Home বাংলাদেশ ৩৫ বছরে এমন ভয়াবহ বন্যা দেখেনি শেরপুরবাসী

৩৫ বছরে এমন ভয়াবহ বন্যা দেখেনি শেরপুরবাসী

নিজস্ব প্রতিবেদক
৮৯ views

বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় শেরপুরের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। বেড়েছে বিভিন্ন নদীর পানি। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। গত ৪ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া বন্যায় এ পর্যন্ত ৭ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। অনেকেই নিখোঁজ রয়েছেন।

পানিবন্দি মানুষদের উদ্ধারে কাজ করছে স্থানীয় প্রশাসনসহ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও বিজিবি। এছাড়া নালিতাবাড়ী সেনাবাহিনীর সদস্যরাও উদ্ধার কাজে যুক্ত হয়েছেন।

শনিবার (৫ অক্টোবর) সকাল থেকে নতুন করে শেরপুর সদর এবং নকলা উপজেলার আরও ৬টি ইউনিয়ন পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া নতুন নতুন আরও এলাকা প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে।

শেরপুরের মহারশি, সোমেশ্বরী, চেল্লাখালি, ভোগাই ও মৃগী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ পর্যন্ত শেরপুরের ৫টি উপজেলার ২৮টি ইউনিয়নের দুই শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। আর পানিবন্দি হয়ে পড়েছে দেড় লাখের বেশি মানুষ।

বন্যায় শনিবার রাতে নকলায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া নালিতাবাড়ী উপজেলায় পাঁচজন ও ঝিনাইগাতীতে একজনের মৃত্যু হয়েছে। শুধু ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলায় ২ হাজার ৫৭টি মাছের ঘের ভেসে গেছে। ক্ষতির পরিমাণ প্রাথমিক হিসাবে ১১ কোটি টাকার বেশি।

কৃষি অফিস বলছে, জেলার অন্তত ৩০ হাজার হেক্টর আমন আবাদ ও ১ হাজার হেক্টর সবজির আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে অন্তত ৭০ হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

যেসব মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে সেগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ বিষয়ে জেলা শিক্ষা অফিস জানায়, আশ্রয়কেন্দ্র খোলা বিদ্যালয়গুলো বন্ধ থাকবে। তবে যেসব এলাকায় পানি নেই সেখানে রেগুলার ক্লাস চলবে।

শনিবার সকাল থেকেই নালিতাবাড়ী উপজেলায় উদ্ধার এবং ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করেছে সেনাবাহিনী। ৬টি স্পিডবোটের মাধ্যমে ৬০ জন সেনাসদস্য উদ্ধারকাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

ঝিনাইগাতী উপজেলা অফিস জানায়, পানিবন্দি মানুষদের সঠিকভাবে উদ্ধার করা হচ্ছে। অনেককে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাদের জন্য বিশুদ্ধ পানি ও শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। উপজেলার ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

নালিতাবাড়ী উপজেলা অফিস জানায়, নালিতাবাড়ীতে আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে ১২৩টি। এর মধ্যে ৫৮টি আশ্রয়কেন্দ্রে ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে ৫টি ইউনিয়নে বেশি ক্ষতি হয়েছে।

ভারত থেকে নেমে আসা ঢল ও ভারি বৃষ্টিতে বন্যার স্রোতে ভেসে গেছে ঘর, আসবাবপত্র, গবাদিপশু। বাড়ছে খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট।

শেরপুরবাসী এমন ভয়াবহ বন্যা দেখেনি বহুদিন। ১৯৮৮ সনের পর এমন বন্যা দেখলেন শেরপুরের ঝিনাইগিতী উপজেলার ফাকরাবাদ এলাকার বাসিন্দারা। স্থানীয়রা বলছেন, তাদের ধারণা এবারের বন্যা আরও বেশি ভয়াবহ। পরিস্থিতি আরও খারাপ হয় কিনা, সেই চিন্তায় আছেন তারা।

মহারশি নদীর তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, রান্নাঘর, গোয়ালঘর, টিউবওয়েল ও টয়লেট সব পানির নিচে ডুবে গেছে। চুলায় এখনো আগুন জ্বলেনি। বিছানার ৩ ফুট উপর দিয়ে পানি যাচ্ছে। চারদিকে পানি, কাঁচা ঘর কখন ভেঙে যায়, এ শঙ্কায় তার ঘুম নেই। সঙ্গে রয়েছে সাপের উপদ্রবও।

নালিতাবাড়ী উপজেলার ঘোগড়াকান্দি এলাকাবাসী জানায়, বাড়ি ঘরে পানি ওঠায় রান্না করতে পারছেন না। গরুগুলোকেও খাদ্য দিতে পারছে না। পরিবার নিয়ে খুব বিপদে রয়েছেন তারা।

শ্রীবরদী উপজেলার কুড়িকাহানিয়া এলাকাবাসীরও বেহাল দশা। আগে এমন বন্যার ভয়াবহতা দেখেনি তারা। একটা ফার্নিচারও ব্যবহার করার মতো নেই। এতো ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে যে, বলে বোঝাতে পারছেন না। যেভাবে পানি বাড়ছে তাতে অবস্থা আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে।

শেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, শনিবার (৫ অক্টোবর) সকাল ৯টা পর্যন্ত বৃষ্টির পরিমাণ রেকর্ড করা হয়েছে শেরপুরে ৩৭ মিলিমিটার এবং নালিতাবাড়ীর দুটি পয়েন্টে ১৭০ ও ১০০ মিলিমিটার।

আরও যা পড়তে পারেন

কমেন্ট করুণ