এবার বাংলাদেশ সরকারের কাছে বকেয়া বিদ্যুৎ বিল বাবদ ১৩৫ কোটি রুপি চেয়েছে ত্রিপুরা সরকার। বিদ্যুৎচুক্তি নিয়ে আদানি শিল্প গ্রুপের সঙ্গে টানাপোড়নের মধ্যেই ত্রিপুরা সরকার বাংলাদেশকে বকেয়া পরিশোধের তাগাদা দিয়েছে। খবর হিন্দুস্তান টাইমসের।
বিদ্যুৎ পাঠানো নিয়ে ভারতের ‘ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার কর্পোরেশনে’র সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের চুক্তি হয়েছিল। ‘বিদ্যুৎ ব্যাপার নিগম লিমিটেড’ মাধ্যমে এই চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী, প্রতি ইউনিটের জন্য একটি নির্দিষ্ট অর্থ ধার্য করেছিল ত্রিপুরা সরকার। সেই অর্থের বিনিময়ে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ পাঠায় তারা। কিন্তু ত্রিপুরা সরকার জানিয়েছে, বাংলাদেশের কাছে বিদ্যুৎ বিল বাবদ অনেক টাকা বকেয়া রয়েছে।
ত্রিপুরার বিদ্যুৎমন্ত্রী রতলনাথ রোববার (১ ডিসেম্বর) বাংলাদেশের বকেয়া নিয়ে মন্তব্য করেন। তবে তিনি এও জানিয়েছেন, নিয়মিত বকেয়া মিটিয়ে দিচ্ছে বাংলাদেশ। রতলনাথ বলেন, ‘যদিও ১৩৫ কোটি রুপি বকেয়া রয়েছে, তবে বাংলাদেশ নিয়মিতভাবে অর্থ প্রদান করছে।’ বিদ্যুৎমন্ত্রী আরও বলেন, বিদ্যুৎ বাবদ প্রতি ইউনিটের হিসাবে ৬.৬৫ রুপি করে নেয় ত্রিপুরা সরকার।
ত্রিপুরা স্টেট ইলেকট্রিসিটি কর্পোরেশন লিমিটেড (টিএসইসিএল) বিদ্যুৎ সরবরাহ করে থাকে বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভলপমেন্ট বোর্ডকে (বিপিডিবি)। কিন্তু বকেয়া ১০০ কোটি ছাড়িয়ে যেতেই বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করেছিল টিএসইসিএল। চলতি বছরের মে মাসে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।
সরকারি কর্মকর্তারা জানান, গত এক বছর ধরে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ সময়মতো বিদ্যুতের টাকা দিতে পারেননি। ফলে বকেয়া বেড়েছে। বিদ্যুৎমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করছি বকেয়া টাকা ফিরিয়ে আনার জন্য। বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে চিঠিও লিখেছি, আমি ব্যক্তিগত ভাবে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করেছি।’ শুধু তা-ই নয়, ভারতের কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎমন্ত্রীর সঙ্গে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করেছেন বলে জানিয়েছেন রতনলাল।
আদানিদের সঙ্গে বিদ্যুৎ নিয়ে সমস্যা চলছে বাংলাদেশ সরকারের। ২০১৭ সালে শেখ হাসিনার আমলে আদানি গোষ্ঠীর বিদ্যুৎ-চুক্তি হয়েছিল। কিন্তু এই চুক্তিতে একাধিক অনিয়ম ধরা পড়ায় গত সপ্তাহে বাংলাদেশের হাইকোর্ট তদন্তের নির্দেশ দেয়। তদন্তের জন্য বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনেরও নির্দেশ দেয় আদালত। আগামী ফেব্রুয়ারিতে ওই কমিটির রিপোর্ট দেওয়ার কথা। এর পাশাপাশি ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারও আদানি-সহ ছ’টি সংস্থাও সঙ্গে হওয়া বিদ্যুৎচুক্তি খতিয়ে দেখছে। কিন্তু বাংলাদেশের বিদ্যুৎমন্ত্রী জানিয়েছেন, তারা এখনই চুক্তি বাতিলের পথে হাঁটছে না। আদালতের নির্দেশের পরই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে।
অন্যদিকে, সম্প্রতি আদানি গ্রুপ বাংলাদেশ সরকারকে চিঠি দিয়ে জানায়, বিদ্যুতের বকেয়া বিল বাবদ ৮০ কোটি ডলার বকেয়া রয়েছে। জবাবে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার জানায়, দেশে ডলার সঙ্কট সত্ত্বেও তারা আদানি গ্রুপকে ১৫ কোটি ডলার দিয়েছে। বাকি টাকাও মেটানো হবে বলে আশ্বস্ত করে ঢাকা।