সেন্ট মার্টিনে পর্যটকদের যাতায়াতে ৯ মাসের জন্য ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। অথচ এর আগে ৩১ মার্চ পর্যন্ত পর্যটক যেতে পারতেন বলে ঘোষনা দেয়া হয়েছিল। এ বছর পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় থেকে পর্যটক ভ্রমণের সময় কমানোর পাশাপাশি নানা বিধিনিষেধ জারি হয়েছে। কক্সবাজারের টেকনাফের প্রবালসমৃদ্ধ দ্বীপটি নিয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দ্বীপটিতে ভ্রমণে যেতে পারবেন পর্যটকেরা।
ভ্রমণের সময় কমানোর কারণে ক্ষতির মুখে পড়বেন বলে দাবি পর্যটন ব্যবসায়ীদের।পর্যটন ব্যবসায়ীরা জানান, নভেম্বরে পর্যটকদের সেন্ট মার্টিনে রাত্রিযাপন নিষিদ্ধ করা হয়। ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে দুই হাজার পর্যটক যাওয়া এবং রাত্রিযাপনের সুযোগ রাখা হয়েছে। তবে ফেব্রুয়ারি থেকে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। অথচ আগে ৩১ মার্চ পর্যন্ত পর্যটক যেতে পারতেন।
সেন্ট মার্টিনে ১২টি জাহাজ পর্যটক নিয়ে যাতায়াত করে আসছে। টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন, ইনানী-সেন্ট মার্টিন, কক্সবাজার-সেন্ট মার্টিন ও চট্টগ্রাম-সেন্ট মার্টিন—এই চারটি নৌপথ দিয়ে এত দিন জাহাজ চলাচল করে আসছিল। এর মধ্যে বর্তমানে কেবল কক্সবাজার-সেন্ট মার্টিন নৌপথে জাহাজ চলাচল করছে। টেকনাফ থেকে নাফ নদী হয়ে সেন্ট মার্টিনে যাতায়াত করতেন অধিকাংশ পর্যটক। তবে মিয়ানমারের রাখাইনের সংঘাতময় পরিস্থিতির কারণে নৌপথটিতে জাহাজ চলাচল বন্ধ করা হয়।
কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়ার বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকে বর্তমানে জাহাজ চলাচল অব্যাহত রয়েছে। এ ঘাট থেকে ছয় ঘণ্টার যাত্রা শেষে পর্যটকেরা সেন্ট মার্টিনে পৌঁছান। এ নিষেধাজ্ঞার ফলে ভ্রমণপিপাসুদের মধ্যে হতাশা কাজ করছে বলে জানান একটি বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত শফিক আহমেদ। এ প্রসঙ্গে তিনি হ্যালো বাংলাদেশকে জানান,প্রতিবছর ফ্যামিলি নিয়ে কক্সবাজার-সেন্ট মার্টিন ভ্রমণে যাই। বিশেষ করে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে যাওয়া হয়। এখন ৯ মাসের জন্য ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞার কারণে আমার মতো অনেকের সেন্ট মার্টিন যাওয়া হবে না।
সেন্ট মার্টিন হোটেল-মোটেল-রিসোর্ট মালিক সমিতির সভাপতি এম এ আবদুর রহিম জিহাদী জানান, অতীতে এ রকম কোনো সংকট দ্বীপে তৈরি হয়নি। এখন যদি দ্বীপে পর্যটক আসা বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে নানামুখী সংকটে পড়বেন বাসিন্দারা। দ্বীপে পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত রয়েছেন শত শত মানুষ। তাই মানবিক দিক বিবেচনায় পর্যটকদের জন্য ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সেন্ট মার্টিন দ্বীপ উন্মুক্ত করার দাবি জানাচ্ছি।
সেন্ট মার্টিন দ্বীপের স্থানীয় বাসিন্দা নুর মোহাম্মদ বলেন, ‘দুই মাসের আয় দিয়ে সেন্ট মার্টিনের বাসিন্দাদের বাকি ১০ মাস চলা সম্ভব নয়। এ জন্য ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দ্বীপে পর্যটক আসা উন্মুক্ত রাখা প্রয়োজন।’
সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, দ্বীপের সাড়ে ১০ হাজার মানুষের জীবিকা পর্যটনের সঙ্গে যুক্ত। পর্যটন মৌসুমে কিছু ব্যবসা করে সারা বছর তারা সংসার চালান। জাহাজ চলাচল ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানো গেলে বাসিন্দারা উপকৃত হতেন।
সি-ক্রুজ অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম জানান, অন্তত ফেব্রুয়ারি মাস পর্যটকদের জন্য সেন্ট মার্টিন উন্মুক্ত রাখার অনুরোধ করছি। এতে দ্বীপের মানুষের এবং ব্যবসায়ীদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সহজ হবে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ইমরান হোসাইন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা ছাড়া ভ্রমণের সময় বাড়ানো সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন। তিনি জানান, ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত সেন্ট মার্টিনগামী জাহাজগুলো চলাচল করতে পারবে। এরপর আর পর্যটকবাহী জাহাজ সেন্ট মার্টিনে চলাচল করতে দেওয়া হবে না। যদি সরকার ভ্রমণের সময় বাড়ায়, তখন নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উল্লেখ্য, ১৭ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের দ্বীপটিতে বসবাস করে ১০ হাজারের বেশি মানুষ।
