বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাকসহ ৭ ধরনের পণ্য স্থলপথ দিয়ে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ভারত। এ বিধিনিষেধ ভারতে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানির ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে। রপ্তানি খরচও বাড়বে বলে মনে করেন ব্যাবসায়ী ও অর্থনীতিবিদরা। এতে আমাদের রপ্তানি খরচও অনেক বেড়ে যাবে। এ ধরনের প্রতিবন্ধকতা দ্বিপক্ষীয় ও আঞ্চলিক বাণিজ্যের বিকাশে বাধা সৃষ্টি করবে।
স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম হ্যালো বাংলাদেশকে বলেন, স্থলপথ দিয়ে পোশাক রপ্তানি বন্ধ হলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হবে আমাদের। ভারত নিজেও পোশাক উৎপাদন করে। ভারতের সঙ্গে আমরা কঠিন প্রতিযোগিতা করে তৈরি পোশাক রপ্তানি করি। বেনাপোল দিয়ে রপ্তানি বন্ধ হলে বাংলাদেশের রপ্তানি খরচ অনেক বেড়ে যাবে। ভারতে আমাদের তৈরি পোশাকের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি অনেক ভালো। এ প্রবৃদ্ধি আর থাকবে না।
বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) প্রেসিডেন্ট আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী পারভেজ হ্যালো বাংলাদেশকে বলেন, স্থলবন্দর ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা ভারতে বাংলাদেশি পোশাক রপ্তানির ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে। এটি মূলত আমাদের পোশাক রপ্তানির খরচের ওপর একটি অশুল্ক বাধা।
তিনি বলেন, যেহেতু এখন সমুদ্রবন্দর দিয়ে চালান পাঠাতে হবে, তাই লিড টাইম উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে এবং ফলস্বরূপ বাংলাদেশ থেকে পণ্য আমদানি করা ভারতীয় আমদানিকারকদের খরচ বাড়বে।
বিসিআই প্রেসিডেন্ট বলেন, আমরা মনে করছি বাংলাদেশ ল্যান্ড পোর্ট দিয়ে সুতা আমদানি বন্ধ করার পাল্টাব্যবস্থা হিসেবে ভারত এই নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
এতে পোশাক রপ্তানির খরচ বাড়বে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভারতের বাজারে মার্কস অ্যান্ড স্পেন্সারসহ কিছু বড় বায়ারের আউটলেটের জন্যও পোশাক পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ। আবার অনেক ছোট রপ্তানিকারক দেশটির বাজারে রপ্তানি করে, যা এখন ক্ষতির মুখে পড়বে, বিশেষত লিড টাইমের বিবেচনায়।
তিনি বলেন, ভারত থেকে সুতা আমদানি বন্ধে আমাদের কোনো লাভ হয়নি। কিন্তু এখন আমাদের ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেড়ে যাবে। এজন্য সরকারের অর্থনৈতিক কূটনীতিকে জোরালো করতে হবে।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান হ্যালো বাংলাদেশকে বলেন, ভারতের মূল ভূখণ্ড ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর স্থলবন্দর ব্যবহার করে বিভিন্ন ভোগ্যপণ্য আমদানিতে কিছু নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় আছে ফলের রস, প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য, প্লাস্টিকসামগ্রী ও তৈরি পোশাক (আরএমজি)। এ ধরনের অশুল্ক প্রতিবন্ধকতা বাংলাদেশি রপ্তানিকারকদের জন্য জটিলতা তৈরি করবে। এ ধরনের প্রতিবন্ধকতা দ্বিপক্ষীয় ও আঞ্চলিক বাণিজ্যের বিকাশে বাধা সৃষ্টি করবে।
তিনি বলেন, তৈরি পোশাক রপ্তানি কেবল ভারতের দূরবর্তী সমুদ্রবন্দর কলকাতা ও নবসেবায় সীমাবদ্ধ করা হয়েছে। ফলে এই পণ্য রপ্তানিতে বিলম্ব ও অতিরিক্ত রপ্তানি খরচ সম্মুখীন হতে হবে। এতে উভয় দেশের জন্য উপকারী, এমন বাণিজ্যের সম্ভাবনা ক্ষুন্ন হবে এবং যে সরবরাহ শৃঙ্খলা বহু বছর ধরে গড়ে উঠেছে, তা চাপের মুখে পড়বে।