Home বিশ্ব ইরান না ইসরায়েল কে বেশি শক্তিশালী?

ইরান না ইসরায়েল কে বেশি শক্তিশালী?

তাওহীদ মাহমুদ
১০২ views

বর্তমানে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সামরিক উত্তেজনা চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে, বিশেষ করে লেবাননে ইসরায়েলের আক্রমণ এবং ইরানের মিসাইল হামলার পর। এই পরিস্থিতিতে দুই দেশের সামরিক সক্ষমতার তুলনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

বর্তমানে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সামরিক উত্তেজনা চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। যখন হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরাল্লাহকে হত্যা এবং লেবাননে ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের পর ইরান মিসাইল হামলা চালিয়েছে। এই ঘটনার ফলে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে উত্তেজনা তীব্র আকার ধারণ করেছে। সারা বিশ্বের নজর এখন এই দ্বন্দ্বের দিকে, এবং প্রশ্ন উঠেছে: ইরানের হামলার প্রতিক্রিয়া হিসেবে ইসরায়েল কী ব্যবস্থা নেবে? সামরিক সক্ষমতার দিক থেকে উভয় দেশই শক্তিশালী। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন এই পরিস্থিতি সরাসরি সংঘাতে রূপ নিতে পারে, যা একটি বৃহত্তর আঞ্চলিক যুদ্ধের আশঙ্কা সৃষ্টি করতে পারে। 

সামরিক শক্তির র‍্যাংকিং:  
গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার-এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ইরান সামরিক সক্ষমতার দিক থেকে ইসরায়েলের তুলনায় তিন ধাপ এগিয়ে আছে। ইরান ১৪তম এবং ইসরায়েল ১৭তম স্থানে অবস্থান করছে। উভয় দেশই বিশ্বের শীর্ষ ২০টি সামরিক শক্তিধর দেশের মধ্যে রয়েছে। 

প্রতিরক্ষা বাজেট:
ইসরায়েলের বর্তমান প্রতিরক্ষা বাজেট ২৪৪০ কোটি ডলার, যেখানে ইরানের বাজেট মাত্র ৯৯৫ কোটি ডলার। এই র‍্যাংকিংয়ে, ১৪৫টি দেশের মধ্যে ইরান ৩৩তম এবং ইসরায়েল ১৯তম অবস্থানে রয়েছে।

নিয়মিত সৈন্য:
গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার-এর তথ্য অনুযায়ী, সৈন্য সংখ্যার দিক থেকে ইসরায়েলের তুলনায় ইরান এগিয়ে। ইরানের নিয়মিত সেনা সংখ্যা ১১ লাখ ৮০ হাজার, অপরদিকে ইসরায়েলের সৈন্য সংখ্যা ৬ লাখ ৭০ হাজার। ইরানের রিজার্ভ সৈন্য সংখ্যা ৩৫৫,০০০ এবং ইসরায়েলের রিজার্ভ সেনা ৪৬৫,০০০।

যুদ্ধ বিমান:
যুদ্ধ বিমান সমন্বয়ে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে প্রতিযোগিতা চলমান। ইরানের মোট সামরিক বিমান সংখ্যা ৫৫১টি, যেখানে ইসরায়েলের রয়েছে ৬১২টি। এর মধ্যে, ইরানের যুদ্ধ বিমান সংখ্যা ১৮৬টি, আর ইসরায়েলের ২৪১টি। ইরানের অ্যাটাকিং বিমান রয়েছে ২৩টি, যখন ইসরায়েলের সংখ্যা ৩৯টি। পরিবহন বিমানের ক্ষেত্রে, ইরানের সংখ্যা ৮৬টি এবং ইসরায়েলের ১২টি। প্রশিক্ষণ বিমান রয়েছে ইরানের ১০২টি, অপরদিকে ইসরায়েলের ১৫৫টি।

11 01

হেলিকপ্টার:
হেলিকপ্টার শক্তির দিক থেকেও ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে কিছু পার্থক্য রয়েছে। গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ইরানের হেলিকপ্টার সংখ্যা ১২৯টি, আর ইসরায়েলের ১৪৬টি। তবে, ইসরায়েল ৪৮টি অ্যাটাক হেলিকপ্টারের মাধ্যমে ইরানের চেয়ে শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে, যেখানে ইরানের অ্যাটাক হেলিকপ্টারের সংখ্যা ১৩টি।


