বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক ও উন্নত রাষ্ট্র বলা যায় যুক্তরাষ্ট্রকে। অর্থনীতি থেকে শুরু করে মানুষের জীবনযাপন– সবক্ষেত্রেই পৃথিবীর সর্বোচ্চ সেবা পায় দেশটির নাগরিকরা। অথচ সেই দেশই প্রতি বছর আত্মহত্যার রেকর্ড গড়ে চলেছে।
গত বছর যুক্তরাষ্টের ইতিহাসে সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষ আত্মহত্যা করে বলে প্রাথমিক তথ্যে জানিয়েছে দেশটির রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (সিডিসি)।
সংস্থাটির প্রাথমিক তথ্য বলছে, ২০২৩ সালে ৪৯ হাজার ৩ শর বেশি মানুষ আত্মহত্যা করেছে। কিছু মৃত্যুর তদন্ত রিপোর্ট এখনও জানা যায়নি। সেটি জানা গেলে এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে সিডিসি।
সিডিসি জানায়, ২০২২ সালে প্রায় ৪৯ হাজার ৫শ জন আত্মহত্যা করেছে। এই সংখ্যা গত বছরের অর্থাৎ ২০২৩ সালের আত্মহত্যার হার একেবারেই কাছাকাছি বলে সিডিসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
কোভিড-১৯ মহামারির শুরুর দুই বছর বাদে প্রায় ২০ বছর ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আত্মহত্যার হার বেড়েই চলছে। আত্মহত্যার বৃদ্ধির খবরকে দুঃসংবাদ হিসেবে দেখছেন আত্মহত্যা গবেষক ও কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জনস্বাস্থ্যের অধ্যাপক ক্যাথরিন কিয়েস।
অবশ্য আশার কথাও আছে। দুই বছর ধরে এ সংক্রান্ত একটি জাতীয় সেবা চালু করা হয়েছে। এর অধীনে যুক্তরাষ্ট্রের যে কেউ মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সহায়তার জন্য ৯৮৮ নম্বরে ডায়াল করতে পারে। পাশাপাশি অন্যান্য প্রচেষ্টাগুলো আত্মহত্যাজনিত মৃত্যু কমাতে সাহায্য করবে বলে জানান এই গবেষক।

সিডিসির তথ্য অনুসারে, ২০২২ সালে আত্মহত্যাজনিত মৃত্যুর প্রায় ৫৫ শতাংশের ক্ষেত্রে আগ্নেয়াস্ত্র জড়িত।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে জানান, ২০২২ সালে দেশটিতে মৃত্যুর ২২তম প্রধান কারণ ছিল আত্মহত্যা। বিষণ্নতার উচ্চ হার, সীমিত মানসিক স্বাস্থ্যসেবা, বন্দুকের সহজলভ্যতা আত্মহত্যা বৃদ্ধির জন্য দায়ী বলে জানান তারা।
সিডিসির সবশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১০-১৪ ও ২০-৩৪ বছর বয়সী মানুষের মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ ছিল আত্মহত্যা ছিল। আর ১৫-১৯ বছর বয়সীদের মৃত্যুর তৃতীয় প্রধান কারণ এটি।
তরুণী ও নারীদের চেয়ে তরুণ ও পুরুষদের মধ্যে আত্মহত্যার হার বেশি। সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যা করে ৭৫ বা তারচেয়ে বেশি বয়সী নাগরিকরা। এই বয়সীদের মধ্যে প্রতি লাখে ৪৪ জন আত্মহত্যা করে বলে জানায় সিডিসি।
নারীদের মধ্যে সর্বোচ্চ মাত্রা ছিল মধ্য বয়সীদের। এই বয়সীদের মৃত্যুর হার প্রতি লাখে ৯ জন। টিনএজার ও তরুণীদের মধ্যে নাটকীয়ভাবে এই হার বেড়েছে। গত দুই দশকে এই বয়সীদের আত্মহত্যার হার দ্বিগুণ হয়েছে।
২০২২ ও ২০২৩ সালে প্রতি লাখে মৃত্যুর হার ছিল ১৪.২ জন। এর আগে ২০১৮ সালে এটির মাত্রা সর্বোচ্চ ছিল।
তথ্যসূত্র: আরব নিউজ