Home বাণিজ্য ‘এলসি’ যেভাবে খুলবেন

‘এলসি’ যেভাবে খুলবেন

ইকবাল হোসেন
৪৫৫ views

আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে পণ্যের মূল্য পরিশোধের একটি নিরাপদ মাধ্যম হল লেটার অব ক্রেডিট বা এলসি। আমদানি-রপ্তানিতে ক্রেতা এবং বিক্রেতা ভিন্ন দেশে অবস্থান করে বিধায় উভয়ের মধ্যে একটা আশংকা বিরাজ করে। ক্রেতা ভয় পায় পণ্য ঠিকঠাক মত বুঝে পাবে কিনা আর বিক্রেতার ভয় থাকে পণ্যমূল্য পাবে কিনা। এক্ষেত্রে লেটার অব ক্রেডিট হল সেই মাধ্যম যা ব্যাংকের মাধ্যমে বিক্রেতার মূল্য পরিশোধের এবং ক্রেতার কাছে তার পণ্য সঠিকভাবে প্রেরণের নিশ্চয়তা দেয়। এলসি ব্যাংকের দেয়া এক ধরনের গ্যারান্টি যার মাধ্যমে আমদানিকারক ও রপ্তানীকারকের মধ্যে বিশ্বস্ততা অর্জিত হয় এবং তারা এই মর্মে নিশ্চিত হয়ে যে বিক্রেতা তার পণ্যের মূল্য পাবে এবং ক্রেতাও নিশ্চিত হয় যে তার হাতে পণ্য না আসা পর্যন্ত কোন লেনদেন সম্পন্ন হবে না।

এলসি খুলতে যা প্রয়োজন
এলসি খুলতে সবার প্রথমে একটা ব্যাংক একাউন্ট থাকতে হবে। এরপর ব্যাংক সাধারণত যে ডকুমেন্টস গুলো চায় তা হলো:
১) সেই ব্যাংকে কোম্পানির নামে একটা একাউন্ট
২) কোম্পানির ট্রেড লাইসেন্স
৩) যে পণ্য আনা হবে তার ইনডেন্ট কালেক্ট করা। যেমনঃ কেউ যদি কোরিয়া থেকে কোন পণ্য আমদানি করতে চায় তাহলে যে কোম্পানি থেকে পণ্য আনবে সে কোম্পানির বাংলাদেশ প্রতিনিধির কাছে গিয়ে দাম ঠিক করে একটা ডকুমেন্ট নেবে। এটাই ইনডেন্ট। আর সে কোম্পানির যদি বাংলাদেশ প্রতিনিধি না থাকে তাহলে সে কোম্পানিতে সরাসরি মেইল করে দাম ঠিক করে ডকুমেন্ট আনবে। তখন এটাকে বলা হয় পি আই বা প্রফরমা ইনভয়েস। এতে পণ্যের বিস্তারিত, দাম, পোর্ট অব শিপমেন্ট এসব তথ্যাদি থাকে।
৪) ব্যাংক থেকে এলসি ফর্ম সংগ্রহ করে তা পূরন করে ব্যাংকে  জমা দেয়ার সময় লাগবে আই এম পি ফরম, ব্যাংক চুক্তি সংক্রান্ত ডকুমেন্ট, গ্যারান্টি ফরম, যদি এল সি খোলার সময় জামানত বা সিকিউরিটি প্রদান করতে হয় তাহ’লে উক্ত জামানত বা সিকিউরিটির সঙ্গে সম্পৃক্ত সকল কাগজপত্র ব্যাংকে জমা দিতে হবে।
৫) এলসি মার্জিন জমা দেয়া অর্থাৎ ব্যাংক এ টাকা জমা দিতে হবে। ৬) টিন সার্টিফিকেট
৭) ভ্যাট সার্টিফিকেট
৮) জাতীয় পরিচয় পত্র কপি
৯) ব্যাংক চুক্তি সংক্রান্ত ডকুমেন্ট
১০) গ্যারান্টি ফরম ইত্যাদি
এরপর ব্যাংক এলসি হোল্ডারকে এলসির একটা কপি দেবে। অরিজিনালটা পাঠিয়ে দিতে হবে বিদেশে সেলারের কাছে।

 

পণ্য আমদানি

ছবি: ফ্রীপিক

 

গার্মেন্টস ব্যবসায় এলসি যেভাবে খুলতে হয়
ইমপোর্ট রেজিষ্ট্রেশন সার্টিফিকেট (আইআরসি), এল সির মাধ্যমে আমদানি: এল সি-এর ধরন নির্ধারন, এল সি খোলার জন্য কি কি ডকুমেন্ট প্রয়োজন, কোলেটারেল সিক্যুরিটি প্রদান, শিল্প কারখানার মূল মেশিন/ পণ্য আমদানির জন্য প্রয়োজনীয় দলিলপত্রাদি, মূল যন্ত্রপাতি আমদানি ঋণপত্র খোলা, এল সি পরীক্ষা করা, রপ্তানি, আমদানি ও মাল খালাস, বিনিময় বিল এফ.ও.বি. মূল্য, সি.এফ.আর মূল্য এবং সি.আই.এফ. মূল্য, আমদানির জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস, বিল অব লেডিং সংগ্রহ, ব্যাক টু ব্যাক এল সি, ইমপোর্ট রেজিষ্ট্রেশন সার্টিফিকেট।
ইমপোর্ট রেজিষ্ট্রেশন সার্টিফিকেট পেতে যেসব ধাপ অনুসরন করতে হয়: আমদানি ও রপ্তানির চীফ কন্ট্রোলারের অফিস থেকে ফরম সংগ্রহ । বাংলাদেশ ব্যাংক বা সোনালী ব্যাংকের শাখায় সিডিউল ফি জমা। প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টসহ আবেদন জমা দিতে হবে।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র: ট্রেড লাইসেন্স, পাসপোর্ট সাইজের ছবি (৩ কপি), টিন নম্বর, চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রিজ বা সংশ্লিষ্ট এসোসিয়েশন হতে মেম্বারশীপ সার্টিফিকেট, ট্রেজারী চালানের মূল কপি, পার্টনারশীপ বিজনেস হলে পার্টনারশীপ ডিড এর কপি, লিমিটেড কোম্পনির ক্ষেত্রে সার্টিফিকেট অব ইনকর্পোরেশন, আর্টিক্যাল অব এসোসিয়েশন, মেমোরেন্ডাম অব এসোসিয়েশন। বিস্তারিত তথ্যের জন্য আমদানি ও রপ্তানির চীফ কন্ট্রোলারের অফিস, ১১১-১১৩ মতিঝিল বা/এ, ঢাকা- এ ঠিকানায় যোগাযোগ করা যেতে পারে।

