Home বাণিজ্য মাথাপিছু জিডিপিতে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ১৪ দেশ

মাথাপিছু জিডিপিতে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ১৪ দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক
২১১ views

মাথাপিছু জিডিপির (পিপিপি) ভিত্তিতে বিশ্বের ধনী ১৪টি দেশের তালিকা প্রকাশ করেছে ভিজ্যুয়াল ক্যাপিটালিস্ট। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) তথ্য নিয়ে  মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি), মাথাপিছু আয় এবং জনগণের ক্রয়ক্ষমতা হিসেবে এ তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। 

আইএমএফের ২০২৪ সালের ৬ সেপ্টেম্বরের হিসাবমতে, পিপিপি বিশ্বের ধনী ১৪টি দেশ হলো— লুক্সেমবার্গ, ম্যাকাও, আয়ারল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সুইজারল্যান্ড, সান মারিনো, যুক্তরাষ্ট্র, নরওয়ে, গায়ানা, ডেনমার্ক, ব্রুনাই ও তাইওয়ান।  

একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন পরিমাপের প্রধান সূচক হলো মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি। যা মূলত ওই দেশের বার্ষিক পণ্য-পরিষেবা উন্নয়নের সামষ্টিক হিসাব। এই হিসাবকে দেশটির মোট জনসংখ্যা দিয়ে ভাগ করলে পাওয়া যায় ওই দেশের মাথাপিছু আয়। তবে আইএমএফের এই তালিকায় মাথাপিছু আয়ের পাশাপাশি জনগণের গড় ক্রয়ক্ষমতাকেও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

একটি দেশকে ধনী তখনই বলা হয়, যখন সে দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার পাশাপাশি প্রতিটি মানুষের সর্বোচ্চ গড় আয় নির্ধারণ করা হয়। একটা দেশ ধনী না কি দরিদ্র, সেটা বোঝার জন্য জিডিপি পার ক্যাপিটাল দেখা হয়। জিডিপি পার ক্যাপিটাল মানে মাথা পিছু জিডিপি আয়। আর এই তালিকা তৈরি করে আইএমএফ।

১. লুক্সেমবার্গ: বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশ হিসেবে তালিকার শীর্ষে রয়েছে ইউরোপের দেশ লুক্সেমবার্গ। ইউরোপের অন্যতম প্রধান আর্থিক প্রযুক্তি (ফিনটেক) হাব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত দেশটি। সেখানে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মান অনেক উন্নত এবং শিক্ষা-স্বাস্থ্য পরিষেবার অতুলনীয়। সেখানে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে গণপরিবহণ ব্যবহার করেন নাগরিকরা। মাত্র ২ হাজার ৫৮৬ বর্গকিলোমিটার আয়তনের দেশটির জনগণের মাথাপিছু আয় ১ লাখ ৪৪ হাজার ডলার। যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। দেশটির মোট জনসংখ্যা ৬ লাখ ৬৯ হাজার।

২. ম্যাকাও: তালিকার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ম্যাকাও এসএসআর। চীনের বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল। এখানকার মূল আয় আসে পর্যটন এবং ক্যাসিনো থেকে। এশিয়ার প্রথম এবং শেষ ইউরোপীয় উপনিবেশ ছিল এখানেই। দেশটির জনগণের মাথাপিছু আয় ১ লাখ ৩৪ হাজার ১৪০ ডলার। দেশটির মোট জনসংখ্যা ৭ লাখ ৪ হাজার।

৩. আয়ারল্যান্ড: স্বল্প জনসংখ্যা ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার কারণে ধনী দেশের তিনে রয়েছে ইউরোপের আরেক দেশ আয়ারল্যান্ড। বিশ্বের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান এ দেশে বিনিয়োগ করেছে বিধায় একে কর্পোরেটদের স্বর্গরাজ্য বলা হয়ে থাকে। অ্যাপল, গুগল, মাইক্রোসফটের মতো বহুজাতিক কোম্পানিগুলি সাম্প্রতিক বছরগুলিতে আইরিশ অর্থনীতিতে ৫০ শতাংশের বেশি যোগ করেছে। আয়ারল্যান্ডের জনগণের মাথাপিছু আয় ১ লাখ ৩৩ হাজার ৯০০ ডলার। দেশটির মোট জনসংখ্যা ৫২ লাখ।

৪. সিঙ্গাপুর: ধনী দেশের তালিকায় চার নাম্বারে রয়েছে এশিয়ার দেশ সিঙ্গাপুর। দেশটি বহু বছর ধরে বিনিয়োগ ও বাণিজ্যের জন্য কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়েছে। এখানে মাথাপিছু গড় বার্ষিক আয় ১ লাখ ৩৩ হাজার ৭৪০ ডলার। এছাড়া সিঙ্গাপুরের বার্ষিক জিডিপি বৃদ্ধির হার ২.১ শতাংশ। দেশটির মোট জনসংখ্যা ৫৯ লাখ।

