স্বাধীনতার পর প্রথমবারের মতো সরকারিভাবে পাকিস্তান থেকে চাল আমদানি করছে বাংলাদেশ। আগামী ৩ মার্চ ২৫ হাজার টন আতপ চালের একটি চালান চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছবে। এই চালের দাম ভিয়েতনাম থেকে আমদানি করা চালের দামের চেয়ে বেশি বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তান থেকে আমদানি করা চালের দাম ভিয়েতনাম থেকে আমদানি করা চালের দামের চেয়ে প্রতি টনে ২৪ ডলার ৭৫ সেন্ট বেশি। বর্তমান বিনিময় হার হিসাবে (প্রতি ডলার ১২২ টাকা) পাকিস্তান থেকে আমদানি করা প্রতি টন চালের দাম বেশি পড়েছে ৩ হাজার ১৯ টাকা।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রাষ্ট্রীয় জরুরি প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক উৎস থেকে ৬ লাখ টন চাল আমদানির জন্য অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি অনুমোদন দেয়। সে অনুযায়ী পাকিস্তান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ৫০ হাজার টন আতপ চাল রপ্তানির প্রস্তাব দেয় বাংলাদেশকে।
প্রতি টন ৪৯৯ মার্কিন ডলার হিসাবে পাকিস্তান থেকে ৫০ হাজার টন চালের আমদানিমূল্য দাঁড়ায় ২ কোটি ৪৯ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার; যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৩০৪ কোটি টাকার মতো।
উপদেষ্টা পরিষদের ওই বৈঠকে ভারত থেকেও ৫০ হাজার টন সেদ্ধ চাল আমদানির প্রস্তাব অনুমোদিত হয়। তবে ভারত থেকে সেই চাল আসছে উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে। সর্বনিম্ন দরদাতা হিসাবে কাজটি পেয়েছে সে দেশের গুরুদিও এক্সপোর্টস করপোরেশন।
ভারত থেকে আসা চালের টন প্রতি দাম পড়ছে ৪৫৪ দশমিক ১৪ মার্কিন ডলার। তাতে ৫০ হাজার টন চাল আমদানিতে ব্যয় হবে ২ কোটি ২৭ লাখ ৭ হাজার ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় তা প্রায় ২৭৭ কোটি টাকা।
আবার বাংলাদেশ ভিয়েতনাম থেকে যে চাল আমদানি করেছে, তার প্রতি টনের দাম পড়ে ৪৭৪ ডলার ২৫ সেন্ট। ভিয়েতনাম থেকে প্রতি টন ৪৭৪ দশমিক ২৫ ডলার দরে, এক লাখ টন চাল কিনেছে বাংলাদেশ। সে হিসেবে এক কেজি চালের দাম পড়েছে ৫৭ টাকার একটু বেশি।
অপরদিকে পাকিস্তান থেকে প্রতি টন (১ হাজার কেজি) চাল কেনা হচ্ছে ৪৯৯ ডলারে। দেখা যাচ্ছে, ইসলামাবাদ থেকে প্রতি কেজি চাল কিনতে বাংলাদেশের লাগছে প্রায় ৬১ টাকা।
পাকিস্তান থেকে কেনা ৫০ হাজার টনের অর্ধেক চাল আগামী ৩ মার্চ আসবে। গত মাসে এই চাল কেনার চুক্তি হয়। সরকার-সরকার চুক্তির আওতায় এসব চাল সরবরাহ করবে পাকিস্তান ট্রেডিং কর্পোরেশন।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বাজারে চালের দাম ১৫ থেকে ২০ শতাংশ বেড়েছে। মাঝারি মানের প্রতি কেজি চাল প্রায় ৮০ টাকায় (দশমিক ৬৬ ডলার) বিক্রি হচ্ছে। এমন পরিস্থিতে বাজার স্থিতিশীল করতে চাল আমদানিতে নজর দেওয়া হয়েছে। এছাড়া চালের ওপর থেকে তুলে দেওয়া হয়েছে আমদানি শুল্কও।
পাকিস্তান থেকে যেসব চাল আনা হবে সেগুলো বাংলাদেশ সরকার ওপেন মার্কেট সেল (ওএমএস) আওতায় বিক্রি করবে। সেখানে প্রতি কেজি চালের দাম ধরা হবে ৩০ টাকা। সবমিলিয়ে দেশের ৯০৬টি কেন্দ্রে প্রতিদিন ৯০৭ টন চাল বিক্রি করা হবে।
সরকার থেকে সরকার (জি-টু-জি) পর্যায়ে এই চাল আমদানি করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সংগ্রহ ও সরবরাহ অনুবিভাগ) জিয়াউদ্দীন আহমেদ। তিনি মঙ্গলবার বলেন, মজুত বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন দেশ থেকে চাল আমদানি করা হচ্ছে। তার অংশ হিসাবেই পাকিস্তান থেকে ৫০ হাজার টন চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তার প্রথম চালান ২৫ হাজার টন ৩ মার্চ আসবে।
গত ১৪ জানুয়ারি পাকিস্তান থেকে জি টু জি ভিত্তিতে আতপ চাল আমদানির জন্য ট্রেডিং করপোরেশন অব পাকিস্তান ও খাদ্য অধিদপ্তরের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হয়। ট্রেডিং করপোরেশন অব পাকিস্তানের চেয়ারম্যান সৈয়দ রাফিও বশির শাহ এবং খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আব্দুল খালেক এ সমঝোতা স্মারকে নই করেন।
তার আগে ১৬ জানুয়াারি সচিবালয়ে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে পাকিস্তান থেকে ৫০ হাজার টন চাল আমদানির প্রস্তাব অনুমোদিত হয়।
এদিকে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ চাল উৎপাদনকারী দেশ। তা সত্ত্বেও বিপুল পরিমাণ চাল অন্য দেশ থেকে কিনতে হয়। ২০২৩ সালেও বাংলাদেশ দুই লাখ টন চাল আমদানি করেছিল। সেগুলো আনা হয়েছিল ভারত, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম এবং মিয়ানমার থেকে। এবারও এসব দেশ থেকে চাল আসছে। তবে তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পাকিস্তান।