ইরানের পরমাণু কর্মসূচিকে নিরস্ত্র করতে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ‘বাংকার বাস্টার’ বোমা ব্যবহারের আহ্বান জানিয়েছে ইসরায়েল। দেশটির দাবি, ফোরদো ফুয়েল এনরিচমেন্ট প্ল্যান্টের মতো অতি সুরক্ষিত পারমাণবিক স্থাপনাকে ধ্বংস করতে একমাত্র কার্যকর অস্ত্র হতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের জিবিইউ-৫৭এ /বি ম্যাসিভ অর্ডন্যান্স পেনেট্রেটর (এমওপি)।
বোমাটি প্রায় ৩০ হাজার পাউন্ড ওজনের, যার মধ্যে ৬ হাজার পাউন্ডই উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিস্ফোরক। এটি এতটাই শক্তিশালী যে পাহাড় বা ভূগর্ভস্থ কংক্রিট ঘাঁটি ভেদ করে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম।
ইরানের ফোরদো পারমাণবিক স্থাপনাটি রাজধানী তেহরান থেকে প্রায় ৯৬ কিলোমিটার দক্ষিণে, একটি পাহাড়ের গা-ঘেঁষে নির্মিত। বিবিসির তথ্য অনুযায়ী, এটি মাটির প্রায় ৮০ থেকে ৯০ মিটার নিচে অবস্থিত, যা এটিকে সাধারণ বোমা বা ক্ষেপণাস্ত্রের নাগালের বাইরে রেখেছে।
২০০৯ সালে পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর তথ্য ফাঁসের পর ইরান এই গোপন স্থাপনাটির অস্তিত্ব স্বীকার করে। এখানে দুটি সুড়ঙ্গ রয়েছে যেখানে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন সেন্ট্রিফিউজ বসানো আছে, যা ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণে ব্যবহৃত হয়। পশ্চিমা দেশগুলোর আশঙ্কা, এসব কার্যক্রম ভবিষ্যতে পরমাণু অস্ত্র তৈরিতে ব্যবহৃত হতে পারে।

মিসৌরির হোয়াইটম্যান বিমান বাহিনী ঘাঁটিতে বি-টু স্পিরিট, ছবি: এবিসি নিউজ
যুক্তরাষ্ট্রের এয়ার ফোর্সের তথ্যমতে, এমওপি বোমাটি ডিজাইন করা হয়েছে শক্ত গুহা ও বাংকারের গভীরে থাকা অস্ত্রাগার ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে। তবে এই বোমার সাফল্য নির্ভর করে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে সঠিকভাবে আঘাত করার ওপর।
ব্রিটিশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউট (আরইউএসআই) সম্প্রতি সতর্ক করে জানিয়েছে, একক একটি বোমা দিয়ে ফোরদোর মতো স্থাপনায় পূর্ণাঙ্গ ধ্বংস সম্ভব নাও হতে পারে। তাদের মতে, সফল আঘাত নিশ্চিত করতে একই স্থানে একাধিক বোমা নিক্ষেপের প্রয়োজন হতে পারে।
এই বি-টু বোমারু বিমান ৬ হাজার নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত উড়ে যেতে পারে এবং সব রাডার ও ট্র্যাকার ফাঁকি দিয়ে শত্রুপক্ষের সুরক্ষিত ঘাঁটিতেও আঘাত হানতে পারে। ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র ইয়েমেনে ইরান-সমর্থিত হুথিদের বিরুদ্ধে এই বিমান ব্যবহার করে গোপন অস্ত্রাগারে হামলা চালিয়েছিল।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ঠিক কতসংখ্যক এমওপি বোমা আছে, তা স্পষ্ট নয়। জানা গেছে, ২০০৯ সালে বোয়িং ২০টি বোমা সরবরাহ করেছিল। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে প্রায় ৩০টির মতো এমওপি থাকতে পারে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি সত্যিই ইরানের গোপন পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে আঘাত হানার সিদ্ধান্ত নেয়, তবে এমওপি ব্যবহারের আশঙ্কা অত্যন্ত উচ্চ। তবে এর ফলে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনা ও সংঘাত বেড়ে যেতে পারে।
সূত্র : সিএনএন ও বিবিসি