Home স্বাস্থ্য ভিগান ডায়েটের যতকথা

ভিগান ডায়েটের যতকথা

নিজস্ব প্রতিবেদক
৯৪ views

ছোটবেলায় আমাদের শেখানো হতো ‘স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল’। বড়বেলায় এসে এই সুখের সন্ধানেই আমরা ডায়েটের দ্বারস্থ হই। না হয়ে উপায়ও নেই। ভালো খাদ্যাভ্যাস আমাদের মারাত্মক সব রোগ থেকে অনেক দূরে রাখতে পারে।  

ফ্যাশনে যেমন ট্রেন্ড আছে তেমনি ডায়েটেও আছে এমন ট্রেন্ড । একবিংশ শতাব্দীতে এসে আমরা পরিচিত হয়েছি নানা ধরণের ডায়েট ট্রেন্ডের সাথে। এর মধ্যে এগিয়ে আছে প্ল্যান্ট-বেসড বা উদ্ভিদভিত্তিক ডায়েট। এই নামটা থেকে বোঝা যাচ্ছে যে এটি এমন ডায়েট যেখানে শাকসবজির প্রাধান্য বেশি। প্ল্যান্ট-বেসড বা উদ্ভিদভিত্তিক ডায়েট দুই ধরনের। ভেজিটারিয়ান ও ভিগান। এখন এই দুইটি ডায়েটের জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। 

ভিগান লাইফ স্টাইলের প্রধান লক্ষ্য হলো কোনো প্রাণীকে ক্ষতিগ্রস্ত না করা। তাই যারা ভিগান তাঁরা এমন কোন ধরণের খাবারই গ্রহণ করেন না, যা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোন প্রাণী থেকে উৎপাদিত। তবে যারা ভেজিটারিয়ান তাঁরা কোন ধরণের মাছ বা মাংস খান না। তবে দুধ, পনির, দই, ডিম, মধু এসব খেতে পারেন। 

এশিয়াতে প্রাচীনকাল থেকেই বিভিন্ন ধর্মীলম্বিরা খাদ্য তালিকায় মাছ, মাংস রাখেন না। বিশেষ করে হিন্দু, বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মের অনুসারীদের মধ্যে এ রীতি রয়েছে। এসকল ধর্মে জীবের ক্ষতি করাকে পাপের সমান বলা হয়। পশ্চিম ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলগুলো গ্রিস ও এর আশেপাশের এলাকাগুলোতে প্রাণ আছে এমন যেকোনো জিনিস পরিহার করতে দেখা যেত। এই অঞ্চলে ভেজিটারিয়ানিজমের কথা সর্বপ্রথম উল্লেখ করেন গ্রিক দার্শনিক ও গণিতবিদ পিথাগোরাস খ্রিস্টপূর্ব পাঁচশ শতকে। প্রাণী ভক্ষণের বিরোধিতা করে তিনি বলেছিলেন, মানুষের উচিত আত্মা হিসেবে সবপ্রানীর প্রতি শ্রদ্ধা দেখানো।

buddha bowl dish with vegetables legumes top view 1 11zon

আধুনিক যুগে প্রথম ভেজিটারিয়ান সোসাইটি প্রতিষ্ঠিত হয়  ১৮৪৭ সালে ইংল্যান্ডে। এর তিন বছর পর ‘আমেরিকান ভেজিটারিয়ান সোসাইটি’ প্রতিষ্ঠা করেন বিখ্যাত গ্রাহাম ক্যাকারসের উদ্ভাবক সিলভেস্টার গ্রাহাম।  প্রেসবিটেরিয়ান মিনিস্টার হওয়ার সুবাদে তাঁর অনুসারীও ছিল অনেক। অনুসারীদের মাধ্যমে উত্তর আমেরিকাতে ভেজিটারিয়ানিজমের বেশ দ্রুত প্রসার ঘটে। 

এর প্রায় একশ বছর পর, ১৯৪৪ সালের নভেম্বর মাসে ইংল্যান্ডে ডোনাল্ড ওয়াটসন নামের এক কাঠমিস্ত্রি, ভিগান সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি প্রথম এই ভিগান শব্দটি ব্যবহার করেন। নন-ডেইরি ও নন- পোল্ট্রি ভেজিটারিয়ানদের বোঝাতে এই শব্দ ব্যবহার করা হয়। ওয়াটসন, প্রাণী অধিকার সংরক্ষণ নিয়ে কাজ করতেন। ভিগান সোসাইটি মনে করে মানুষের উচিত প্রাণীদের শোষণ না করে বেঁচে থাকার চেষ্টা করা। তাঁদের কাছে ভেজিটারিয়ানিজম যথেষ্ট নয়। তাঁরা দুধ, ডিম, মধু খাওয়া, পোশাক তৈরিতে উল, পালক আর গয়না হিসেবে মুক্তার ব্যবহারকেও একরকমের প্রাণী শোষণ মনে করেন।  আর মাছ মাংস ভক্ষণ আর এর চামড়া, হাড়, দাঁত, কাঁটা দিয়ে বিভিন্ন পণ্য বানানোকে তারা নিষ্ঠুরতা হিসেবে দেখেন। 

অর্থাৎ ভিগান ডায়েট অনেক আগে থেকেই ছিল।  তবে এখন এটির নতুন করে জনপ্রিয়তা পেয়েছে।  এর প্রধান কারণ হলো, কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে পরিবেশকে বিরুপ প্রভাবের হাত থেকে রক্ষা করা। জেনে রাখা ভালো যে, গবাদি পশু উৎপাদনে প্রচুর পরিমাণ কার্বন নিঃসরিত হয় যা বৈশ্বিক উষ্ণতা ও জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী। 

ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার, সান্তা বারবারা ক্লাইমেট ল্যাবের একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে-  একটি সিঙ্গেল সারভিং স্টেক উৎপাদন করতে যে পরিমাণ কার্বন নিঃসরিত হয়, তা তিন মাইল গাড়ি চালানোর সমপরিমাণ। অন্যদিকে শাকসবজি উৎপাদনে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ প্রায়ই শূন্যের কাছাকাছি। তাই ভিগানিজম একটি এথিকাল ও  সাসটেইনেবল বা টেকসই ডায়েট।

vegetarian buddha bowl raw vegetables baked potatoes bowl vegan meal healthy detox food concept top view flat lay 3 11zon

এখন প্রশ্ন উঠতে পারে যারা ভিগান তারা কিভাবে শরীরে আমিষের চাহিদা পূরণ করে? সোজা উত্তর, উদ্ভিজ আমিষ। যেমন, বিভিন্ন ধরনের ডাল, বিনস, বীজ, সয়া (টফু), বিভিন্ন রকমের বাদাম, শস্যদানা, কুইনয়া ইত্যাদি। পুষ্টিগুণে ভরপুর এসব খাবারে ক্যালরির পরিমাণও অনেক কম। ভিগান ডায়েটে শরীর সুস্থ থাকে, সহজে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে আবার পরিবেশেরও উপকার হয়। এ যেন এক ঢিলে দুই পাখি মারা! 

অনেকে ভাবেন ভিগান হলে ফাস্টফুড খাওয়া যায় না। কথাটা একদমই সঠিক নয়। এখন কিন্তু আমাদের প্রিয় ফাস্টফুডের ভিগান সংস্করণও পাওয়া যায়। যার স্বাদ নন- ভেজ বা আমিষ ফাস্টফুডের থেকে কোন অংশে কম নয়।

আরও যা পড়তে পারেন

কমেন্ট করুণ