ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে দীর্ঘ ১১ ঘণ্টা যাবৎ রাজধানীর ব্যস্ততম শাহবাগ মোড় আটকে রেখে অবশেষে অবরোধ ছাড়লেন বেসরকারি পোস্ট গ্রেজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসকরা। রাত ১০টার দিকে নতুন কর্মসূচি দিয়ে তারা শাহবাগ ছাড়েন। এর আগে সকাল ১১টার শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিয়ে যানচলাচল বন্ধ করে দেন তারা।
এদিকে নতুন বছরের জানুয়ারি থেকে ৩৫ হাজার টাকা ও জুলাই থেকে ৫০ হাজার টাকা ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে ৩০ ডিসেম্বর প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনে যাওয়ার কর্মসূচি দিয়েছেন ট্রেইনি চিকিৎসকরা।
২৯ ডিসেম্বর রাত সাড়ে দশটায় আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস মুভমেন্ট ফর জাস্টিস সোসাইটির সভাপতি ডা. জাবির হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আজকের মতো আমরা আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিত ঘোষণা করেছি। তবে আমরা আমাদের দাবিগুলো স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমকে জানাতে সোমবার সকাল ১১টার দিকে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনে যাব। এটাই আপাতত আমাদের পরবর্তী কর্মসূচি।’

নতুন কর্মসূচি দিয়ে শাহবাগ ছাড়লেন চিকিৎসকরা, ছবি: হ্যালো বাংলাদেশ
তিনি বলেন, ‘আমরা জানি আমাদের স্বাস্থ্য উপদেষ্টা খুবই প্রজ্ঞাবান ব্যক্তি। তিনি নিশ্চয়ই আমাদের কষ্টগুলো বুঝবেন। আমাদের এখন একটা আশা, তিনি যদি আমাদের সমস্যাগুলো বুঝেন, আশা করি ভালো কিছু হবে।’
একই দিন রাত সাড়ে ৯টায় দিকে আন্দোলনরত চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলতে আসেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। এ সময় তিনি ট্রিইনি চিকিৎসকদের আগামী জুলাই থেকে ভাতা বাড়িয়ে ৩৫ হাজার টাকা করার আশ্বাস দেন। এমনকি দেশের সংকটময় সময়ে সরকারকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান। তবে চিকিৎসকরা তার আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
এর আগে গত ২৫ ডিসেম্বর জারি হওয়া ৩০ হাজার টাকা ভাতা প্রদানের প্রজ্ঞাপন প্রত্যাখ্যান করে রবিবার সকল থেকে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন ট্রেইনি চিকিৎসকরা। প্রত্যাশিত নবম গ্রেডের ৩৫ হাজার টাকা ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও মন গলছে না তাদের। দিনভর ঢাকার ব্যস্ততম মোড় শাহবাগ অবরোধ করে আন্দোলন করেন এই চিকিৎসকরা। এতে তীব্র যানজটে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় নগরবাসীর।
সাধারণ মানুষের এমন নাকাল অবস্থার জন্য দুঃখপ্রকাশ করলেও দাবি আদায়ে আর কোনো পথ খোলা নেই বলে জানান বিক্ষোভকারীরা চিকিৎসকরা।

দিনভর শাহবাগ মোড় অবরোধ করে আন্দোলন করায় তীব্র যানজটে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় নগরবাসীর, ছবি: হ্যালো বাংলাদেশ
তারা বলেন, ‘বিগত সরকার চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ৩০ হাজার টাকা কার্যকরের প্রতিশ্রুতি দিলেও সেটি কার্যকর হয় ডিসেম্বরে এসে। নতুন করে ৩৫ হাজার টাকা করা হলেও আগামী বছরের জুলাই থেকে কার্যকরের কথা বলা হচ্ছে। আমরা চাই জানুয়ারি থেকেই এই ভাতা কার্যকর করতে হবে। কারো আশ্বাসেই তারা আন্দোলন ছেড়ে যাবেন না।’
পরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক সায়েদুর রহমান আন্দোলনকারী চিকিৎসক ও রাজনৈতিক দলগুলোর চিকিৎসক সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বৈঠকে বসেন।
এতে জাতীয় নাগরিক কমিটির ডা. মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ, ডা. হুমায়ুন কবীর হিমু, বিএনপিপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যানোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) কোষাধ্যক্ষ ডা. শাকিল, জামায়াতপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন ন্যাশনাল ডক্টরস ফোরামের (এনডিএফ) সহ-সভাপতি অধ্যাপক ডা. আতিয়ার রহমান, আন্দোলনকারীদের প্লাটফর্ম ডক্টরস মুভমেন্ট ফর জাস্টিসের সভাপতি ডা. জাবির হোসেন, সাধারণ সম্পাদক ডা. নুরুন নবী উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, বৈঠকে আগামী বছরের জুন পর্যন্ত ৩০ হাজার টাকা এবং জুলাই থেকে ৩৫ হাজার টাকা করার প্রস্তাবনা দেওয়া হয় সরকারের পক্ষ থেকে। বৈঠকে থাকা সব পক্ষ এতে সম্মতি দেয়। সেই প্রস্তাব নিয়ে প্রতিনিধিরা শাহবাগে এলেও প্রত্যাখ্যান করেন আন্দোলনকারীরা।