ডলার সংকটের কারণে আমদানি ব্যয়ে লাগাম টেনে ধরার নীতি অনুসরণ করে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। তার সুফলও মিলছে। আমদানি ব্যয় কমছে। আর তাতে বাণিজ্য ঘাটতিতে নিম্মমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক গত মঙ্গলবার রাতে বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবে ভারসাম্যের হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের (২০২৪-২৫) প্রথম দুই মাসে অর্থাৎ জুলাই-আগস্টে পণ্য বাণিজ্যে সার্বিক ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৭৫ কোটি ৪০ লাখ (২.৭৫ বিলিয়ন) ডলার। যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ৯ শতাংশ কম। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের এই দুই মাসে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৩০৪ কোটি ৪০ লাখ (৩.০৪ বিলিয়ন) ডলার।
জুলাই-আগস্ট সময়ে ৯৯১ কোটি ৪০ লাখ (৯.৯১ বিলিয়ন) ডলারের বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি করেছেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা। এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১ দশমিক ২ শতাংশ কম। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের এই দুই মাসে ১০ দশমিক শূন্য তিন বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছিল।
অন্যদিকে জুলাই-আগস্ট সময়ে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে ৭১৬ কোটি (৭.১৬ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছেন রপ্তানিকারকরা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি। গত বছরের এই দুই মাসে পণ্য রপ্তানি থেকে ৬ দশমিক ৯৮ বিলিয়ন ডলার আয় হয়েছিল। এ হিসাবেই চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে পণ্য বাণিজ্যে সার্বিক ঘাটতির পরিমাণ কমে ২ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। ২২ দশমিক ৪৩ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি নিয়ে ২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষ হয়েছিল। তার আগের অর্থবছরে (২০২২-২৩) এই ঘাটতির পরিমাণ ছিল ২৭ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলার।
লেনদেন ভারসাম্যে উদ্বৃত্ত
অর্থনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সূচক হচ্ছে বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্য বা ব্যালান্স অব পেমেন্ট। এই সূচকে ৬ দশমিক ৫১ বিলিয়ন ডলারের বড় ঘাটতি নিয়ে শেষ হয়েছিল ২০২৩-২৪ অর্থবছর। সুখবর হচ্ছে— ব্যালান্স অব পেমেন্টে উদ্বৃত্ত নিয়ে শুরু হয়েছে ২০২৪-২৫ অর্থবছর। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে উদ্বৃত্তের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১১ কোটি ১০ লাখ ডলার। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে এই সূচকে ৬১ কোটি ডলারের ঘাটতি ছিল।
আর্থিক হিসাবে ঘাটতি
২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষে আর্থিক হিসাবে (ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট) উদ্বৃত্তের পরিমাণ ছিল ৪ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলার। তবে ঘাটতি নিয়ে শুরু হয়েছে ২০২৪-২৫ অর্থবছর। চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্টে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে এই ঘাটতির পরিমাণ ছিল ১৩৩ কোটি ৭০ লাখ (১.৩৩ বিলিয়ন) ডলার।

ছবি: ফ্রিপিক
সামগ্রিক লেনদেনে ঘাটতি কমেছে
সামগ্রিক লেনদেন ভারসাম্যে (ওভারঅল ব্যালান্স) ঘাটতি কিছুটা কমেছে। জুলাই-আগস্ট সময়ে এই সূচকে ঘাটতি ছিল ১ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার। গত বছরের একই সময়ে এই ঘাটতি ছিল ১ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন ডলার।
রেমিটেন্সে সুবাতাস
গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রায় ২৪ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। যা ছিল আগের অর্থবছরের (২০২২-২৩) চেয়ে ১০ দশমিক ৬১ শতাংশ বেশি। সেই ইতিবাচক ধারা চলতি অর্থবছরেও অব্যাহত রয়েছে। দুই মাসে অর্থাৎ জুলাই-আগস্ট সময়ে ৪ দশমিক ১৪ বিলিয়ন ডলার দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৫ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি। ইতিমধ্যে সেপ্টেম্বর মাসের রেমিটেন্সের তথ্যও প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তাতে দেখা যায়, অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে অর্থাৎ জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে ৬ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স দেশে এসেছে। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৩ দশমিক ৩৪ শতাংশ।
রিজার্ভ ১৯.৭৬ বিলিয়ন ডলার
গত সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার সবশেষ রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওইদিন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম৬ হিসাবে বাংলাদেশের রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ১৯ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলার। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘গ্রস’ হিসাবে ছিল ২৪ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলারে। এক বছর আগে গত বছরের ২ অক্টোবর বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২১ দশমিক ১০ বিলিয়ন ডলার। ‘গ্রস’ হিসাবে ছিল ২৬ দমিক ৯৩ বিলিয়ন ডলার। ২০২১ সালের আগস্টে ‘গ্রস’ হিসাবে রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গিয়েছিল।
এফডিআই বেড়েছে ১৪ শতাংশ
সংকটের মধ্যে দেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) বেড়েছে। জুলাই-আগস্ট সময়ে মোট ৬৯ কোটি ৩০ লাখ ডলারের এফডিআই এসেছে দেশে। এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৩ দশমিক ৮০ শতাংশে বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই- আগস্ট সময়ে ৬০ কোটি ৯০ লাখ ডলার এফডিআই পেয়েছিল বাংলাদেশ।