৫. কাতার: মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতার তেল ও প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর। বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুত রয়েছে এখানে। পাশাপাশি রয়েছে তেলের ভাণ্ডার। বর্তমানে পর্যটনেও উৎসাহ দিচ্ছে দেশটি। কাতারের জনগণের মাথাপিছু আয় ১ লাখ ১২ হাজার ২৮০ ডলার। দেশটির মোট জনসংখ্যা ৬ লাখ ৬৯ হাজার। দেশটির মোট জনসংখ্যা ২৭ লাখ।

৬. সংযুক্ত আরব আমিরাত: মধ্যপ্রাচ্যের আরেক দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতকে এই অঞ্চলের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ বলা হয়। কাতারের মত এই দেশটিও প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর। এই দেশের জনগণের মাথাপিছু আয় ৯৬ হাজার ৮৫০ ডলার। দেশটির মোট জনসংখ্যা ৯৫ লাখ।

৭. সুইজারল্যান্ড: পর্যটকদের স্বপ্নের দেশ ইউরোপের দেশ সুইজারল্যান্ড। অপরূপ প্রাকৃতিক নৈসর্গিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি বেশ স্থিতিশীল অর্থনীতিও দেশটির। মূল্যবান ধাতু, যন্ত্রপাতি এবং কম্পিউটার ও মেডিকেল ডিভাইস রপ্তানি করেও প্রচুর টাকা আয়  করে দেশটি। সুইজারল্যান্ডের জনগণের মাথাপিছু আয় ৯১ হাজার ৯৩০ মার্কিন ডলার। দেশটির মোট জনসংখ্যা ৮৯ লাখ।

৮. সান মারিনো :  সান মারিনো ইউরোপ মহাদেশে অবস্থিত একটি রাষ্ট্র। এটি পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম রাষ্ট্রগুলোর একটি। বিশ্বের খুব কম দেশই আছে যাদের ঘাড়ে ঋণের বোঝা নেই। সান মারিনো তাদের মধ্যে একটি। এই দেশের ছত্রে ছত্রে ইতালীয় সংস্কৃতির প্রভাব। এই ক্ষুদ্র রাষ্ট্রের জনগণের মাথাপিছু আয় হল ৮৬ হাজার ৯৯০ মার্কিন ডলার। দেশটির মোট জনসংখ্যা ৩৩ হাজার।

৯. যুক্তরাষ্ট্র: উত্তর আমেরিকার বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী দেশ যুক্তরাষ্ট্র। আর্থিকভাবে শক্তিশালী হওয়ার পাশাপাশি সামরিক বলেও বলীয়ান দেশটি। যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের মাথাপিছু আয় ৮৫ হাজার ৩৭০ মার্কিন ডলার। দেশটির মোট জনসংখ্যা ৩৩ কোটি ৪০ লাখ।

১০. নরওয়ে: ইউরোপের দ্বিতীয় জনবহুল রাষ্ট্র নরওয়ে। সবচেয়ে বেশি তেল ও গ্যাসের খনি রয়েছে দেশটিতে। পশ্চিম ইউরোপীয় দেশগুলিতে সবচেয়ে বেশি পেট্রোলিয়াম সরবরাহ করে নরওয়ে। এই দেশের মোট জিডিপির পরিমাণ ৫২৬.৯৫ বিলিয়ন ডলার। নরওয়ের জনগণের মাথাপিছু আয় ৮২ হাজার ৮৩০ মার্কিন ডলার। দেশটির মোট জনসংখ্যা ৬ লাখ ৬৯ হাজার। দেশটির মোট জনসংখ্যা ৫৫ লাখ।

১১. গায়ানা: দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের উত্তর উপকূলে অবস্থিত একটি দেশ গায়ানা। দেশটির  মাথাপিছু জিডিপি (পিপিপি) ৮০ হাজার মার্কিন ডলার। দেশটির মোট জনসংখ্যা ৫ লাখ ১৩ হাজার।

১২. ডেনমার্ক: উত্তর-পশ্চিম ইউরোপের একটি দেশ ডেনমার্ক। দেশটির  মাথাপিছু জিডিপি (পিপিপি) ৭৮ হাজার মার্কিন ডলার। দেশটির মোট জনসংখ্যা ৫৯ লাখ।

১৩. ব্রুনাই: দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার একটি দেশ ব্রুনাই। বন্দর সেরি বেগাওয়ান ব্রুনাই এর রাজধানী। দেশটির  মাথাপিছু জিডিপি (পিপিপি) ৭৮ হাজার মার্কিন ডলার। দেশটির মোট জনসংখ্যা ৪ লাখ ৫২ হাজার।

১৪. তাইওয়ান:  পূর্ব এশিয়ার একটি দ্বীপ রাষ্ট্র হচ্ছে তাইওয়ান। দেশটির  মাথাপিছু জিডিপি (পিপিপি) ৭৮ হাজার মার্কিন ডলার। দেশটির মোট জনসংখ্যা ২ কোটি ৩৯ লাখ।

আরও যা পড়তে পারেন

কমেন্ট করুণ