Home বাণিজ্য ঈদে আসছে নতুন নোট: থাকছে জুলাই অভ্যুত্থানের গ্রাফিতি, ঐতিহ্যের নকশা

ঈদে আসছে নতুন নোট: থাকছে জুলাই অভ্যুত্থানের গ্রাফিতি, ঐতিহ্যের নকশা

৩৯ views
ঈদের আগে বাজারে আসছে নতুন নোট

নতুন নকশার নোট বাজারে আসছে শিগগির। ঈদের আগে-পরে বাজারে আসা এসব নোটের কোনোটিতে থাকছে না বঙ্গবন্ধুর ছবি।  জুলাই বিপ্লবে শহীদ, তারুণ্য, সুন্দরবন এবং ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির বিভিন্ন বিষয় থাকছে নতুন নোটের নকশায়। ঈদের আগে ২০, ৫০ ও ১০০০ টাকার নোট বাজারে ছাড়া হবে। নতুন নকশার এই তিন ধরনের নোটের ছাপা চলছে গাজীপুরের দ্য সিকিউরিটি প্রিন্টিং করপোরেশন (বাংলাদেশ) লিমিটেড বা টাঁকশালে।

জানা গেছে, ২০ টাকার নোট ২৭ মে বাজারে আসছে। এতে কান্তজিউ মন্দির ও বৌদ্ধমন্দিরের ছবি থাকবে। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের দুর্ভিক্ষের চিত্র ও আতিয়া মসজিদের ছবিযুক্ত ৫০ টাকার নোট ২৯ বা ৩০ মে এবং বঙ্গভবন ও জাতীয় স্মৃতিসৌধের ছবিসংবলিত ১০০০ টাকার নোট ২ জুন বাজারে আসবে বলে জানা গেছে। ইউরোপ থেকে কাগজ সরবরাহে বিলম্ব হওয়ায় আবু সাঈদ ও মুগ্ধের অবয়বসংবলিত ৫ টাকার নোট বাজারে আসবে ঈদের পর।

২০ টাকার নোটের ছাপা প্রায় সম্পন্ন। আগামী সপ্তাহে তা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে হস্তান্তর করবে টাঁকশাল কর্তৃপক্ষ। পরের সপ্তাহে ৫০ ও ১০০০ টাকার নোট বাংলাদেশ ব্যাংককে বুঝিয়ে দেবে টাঁকশাল। এরপর কেন্দ্রীয় ব্যাংক সিদ্ধান্ত নেবে এই টাকা কবে বাজারে ছাড়বে। প্রথমে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিস ও অন্যান্য শাখা এবং পরে ব্যাংকগুলোকে এই টাকা দেওয়া হবে। ঈদের ছুটি শুরুর আগে সীমিতসংখ্যক নোট ছাড়া হতে পারে। কারণ, নতুন টাকার যে চাহিদা, তার তুলনায় ছাপা হচ্ছে কম।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান গণমাধ্যমকে বলেন, নতুন নোটের ডিজাইন ইতিমধ্যে চূড়ান্ত হয়েছে। কাগজ আনা হয়েছে। ১০০০ টাকার নোটসহ কয়েকটি ভিন্ন নোটের ছাপার কাজ শুরু হয়েছে। এবার কোনো নোটে মানুষের পুরোপুরি ছবি থাকছে না। তবে জুলাই বিপ্লবে শহীদ, তারুণ্য, সুন্দরবন এবং ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির বিভিন্ন বিষয় থাকছে নতুন নোটের নকশায়। আমিও ধারণা করছি, ঈদের আগে কয়েকটি নতুন নোট আসছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ৫ টাকায় থাকবে আবু সাঈদ ও মুগ্ধদের ছবি, ১০ টাকায় থাকবে তারুণ্যের ঐক্যের প্রতীক এবং জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের ছবি। ১০০ টাকায় থাকবে ইউনেস্কোর স্বীকৃত সুন্দরবনের চিত্রা হরিণ ও বাঘের চিত্র, যা সাবেক সরকারের বিদায়ের পর নোট রূপান্তরের প্রতীক। ২০০ টাকায় ধর্মীয় বৈচিত্র্যের প্রতীক হিসেবে মসজিদ, মন্দির, গির্জা ও প্যাগোডা থাকবে, আর ৫০০ টাকায় থাকছে ঐতিহাসিক আহসান মঞ্জিলের ছবি।

টাঁকশালের কর্মকর্তারা জানান, নতুন নকশার নোট ছাপাতে এক থেকে দেড় বছর সময় লাগে। গত বছরের আগস্টে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। গত ডিসেম্বরে নতুন নকশার নোট বাজারে আনার সিদ্ধান্ত হয়। তারই ধারাবাহিকতায় চলতি মাসে নতুন নকশার নোট ছাপানো শুরু করে। তবে একসঙ্গে তিনটি নোটের বেশি ছাপানোর সক্ষমতা নেই টাঁকশালের। তাই প্রথম ধাপে ২০, ৫০ ও ১০০০ টাকার নোট ছাপানো হচ্ছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবিসহ নোট নিয়ে বিতর্ক ওঠায় গত ১০ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সব ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের চিঠি দিয়ে নতুন নোট বিনিময় কার্যক্রম বন্ধ রাখতে বলা হয়। পাশাপাশি ব্যাংকের শাখায় যেসব নতুন নোট গচ্ছিত আছে, তা বিনিময় না করে সংশ্লিষ্ট শাখায় সংরক্ষণের কথা বলা হয়। এরপর থেকে নতুন নোটের বিনিময় পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। ফলে বাজারে ছেঁড়াফাটা নোট বাড়তে থাকে।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ৪ মার্চ দেশের নিজস্ব কাগুজে মুদ্রা চালু হয়। মানচিত্রখচিত প্রথম নোটটি ছিল ১ টাকার। ১৯৭৩ সালে ৫, ১০ ও ১০০ টাকার নোট ইস্যু করে বাংলাদেশ। এরপর ৫০ ও ৫০০ টাকার নোটের প্রচলন করা হয় ১৯৭৬ সালে। ১৯৭৯ সালে ইস্যু করা হয় ২০ টাকার নোট। দেশে ২ টাকার নোট চালু হয় ১৯৮৮ সালে। ২০০৯ সালের ১৭ জুলাই বাজারে আনা হয় সবচেয়ে বেশি মানের ১০০০ টাকার ব্যাংকনোট। আর ২০২০ সালে সর্বশেষ বাজারে আসে ২০০ টাকার নোট।

আরও যা পড়তে পারেন

কমেন্ট করুণ