ট্যাংক ও সাঁজোয়া যান:
গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার-এর তথ্য অনুযায়ী, ট্যাংক ও সাঁজোয়া যান ব্যবস্থায় ইসরায়েলের তুলনায় ইরান বেশ এগিয়ে। ইসরায়েলের হাতে রয়েছে ১৩৭০টি ট্যাংক, whereas ইরানের কাছে আছে ১৯৯৬টি ট্যাংক। সাঁজোয়া যানগুলোর সংখ্যা দেখলে ইরান আরও উর্ধ্বে—এর সংখ্যা ৬৫,৭৬৫টি, যেখানে ইসরায়েলের আছে ৪৩,৪০৩টি।


আর্টিলারি সক্ষমতায়ও ইরান পরিসংখ্যান অনুযায়ী এগিয়ে। তাদের রকেট আর্টিলারির এমএলআরএস সংখ্যা ৭৭৫টি এবং সেলফ প্রপেলড আর্টিলারির সংখ্যা ৫৮০টি। অপরদিকে, ইসরায়েলের সেলফ প্রপেলড আর্টিলারির সংখ্যা ৬৫০টি এবং এমএলআরএস বা রকেট আর্টিলারির সংখ্যা মাত্র ১৫০টি।

নৌ শক্তি:
নৌবাহিনীর শক্তির দিক থেকেও ইরান অগ্রসর। তাদের ফ্লিটে ১০১টি যুদ্ধজাহাজ রয়েছে, যার মধ্যে ৭টি ফ্রিগেট এবং ২১টি টহল জাহাজ অন্তর্ভুক্ত। অন্যদিকে, ইসরায়েলের যুদ্ধজাহাজ সংখ্যা ৬৭টি, এবং তাদের মধ্যে টহল জাহাজ আছে ৪৫টি, কিন্তু কোন ফ্রিগেট নেই। সাবমেরিনের দিক থেকেও ইরান শক্তিশালী, তাদের কাছে ১৯টি সাবমেরিন আছে, যেখানে ইসরায়েলের সংখ্যা মাত্র ৫টি।


পারমাণবিক শক্তি:
সুইডেন-ভিত্তিক গবেষণা সংস্থা স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এসআইপিআরআই) সম্প্রতি তথ্য প্রকাশ করেছে যে, বিশ্বের নয়টি দেশের কাছে প্রায় ১২,৫১২টি পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে। এই দেশগুলো হলো—যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, চীন, ভারত, পাকিস্তান, উত্তর কোরিয়া এবং ইসরায়েল।

এদিকে, ইরানের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে কখনোই পারমাণবিক অস্ত্র ছিল না। তবে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন কয়েকবার অভিযোগ করেছে যে, ইরান তাদের ইউরেনিয়ামের মজুদ দিয়ে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে, যদিও ইরান তাদের পারমাণবিক কর্মসূচিকে শান্তিপূর্ণ দাবি করে আসছে। গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার-এর রিপোর্টে পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য উল্লেখ করা হয়নি, কারণ তারা এ বিষয়টিকে তাদের রিপোর্টে বিবেচনায় নেয়নি।

সামরিক সক্ষমতার দিক থেকে, ইরান সৈন্য সংখ্যা এবং কিছু সামরিক যন্ত্রের ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকলেও, ইসরায়েল তাদের উচ্চ বাজেট ও আধুনিক প্রযুক্তির কারণে কিছু ক্ষেত্রে শক্তিশালী। এই সব তথ্য থেকে স্পষ্ট যে, সামরিক সক্ষমতায় ইরান ও ইসরায়েল উভয়েই শক্তিশালী, তবে তাদের কৌশল ও সম্পদের ব্যবহারে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য রয়েছে। উভয় দেশের মধ্যে যেকোনো সরাসরি সংঘাতের ফলাফল পুরো অঞ্চলের জন্য উদ্বেগজনক হতে পারে।

তথ্য সূত্র : বিবিসি ও রয়টার্স

আরও যা পড়তে পারেন

কমেন্ট করুণ