প্রতি বছর প্রভাবশালী ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘দ্য ইকোনোমিস্ট’ বিশ্বব্যাপী সিনেমাপ্রেমীদের জন্য বর্ষসেরা সিনেমার তালিকা প্রকাশ করে। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। এবারে তাদের তালিকায় স্থান পেয়েছে বিভিন্ন জনরার মনোমুগ্ধকর কিছু সিনেমা।
অল অব আস স্ট্রেঞ্জারস
সিনেমার কাহিনী গড়ে উঠেছে একজন নিঃসঙ্গ চিত্রনাট্যকারকে ঘিরে, যিনি শৈশবের বাড়িতে ফিরে গিয়ে তার বাবা-মায়ের মৃত আত্মার সঙ্গে দেখা করেন। যখন তিনি কিশোর বয়সী, তখন তাদের হত্যা করা হয়েছিল। এখন সেই চিত্রনাট্যকারের হাতে মাত্র একটি সুযোগ রয়েছে তার পিতামাতার সঙ্গে সংক্ষিপ্ত সময় কথা বলার। সিনেমাটিতে অভিনয় করেছেন অ্যান্ড্রু স্কট, পল মেসক্যাল, ক্লেয়ার ফয়, জেমি বেল প্রমুখ। পরিচালনা করেছেন ব্রিটিশ নির্মাতা অ্যান্ড্রু হেই।

অল উই ইমাজিন অ্যাজ লাইট সিনেমার একটি দৃশ্যে ভারতীয় অভিনেত্রী কানি কুশ্রুতি। ছবিঃ দ্যা হিন্দু
অল উই ইমাজিন অ্যাজ লাইট
সিনেমাটি নির্মিত হয়েছে মুম্বাইয়ের একটি হাসপাতালে কর্মরত তিনজন নারীর জীবনকে কেন্দ্র করে। কর্মজীবী তিন নারীর সংবেদনশীল জীবনের কাহিনী নিপুণতার সঙ্গে সেলুলয়েডে ফুটিয়ে তুলেছেন পায়েল কাপাডিয়া। এতে অভিনয় করেছেন কানি কুশ্রুতি, দিব্যা প্রভা, ছায়া কদম, ঋধু হারুন। সিনেমাটি প্রথম ভারতীয় চলচ্চিত্র হিসেবে কান চলচ্চিত্র উৎসবে গ্রাঁ প্রি জয় করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে।
আনোরা
সর্বশেষ কান চলচ্চিত্র উৎসবে স্বর্ণপাম জিতেছিল এটি। এই রোমান্টিক কমেডি সিনেমাটি আবর্তিত হয়েছে নিউইয়র্ক শহরের একজন যৌনকর্মীকে কেন্দ্র করে। তার সঙ্গে রাশিয়ান অলিগার্ক পিতার সন্তান ইভান নামের এক ছেলের সঙ্গে পরিচয় হয়। তারপর প্রেম, বিয়ে। কিন্তু খবরটি রাশিয়ায় পৌঁছানোর পর ছেলেটির বাবা-মা এই বিয়ে বাতিল করার জন্য নিউইয়র্কের উদ্দেশে রওনা দেন। তখন আনোরা-ইভানের রূপকথার মতো বিয়ে হুমকির মুখে পড়ে। সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন শন বেকার। অভিনয়ে মাইকি ম্যাডিসন, ক্যারেন কারাগুলিয়ান, ইউরি বোরোসিভ, আইভি ওয়াক, লুনা সোফিয়া মিরান্ডা প্রমুখ।
বেবিগার্ল
একটি রোবটিক্স ফার্মের বিবাহিত বস প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষানবিশ এক তরুণের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ায়। দ্য ইকোনমিস্টের মতে, ‘সিনেমাটি একদম চকচকে ইরোটিক থ্রিলার, তবে তা নগ্নতার চেয়ে কাঁচা আবেগের প্রতি বেশি মনোযোগ আকর্ষণ করে।’ এতে মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করেছেন নিকোল কিডম্যান ও হ্যারিস ডিকিনসন। পরিচালনা করেছেন হালিনা রাইন।
লা কাইমেরা
ইতালিয়ান শব্দ ‘লা কাইমেরা’ মানে ‘অসম্ভব স্বপ্ন’। আশির দশকের পটভূমিতে আবর্তিত এ সিনেমায় দেখা যায় একজন ইংরেজ প্রত্নতাত্ত্বিক ইতালির তাসকান অঞ্চলের আশপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। হারিয়ে যাওয়া প্রেমের সঙ্গে পুনরায় মিলিত হওয়ার ‘অসম্ভব’ স্বপ্ন দেখছেন। তিনি কবর ডাকাত দলের একটি রোলিকিং ব্যান্ডকে কালো বাজারে বিক্রি করতে এবং এট্রুস্কান সভ্যতার প্রত্নবস্তু আবিষ্কার করতে তাদের সহায়তা করেন। অভিনয় করেছেন জোশ ও’কনর, ক্যারল ডুয়ার্তে, ভিনসেঞ্জো নেমোলাতো প্রমুখ। পরিচালনা করেছেন এলিস রোরওয়াকের।

