রাজধানীর হাতিরঝিলের এম্ফি থিয়েটারে গত ১৮ অক্টোবর একটি কনসার্টের আয়োজন করা হয়েছিল। উচ্ছৃঙ্খল জনতা ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করায় সেই কনসার্ট বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন আয়োজকরা। এ ঘটনার পর ওই কনসার্টে যাদের পারফর্ম করার কথা ছিল তাদের সবাই কনসার্টের নিরাপত্তাহীনতা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। এর ঠিক আগেই পাকিস্তানের ব্যান্ড জালের কনসার্টে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য সেনাসদস্যদের তলব করতে হয়েছিল। ঢাকা রেট্রোর মতো হাইভোল্টেজ কনসার্ট পিছিয়েছে দুই দফা। পরে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের কাছাকাছি একটি ভেন্যুতে তা আয়োজন করা হয়। এর আগে ২০২৩ সালে কোক স্টুডিও বাংলার কনসার্টের দ্বিতীয় আসর থেকে তিক্ততা নিয়ে ফেরেন দর্শকরা। সামারফেস্ট কমিকনেও একই ঘটনা ঘটে। এভাবে বেশিরভাগ কনসার্টের আয়োজনই প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।
শিল্পীরা এমন পরিস্থিতিকে কিভাবে দেখছেন? বিশেষ করে ব্যান্ড সদস্যরা। কারণ কনসার্ট মানেই ব্যান্ড, আর দর্শকের উন্মাদনা। এসব বিষয় নিয়ে সম্প্রতি ‘হ্যালো বাংলাদেশ’র সঙ্গে কথা বলেছেন মাইলস ব্যান্ডের সদস্য মানাম আহমেদ।
চার দশকেরও বেশি সময় ধরে মাইলসের সাথে কিবোর্ড বাজানো শিল্পী মানাম আহমেদ উদ্বেগ প্রকাশ করেন কনসার্টে চলমান উশৃঙ্খলতা নিয়ে। তিনি বলেন, শিল্পী হিসেবে এটি কখনোই আমাদের কাম্য নয়।
মানাম আহমেদ বলেন, এ তো শুধু ব্যান্ডের কনসার্টে হচ্ছে না। শিল্পকলায় নাটক বন্ধ করার জন্য এক পক্ষ শ্লোগান দিচ্ছে, কেউ কেউ লালন উৎসব বন্ধ করাচ্ছে, আবার কাওয়ালি উৎসবে বাধা। এই ঘটনাগুলো অবশ্যই শঙ্কার সৃষ্টি করে।
তার মতে, অবশ্যই এর পেছনে কোনো একটি গোষ্ঠীর হাত আছে। তা না হলে পরপর একই ধরনের আয়োজনে এমন বিশৃঙ্খলতা হতে পারে না।
সামগ্রিক ঘটনা বিবেচনা করে মানাম আহমেদ সম্পূর্ণ বিষয়টি নিয়ে সংস্কৃতির বিপক্ষের কোনো অপশক্তির দিকে ইঙ্গিত করছেন। তিনি মনে করেন, এর মাধ্যমে একবার দর্শক কনসার্ট বিমুখ হয়ে গেলে তার প্রভাব অবশ্যই শিল্পীর জীবনে পড়বে। কারণ শিল্পী এই চর্চা ও পারফরম্যান্সের মাধ্যমেই তার আয়-উপার্জন নিশ্চিত করে। কনসার্ট একটি বড় মাধ্যম শিল্পীদের পারফরম করার প্লাটফার্ম হিসেবে। সেখানে যদি বারবার বাধা আসে, তাহলে একজন শিল্পী কী করে উপর্জনের ধারাবাহিকতায় থাকবে, সেই প্রশ্ন মানাম আহমেদের।
মানাম আহমেদ বলেন, পেশাদার শিল্পীর জন্য বর্তমানের অস্থিরতা কেবল নেতিবাচকই নয়, অনেকটা অর্থনৈতিক ও শারীরিক হুমকি স্বরূপ।
এ ব্যাপারে তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সমাধান আশা করছেন। তিনি মনে করেন, দায়িত্বশীল পদে যেই থাকুক, সে রাজনৈতিক সরকার হোক, অন্তবর্তীকালীন সরকার হোক বা তত্ত্বাবধায়ক সরকার হোক, আইনশৃঙ্খলার একটি সুষ্ঠু ব্যবস্থা নিশ্চিত হওয়া বাঞ্ছনীয়। এটি শুধু কনসার্টে নয়, সাধারণ জীবনযাপনেও যে দ্বিধা বর্তমানে মানুষের মনে আছে, সেটি দূর হওয়া জরুরি বলে তিনি বলেন হ্যালো বাংলাদেশকে।
দর্শকদের উদ্দেশ্যে মানাম বলেন, টিকিট কেটে গান শোনা একটি আচরণের মধ্যে পড়ে। সঙ্গীত আসলে সাধনার বিষয়। একজন শিল্পী দিন-বছর-যুগ ধরে সাধনা করে দর্শকের সামনে আসেন পারফর্ম করতে। তাই তাকে সেই সম্মান আর সাধনার জন্য সম্মানি দেওয়া খুব দরকার।
মানাম বলেন, গান কোনো ফ্রি পণ্য নয়। টিকিট কেটে গান শোনা বা কনসার্ট উপভোগ করার মাধ্যমেই একজন শিল্পীকে প্রাপ্য সম্মান জানানো হয়। ফ্রিতে কোনোভাবেই অভ্যস্ত হওয়া সঠিক নয়। আমি তা একজন প্রফেশনাল সঙ্গীতশিল্পী হিসেবেই বলছি।
সবশেষে মাইলস ব্যান্ডের এই সদস্য বলেন, কনসার্টে সুস্থ পরিবেশ ফিরে আসুক, যেন আমাদের কোনো আয়োজন থেকে শঙ্কা ও দুঃখ নিয়ে ফিরে যেতে না হয়। সেই আবেদন করছি সকলের কাছে, বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলার দ্বায়িত্বে যারা আছেন তাদের কাছে। সেই সাথে দর্শকরা তো আছেনই।