শিল্প-কারখানায় চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস মিলছে না। বেশ কিছুদিন ধরে চলা এ সংকটে কমেছে উৎপাদন। মুখ থুবড়ে পড়েছে অনেক কারখানা। চালু থাকা কারখানাগুলোও চাহিদামতো চাপে গ্যাস না পেয়ে বহুমাত্রিক সমস্যায় ভুগছে। দেশীয় সার, গার্মেন্টস, টেক্সটাইল, নিট, ইস্পাত, সিমেন্ট কারখানা থেকে শুরু করে ছোট এবং মাঝারি শিল্পও ধুঁকছে একই সমস্যায়।
শিল্পমালিকরা বলছেন, সময়মতো পণ্য দিতে না পারায় বাতিল হচ্ছে ক্রয়াদেশ। পণ্য না পেয়ে অনেক গ্রাহক চলে যাচ্ছেন অন্য দেশে।
জানা গেছে, দেশে গত দুই বছরের মধ্যে বর্তমানে আমদানিকৃত এলএনজি সরবরাহ তুলনামূলক বেশি হলেও স্থানীয় গ্যাস উৎপাদন ক্রমে কমে যাওয়ায় শিল্পে জ্বালানি সংকট দূর হচ্ছে না।
শিল্পমালিকরা বলছেন, রাজনৈতিক পট পরিবর্তনেও সুরাহ হচ্ছে না ব্যবসায়ীদের গ্যাস সংকট সমস্যার। শিল্পকারখানায় গ্যাস সংকট নতুন নয়। দীর্ঘদিন ধরে চাহিদামতো গ্যাস সরবরাহ মিলছে না। বেশ কিছুদিন ধরে এ সংকট তীব্র হয়ে পড়েছে কারখানাগুলোতে। এতে ব্যাহত হচ্ছে শিল্পের উৎপাদন। শতভাগ গ্যাস না পাওয়ায় এখন বিকল্প উপায়ে কারখানায় উৎপাদন চালু রাখতে হচ্ছে বলে জানান তারা। এর ফলে পণ্যের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ এবং পেট্রোবাংলার সূত্রে জানা যায়, দেশে বর্তমানে দৈনিক ৪১০ থেকে ৪২০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা রয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস সরবরাহ করা যাচ্ছে না এক দশকের বেশি সময় ধরে। তবে ৩৫০-৩৬০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা গেলে পরিস্থিতি মোটামুটি সামলে নেওয়া যায়। কিন্তু বর্তমানে দৈনিক কমবেশি ২৭০ কোটি ঘনফুট বিতরণ করা হচ্ছে। দেশে গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রমও অনেক বছর ধরে মন্থর। দৈনিক ৪১০ কোটি ঘনফুট চাহিদার বিপরীতে ৩০০ কোটি ঘনফুট গ্যাসও গত এক বছরের বেশি সময় ধরে সরবরাহ করা যাচ্ছে না।
ব্যবসায়ীরা জানান, শিল্প কারখানাগুলোতে চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস না পাওয়ায় উৎপাদন প্রায় অর্ধেকে নেমেছে। গ্যাসের চাপ কম থাকায় এসব এলাকার শিল্পকারখানা থেমে থেমে চলছে। গ্যাসচালিত ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ উৎপাদনের নিজস্ব ব্যবস্থা থাকলেও গ্যাসের সংকটে শিল্প কারখানাগুলো সেগুলোও চালাতে পারছে না। ফলে একদিকে সুযোগ নষ্ট এবং অন্যদিকে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন শিল্পোদ্যোক্তারা।
নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ’র সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, দিনে বলেন আর রাতে, কোনো সময়েই ঠিকমতো গ্যাস পাচ্ছি না। এতে সব মেশিন চালানো যাচ্ছে না। গ্যাস-সংকটের কারণে সুতা ও কাপড় ডাইংয়ের কাজ ব্যাহত হওয়ায় কাঁচামাল সময়মতো কারখানায় আসছে না। এতে প্রতিটি ক্রয়াদেশের বিপরীতে সরবরাহ বিলম্বিত হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, ব্যবসা বাণিজ্যের প্রথম চ্যালেঞ্জ হলো গ্যাস, দ্বিতীয় এনবিআর এবং তৃতীয় হলো বাংলাদেশ ব্যাংক। এতো কিছুর মধ্যে আমাদের টিকে থাকা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। গ্যাস চাহিদার আলোকে তো পাচ্ছিই না, আর পাবো কিভাবে আমাদের দেশে গ্যাসের সরবরাহ বাড়াতে কি পর্যাপ্ত গ্যাস কূপ খনন হচ্ছে?