কনক্লেভ সিনেমায় কার্ডিনাল চরিত্রে অভিনয় করেছেন ব্রিটিশ অভিনেতা রাল্ফ ফিন্স।
ছবিঃ দ্যা গার্ডিয়ান
কনক্লেভ
ব্রিটিশ উপন্যাসিক রবার্ট হ্যারিসের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে এই থ্রিলার সিনেমাটি। এখানে কার্ডিনাল (ক্যাথলিক চার্চের জ্যেষ্ঠ্য সদস্য) হিসেবে অভিনয় করেছেন ব্রিটিশ অভিনেতা রাল্ফ ফিন্স। নতুন পোপ নির্বাচনের তত্ত্বাবধানে জড়িত তিনি। নির্বাচনকে ঘিরে গড়ে উঠেছে টানটান উত্তেজনাপূর্ণ সিনেমার কাহিনী। এটি পরিচালনা করেছেন এডওয়ার্ড বার্গার।

রিফিউজি পরিবারের মর্মস্পর্শী কাহিনী উঠে এসেছে গ্রিন বর্ডার সিনেমার কাহিনীতে।
ছবিঃ দ্যা গার্ডিয়ান
গ্রিন বর্ডার
যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের ঘরছাড়া অসহায় পরিবারের মর্মস্পর্শী কাহিনী উঠে এসেছে সিনেমাটিতে। এতে দেখা যায়, নিরাপদে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দেশগুলোতে প্রবেশের জন্য সিরিয়া, আফগানিস্তান ও আফ্রিকার শরণার্থীদের প্রলুব্ধ করে বেলারুশ। কিন্তু এই পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় পোল্যান্ডের সীমান্তরক্ষীরা। এদিকে বেলারুশ সীমান্তবাহিনী অভিবাসীদের ফিরে যেতে দেবে না। এতে অভিনয় করেছেন জালাল আলতাউইল, মাজা ওস্তাজিউস্কা, টমাস ওলোসোক প্রমুখ। পরিচালনা করেছেন আগ্নিয়েস্কা হোলান্ড।

ইম্যাকুলেট সিনেমার পোস্টার।
ছবিঃ ভেগ ভাইসাজ
ইম্যাকুলেট
একজন আমেরিকান সন্ন্যাসী একটি ইতালীয় কনভেন্টে (বিহার) চলে যান। তিনি জানতে পারেন যে জেনেটিসিস্ট থেকে পাদ্রী হয়ে ওঠা একজন ব্যক্তি যিশু খ্রিস্টের ক্লোন করার পরিকল্পনা করছেন। দ্য ইকোনমিস্টের মতে, ‘বছরের পর বছর ধরে সবচেয়ে সুন্দরভাবে দৃশ্যায়িত এবং নিপুণভাবে নির্মিত হরর ফিল্মগুলোর একটি হলো ইম্যাকুলেট।’ সন্ন্যাসীর ভূমিকায় রয়েছেন মার্কিন অভিনেত্রী সিডনি সুইনি। পরিচালনা করেছেন মাইকেল মোহন।
লাভ লাইজ ব্লিডিং
সিনেমাটিতে ক্রিস্টেন স্টুয়ার্ট ও ক্যাটি ও’ব্রায়ানকে দেখা যায় ছোট্ট একটি শহরের জিম ম্যানেজার ও একজন বডি বিল্ডারের ভূমিকায়। একজন খুনি বন্দুকবাজের বিরুদ্ধে দল গঠন করেন তারা। দ্য ইকোনমিস্টের ভাষ্য, ‘এই অন্ধকারাচ্ছন্ন কমিক ক্রাইম থ্রিলারটি অত্যধিক হিংসাত্মক, বিভ্রমমূলক।’ সতর্কবার্তা দিয়ে সংবাদমাধ্যমটি লিখেছে, ‘এটি দুর্বল হৃদয়ের জন্য নয়।’ চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেছেন রোজ গ্লাস।
মনস্টার
একজন জাপানি বিধবা নারী তার ছেলের অদ্ভুত আচরণে ভীত। সেসব কর্মকাণ্ড তিনটি ভাগে তিনটি ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। প্রথমটি রহস্য, দ্বিতীয়টি ব্যঙ্গাত্মক প্রহসন এবং তৃতীয়টি কামুকতা। দ্য ইকোনমিস্টের ভাষ্য, ‘এটি একটি গভীর মানবিক চলচ্চিত্র।’ এতে মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন আন্দো সাকুরা ও কুরোকাওয়া সোয়া। পরিচালনা করেছেন হিরোকাজু কোরেদা।