Home বাংলাদেশ দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় নারীর প্রতি সহিংসতা বেশি

দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় নারীর প্রতি সহিংসতা বেশি

নিজস্ব প্রতিবেদক
৪০ views

সে আমার স্বামী, তাই বলে কি মারার অধিকার আছে? প্রশ্নটি তুলেছিলেন ১৯ বছর বয়সী নাহিদা। যিনি স্বামীর নির্যাতন থেকে রক্ষা পেতে কয়েক মাস আগে বরিশাল থেকে ঢাকায় পালিয়ে এসেছেন।

এই অভিজ্ঞতা নাহিদার একার নয় বরং অনেকেরই। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো ও জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (UNFPA)-এর নারীর প্রতি সহিংসতা জরিপ ২০২৪ বলছে, বরিশাল ও খুলনায় স্ত্রীর প্রতি সহিংসতা সবচেয়ে বেশি ঘটে।

জরিপ অনুযায়ী জীবদ্দশায় অন্তত একবার স্বামী বা সঙ্গীর হাতে শারীরিক, মানসিক, যৌন, অর্থনৈতিক সহিংসতা বা নিয়ন্ত্রণমূলক আচরণের শিকার হয়েছেন এমন নারীর হার অনেক। যা বরিশালে ৮২%, খুলনায় ৮১%। অন্যদিকে চট্টগ্রাম ৭৬%, ময়মনসিংহ ৭৫%, রাজশাহী ৭৫%, রংপুর ৭৪%, ঢাকা ৭৩% ওসিলেট ৭৩% (তুলনামূলকভাবে সর্বনিম্ন)।

এছাড়া গত ১২ মাসে সহিংসতার শিকার হয়েছেন এমন নারীর হার বরিশালে ৫৭%। চট্টগ্রাম ও রংপুর ৫৩%, খুলনা ৫২%, সিলেট ৫০%, ময়মনসিংহ ৪৮%, ঢাকা ৪৫% ও রাজশাহীতে ৪১% (তুলনামূলকভাবে সর্বনিম্ন)।

এই জরিপে দেখা যায়, প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় নারীর ওপর সহিংসতার হার সবচেয়ে বেশি। এমন এলাকায় পুরো জীবদ্দশায় সহিংসতার হার ছিল ৮১%। যা গত ১২ মাসে ৫৩%।

অন্যদিকে দুর্যোগপ্রবণ নয় এমন এলাকায় এই হার ছিল যথাক্রমে ৭৪% ও ৪৭%। বিশেষজ্ঞদের মতে, দুর্যোগপ্রবণ অঞ্চলগুলোতে পরিবেশগত চাপ, জীবিকা সংকট ও সামাজিক কাঠামোর ভঙ্গুরতা নারীদের ওপর সহিংসতা বাড়ায়।

১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী কিশোরীরা সবচেয়ে বেশি সহিংসতার শিকার জরিপে এমনটাই দেখা যাচ্ছে। এই বয়সী নারীদের ৬২% গত এক বছরে কোনো না কোনো ধরনের সহিংসতার শিকার হয়েছেন। তারা অনেক সময় সামাজিকতার ভয়ে মুখ খুলতে পারেন না তাই নীরবে সহ্য করেন।

সিলেটে সহিংসতা তুলনামূলক কম
সিলেট বিভাগে সহিংসতার হার দেশের মধ্যে সবচেয়ে কম (৭৩%) হলেও, এটা মোটেও নিরাপদ অঞ্চল দাবি করার মতো নয়। তবে কিছু সামাজিক বাস্তবতা এখানে ভূমিকা রাখছে। এখানে অনেক পরিবারের পুরুষ বিদেশে থাকেন। ফলে নিয়ন্ত্রণমূলক আচরণ তুলনামূলক কম। সিলেটে নারীরা অনেক সময় নির্যাতনের ঘটনা গোপন রাখেন। যার ফলে কিছু তথ্য জরিপে ধরা না-ও পড়তে পারে এমন ধারণা করা হয়। আবার সহিংসতা থাকলেও অনেকে এটাকে পারিবারিক বিষয় বলে আড়াল করেন।

মানবাধিকার আইনজীবী কামরুন্নাহার বলেন, মার খাওয়ার পরও অনেক স্ত্রী বলে স্বামী তো একটু আধটু মারতেই পারে। এই মানসিকতা ভাঙতে না পারলে আইনের প্রয়োগও ব্যর্থ।
এই আইনিজীবী বলেন, গ্রামে নারীর গায়ে হাত তোলা যেন স্বাভাবিক। বরং প্রতিবাদ করলেই সমস্যা। অথচ একজন নারীর সম্মান পাওয়া স্বাভাবিক।

নারীর প্রতি সহিংসতা কমাতে পারিবারিক শিক্ষায় নারীকে সম্মান করা শেখাতে হবে বলে জানান এই আইনজীবী। এছাড়া আইন প্রয়োগে কঠোরতা ও দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে হবে। দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় বিশেষ সুরক্ষা উদ্যোগ নিতে হবে। সাক্ষরতা ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতা বৃদ্ধির পদক্ষেপ নিতে হবে। টোল ফ্রি হেল্পলাইন ও নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্র ছড়িয়ে দেওয়াও জরুরি।

সমাজে নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি দেখে ওই সমাজ কতটা এগিয়েছে তা পরিমাপ করা হয়। স্বামী যদি স্ত্রীকে ভালোবাসার বদলে আঘাত করেন, সমাজ যদি তা সহ্য করে শিখো বলে ধামাচাপা দেয়। তাহলে সেই সমাজের উন্নয়ন মানচিত্রে বড় বিষফোঁড়ার মতো দেখাবে। সত্যিকারের উন্নয়ন তখনই সম্ভব যখন নারীকে নারী হিসেবে নয়; একজন মানুষ হিসেবে তার প্রাপ্য সম্মান দেয়া হবে।

আরও যা পড়তে পারেন

কমেন্ট করুন