই বার বার তুলে ধরেছে।
আমির খান ফিরে আসছেন ২০০৭ সালের তারে জমিন পার সিনেমাটির সিক্যুয়েল সিতারে জমিন পার সিনেমা নিয়ে। ২০২৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর মুক্তি পাবে ছবিটি। এই সিনেমা নিয়ে আশায় বুক বাঁধছেন এই অভিনেতা। যার সকল আবেগ সিনেমা নিয়েই। তিনি অপেক্ষায় আছেন আগের ভুল সিনেমার মাধ্যমে শুধরে নেওয়ার।