বিভিন্ন ধরনের এলসি
রিভোকেবল: যেকোন সময় ক্রেতার মাধ্যমে বা ইস্যুয়িং ব্যাংকের মাধ্যমে পরিবর্তন করা যায়। এক্ষেত্রে বেনিফিশিয়ারিকে নোটিশ দেয়ার দরকার নেই।
ইরেভোকেবল: উভয়পক্ষ একমত না হলে ইস্যুয়িং ব্যাংক লেটার অব ক্রেডিটের কোন পরিবর্তন করতে পারবে না।
স্ট্যান্ডবাই: স্ট্যান্ডবাই এলসি যেকোন ভুলের ক্ষেত্রে সেলারকে পেমেন্ট প্রেরণের নিশ্চয়তা প্রদান করে।
কনফার্মড: যখন এডাভাইজিং ব্যাংক বিক্রেতাকে পেমেন্টের নিশ্চয়তা দেয়।
আনকনফার্মড: একমাত্র ইস্যুয়িং ব্যাংকের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয় সেকেন্ড ব্যাংকের নিশ্চয়তার দরকার করা হয় না।
রিভলভিং: আমদানিকারক ও রপ্তানিকারকের মধ্যে কতিপয় দেনা পাওনা মেটাতে সমর্থ রিভলভিং এলসি।
ব্যাক টু ব্যাক: রপ্তানিকারকের অনুকূলে এলসি খোলার পর যখন পণ্য সরবরাহ করার মতো প্রয়োজনীয় মূলধন রপ্তানিকারকের থাকে না তখনই ব্যাক টু ব্যাক এলসি ইস্যু হয়ে থাকে। ব্যাক টু ব্যাক এল সি’র মাধ্যমে রপ্তানিকারক রপ্তানির উদ্দেশ্যে পণ্য ক্রয়, প্রক্রিয়াজাতকরণ, প্রস্তুতকরণ এবং প্যাকেজিং এর জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের বন্দোবস্ত করে।
রেড ক্লজ: বিক্রেতার কাছ থেকে লিখিত অনুমোদন পাওয়ার পর পণ্য প্রেরণ করার পূর্বেই অগ্রীম অর্থ প্রদান করা হয়।
ডাইরেক্ট পে: এই লেটার অব ক্রেডিটে ইস্যুয়িং ব্যাংক বেনিফিশিয়ারিকে ডাইরেক্টলি অর্থ পরিশোধ করে।
ডিফারড পেমেন্ট: এই এলসিতে বিলম্বে অর্থ পরিশোধ করা যায়। 

এলসির সুবিধা ও অসুবিধা
আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে এক দেশ থেকে আরেক দেশে পণ্য ক্রয় বিক্রয়ের মধ্যে একটা ঝুঁকি থাকে। দুইটি ভিন্ন দেশের মধ্যে বাণিজ্য স্থাপনে নিশ্চিত গ্যারান্টি দিয়ে থাকে লেটার অব ক্রেডিট বা এলসি। এটি অর্থ পরিশোধ এবং প্রাপ্তির একটি নিরাপদ মাধ্যম। এর ফলে বিক্রেতা এ ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারেন যে, সে কত টাকা পাবে কোন সময়ে পাবে। অবশ্য এজন্য তাকে এল সি-তে বর্ণিত শর্ত পুরোপুরি ভাবে পালন করতে হয়। অর্থ না পাওয়ার ঝুঁকি এল সি-তে ব্যক্তির থেকে ব্যাংকের কাছে স্থানান্তর হয়। অপরদিকে এলসি ব্যবহারের ক্ষেত্রে ক্রেতা বুঝতে পারে যে, বিক্রেতা তার শর্ত সঠিকভাবে পূরণ করেছে কারণ প্রতিটি ধাপে তাকে ডকুমেন্টারি এভিডেন্স ব্যাংকে জমা দিতে হয়। ফলে ক্রেতার মনে পণ্য ঠিকমতো না পাওয়ার যে আশংকা সেটা আর থাকেনা।

লেটার অব ক্রেডিট এর অসুবিধা হলো এটি ব্যবহারের ফলে ক্রেতা বিক্রেতা উভয়কেই অতিরিক্ত অর্থ খরচ বহন করতে হয়। এটি প্রতিপালনের জন্য ব্যাংক একটি নির্দিষ্ট হারে চার্জ আদায় করে। লেটার অব ক্রেডিট ব্যবহারের ফলে পণ্য ডেলিভারিতে দেরি হতে পারে।

আরও যা পড়তে পারেন

কমেন্ট করুণ