গ্রীষ্মকালের অন্যতম রসালো ফল জাম। শুধু স্বাদে অনন্য নয়, পুষ্টিগুণেও ভরপুর এই গাঢ় বেগুনি ফল। ছোট-বড় অনেকেই এ ফল পছন্দ করেন। বাজারে এখন সহজেই পাওয়া যাচ্ছে জাম। পুষ্টিবিদ সালমা আক্তার বলেন, জাম প্রাকৃতিক আয়রনের অন্যতম ভালো উৎস। এটি রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। ফলে নিয়মিত জাম খাওয়া নারীদের, বিশেষ করে মাসিক পরবর্তী দুর্বলতায় ভোগা মেয়েদের জন্য বিশেষ উপকারী। এছাড়াও জামের রয়েছে কিছু অসাধারণ স্বাস্থ্য উপকারিতা। চলুন জেনে নেয়া যাক-
শরীর-মন রাখে সতেজ
জামে রয়েছে প্রাকৃতিক চিনি, গ্লুকোজ, ডেক্সট্রোজ আর ফ্রুকটোজ, যা শরীরকে দ্রুত শক্তি দেয়। গরমে ক্লান্ত হয়ে পড়লে এক গ্লাস ঠান্ডা জামের শরবত মুহূর্তেই চাঙ্গা করে তোলে। এছাড়া এটি মস্তিষ্ককে সচল রাখতে সাহায্য করে। বাড়ায় স্মৃতিশক্তি।

গরমে ক্লান্ত হয়ে পড়লে জামের এক গ্লাস ঠান্ডা শরবত মুহূর্তেই চাঙ্গা করে তোলে শরীর, ছবি : সেলার্ব ওয়েব পেজ
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক
জাম ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য আদর্শ ফল। এতে থাকা উপাদান রক্তে চিনির মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। প্রতিদিন সকালে এক চা চামচ জামের বীজের গুঁড়া খালি পেটে খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হয়।
হজমে সহায়ক ও মুখের যত্নে
জামপাতা আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় যেমন- ডায়রিয়া, আলসার ও দাঁতের সমস্যা নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়। জাম খেলে মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়, দাঁত ও মাড়ি মজবুত হয়। মাড়ির ক্ষয় রোধে সহায়তা করে। সুতরাং মধুমাসে জাম খেয়ে নিজের সুরক্ষা নিশ্চিত করুন।
ভিটামিন সি-এর চমৎকার উৎস
জামে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন সি। যা দেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ত্বক উজ্জ্বল করে ও ভিটামিন সি-এর অভাবজনিত রোগ প্রতিরোধ করে এমনটাই জানান পুষ্টিবিদ সালমা আক্তার।
রক্তস্বল্পতা রোধ ও হৃদযন্ত্র রাখে সুস্থ
জামে আছে প্রচুর আয়রন। যা শরীরের রক্তস্বল্পতা বা অ্যানিমিয়া দূর করতে সাহায্য করে। বিশেষ করে যাদের শরীরে হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি আছে, তাদের জন্য জাম অত্যন্ত উপকারী। জাম রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল কমিয়ে হার্ট ভালো রাখতে সাহায্য করে। পাশাপাশি এটি শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ বাড়ায় ও রক্ত চলাচল উন্নত করে।
উচ্চ রক্তচাপ কমায়, ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা
জামে রয়েছে এমন কিছু উপাদান যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। তাই উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের জন্য নিয়মিত জাম খাওয়া উপকারী হতে পারে। আবার জামে ক্যালোরি কম কিন্তু পুষ্টিগুণ বেশি থাকে। তাই যারা ওজন কমাতে চান বা ওজন ঠিক রাখতে চান, তাদের জন্য এটা এক আদর্শ ফল।
ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক
জামে এমন উপাদান আছে যা মুখের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া দূর করে। যা ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক। এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও যৌগিক উপাদান শরীরকে বিভিন্ন রোগের হাত থেকে রক্ষা করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
জামে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফাইটো কেমিক্যালস। যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ শক্তি বাড়ায়, ইনফেকশন ও ঠান্ডা-কাশি থেকে বাঁচায়। তাই শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এই ভরা মৌসুমে জাম খেয়ে যেকোনো ইনফেকশন ও ঠান্ডা কাশি থেকে রক্ষা পান।
ত্বক ও চুলের জন্য উপকারী
জাম ত্বক ও চুলকে ক্ষতিকর সূর্যরশ্মি এবং ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ থেকে রক্ষা করে। এতে থাকা অ্যালার্জিক এসিড ত্বককে শক্তিশালী করে তোলে। তাই সজীব, সতেজ ত্বক পেতে ও চুলকে ঝলমলে রাখতে জাম খেতে পারেন।
চোখের যত্নে
জামে থাকা উপাদান চোখের স্নায়ু সচল রাখতে সাহায্য করে। বিশেষ করে যারা বয়সজনিত চোখের সমস্যা, ইনফেকশন বা ছানি অপারেশনের পর চোখের যত্ন নিচ্ছেন, তাদের জন্য এটি উপকারী।
জাম শুধু একটা ফল নয়। এটি একটি প্রাকৃতিক পুষ্টিবিন। তাই গরমকালে বাজারে জাম দেখলেই ঝটপট কিনে নিন।