ইরানের একটি অঞ্চলে হঠাৎ করে অনুভূত ভূমিকম্প ঘিরে শুরু হয়েছে নানান গুঞ্জন ও কৌতূহল। বিশেষ করে দেশটির পরমাণু কার্যক্রমের অতীত ইতিহাস এবং ইসরায়েলের সঙ্গে চলমান সংঘাতের প্রেক্ষাপটে অনেকে প্রশ্ন তুলছেন—এই কম্পন কি প্রকৃতপক্ষে ভূমিকম্প, নাকি কোনো গোপন পরমাণু পরীক্ষার অংশ?
শনিবার স্থানীয় সময় ভোররাতে ইরানের দক্ষিণাঞ্চলে ৫.১ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (USGS) জানায়, কম্পনের উৎপত্তিস্থল ছিল বুশেহর প্রদেশ, যা ইরানের একমাত্র পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ঠিক কাছেই অবস্থিত। এই অঞ্চল অতীতে বিভিন্ন ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা হিসেবে পরিচিত হলেও এবারের ভূমিকম্প ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়েছে এর সময় ও স্থান নিয়ে।
পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে ইরানের বিরুদ্ধে পশ্চিমা বিশ্ব বহুদিন ধরেই সন্দেহ প্রকাশ করে আসছে। চলমান ইরান-ইসরায়েল সংঘাত, গুপ্তচরবৃত্তি, এবং সামরিক উত্তেজনার মধ্যে এই কম্পনের সময় ও অবস্থান নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে—এটি প্রকৃত ভূকম্পন, না কি ভূগর্ভস্থ কোনো বিস্ফোরণের প্রভাব?
ইসরায়েলের কিছু মিডিয়া ও বিশ্লেষক দাবি করছেন, এটি “নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণের ফলেও হতে পারে”, যা ইরান হয়তো তার প্রতিরক্ষা সক্ষমতা পরীক্ষা করার জন্য চালিয়েছে। যদিও এই দাবির পক্ষে এখনো পর্যন্ত কোনো নিশ্চিত প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
ইরানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ইরনা (IRNA) জানিয়েছে, “ভূমিকম্পটি ছিল প্রাকৃতিক এবং এতে কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর এখনো পাওয়া যায়নি।” তবে সরকারি সূত্র থেকে পরমাণু পরীক্ষা সংক্রান্ত কোনো মন্তব্য বা ব্যাখ্যা এখনো দেওয়া হয়নি।
আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (IAEA) এখনো এই ঘটনার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি, তবে কয়েকটি পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থা পরিস্থিতি “নজরদারির আওতায় রাখছে” বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে।
পরমাণু কার্যক্রম সংক্রান্ত অতীত অভিজ্ঞতা ও অবাধ স্বচ্ছতার অভাব ইরানকে বারবার সন্দেহের কেন্দ্রে এনেছে। ফলে, ভূমিকম্পের মতো একটি প্রাকৃতিক ঘটনাও এখন রাজনৈতিক ও কৌশলগত ব্যাখ্যার অংশ হয়ে উঠেছে।
যেখানে ভূমিকম্প সাধারণত প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে বিবেচিত হয়, সেখানে ইরানের ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এটি হয়ে উঠেছে এক কৌশলগত প্রশ্ন। ইরান যদি সত্যিই কোনো গোপন অস্ত্র পরীক্ষা করে থাকে, তবে তা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের আওতায় পড়বে এবং সংঘাতের মাত্রা আরও বাড়তে পারে।
তবে এখন পর্যন্ত প্রমাণের অভাবে বিষয়টি জল্পনা বা সন্দেহ হিসেবেই রয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা তাই অপেক্ষায় রয়েছেন—প্রকৃত সত্য উদঘাটনের।
সূত্র: ইকোনোমিক টাইমস ও দ্য সান